অবশেষে দশম জাতীয়
সংসদ কার্যকর হলো নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে। যদিও এ নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে নানান কথা হচ্ছে। প্রধান বিরোধীদল বিবর্জিত নির্বাচনে যাঁরা নির্বাচিত
হলেন,
তাদের নিয়ে কথা হবে অনেক দিন পর্যন্ত; দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এ নির্বাচনকে
একদলীয় নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করবে ভবিষ্যত। বর্তমান
সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক স্বৈরশাসক
এরশাদকে অসুস্থ বানিয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে রেখে দলের আরেক নেতা, দলীয় প্রধানের স্ত্রী রওশন এরশাদকে দিয়ে দলটিকে
নির্বাচনে আসতে বাধ্য করাটাও ইতিহাসে লেখা থাকবে। প্রধান বিরোধী দলরে প্রধানকে কার্যত গৃহবন্দী
করে রাখা হয়েছিল নির্বাচনের দিন পর্যন্ত্ম; যদিও
নির্বাচনকালীন সরকার তা কখনই স্বীকার করেনি। এসব
কারণেই এ নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে এত কথা হচ্ছে। এরপরেও নির্বাচন শেষে নবম সংসদ বহাল রেখে দশম
সংসদের দায়িত্ব গ্রহণ আরেকটি ইতিহাস হয়ে থাকবে। সংবিধান অনুযায়ী নবম সংসদ ভেঙ্গে দেয়া বা নবম
সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবার পরেই দশম সংসদের দায়িত্ব নেয়ার কথা, অর্থাৎ নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নেয়ার কথা। আমরা বুঝি না, দশম সংসদের সদস্যদের শপথ দেয়ার আগে নবম সংসদ ভেঙ্গে
দিলে কি ক্ষতি হতো! অথবা আরো ১৫ দিন অপেক্ষা করে দশম সংসদ এর নবনির্বাচতি সদস্যদের
শপথ দিলে কি ক্ষতি হতো! এমনটি করলেই বরং সংবিধান রক্ষা করা হতো। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার বারবার
দেশের সংবিধান সমুন্নত রাখার কথা বলেই একতরফা এ নির্বাচন করলেও দশম সংসদের সদস্যদের
শপথ দেবার ক্ষেত্রে জেনে-শুনে সংবিধানের নিয়মের ব্যত্যয় ঘটালো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলে এসেছেন, বিরোধী দল বিএনপি জামায়াত ত্যাগ করেত পারছে না
বলেই নির্বাচনে আসছে না। হাইকোর্ট যেখানে জামাতের
নিবন্ধন অবৈধ বলে ঘোষণা করছে, সেখানে
সরকার কেন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করছে না? সংবিধানে
তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের জন্য হাইকোর্টের র্পূণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই দ্রম্নততার
সাথে যে সরকার তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল' করে সংবিধান সংশোধন করতে পারে, তারা কেন হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক জামায়াত
নিষিদ্ধি করতে পারবে না? এখানেই কি তাদের দ্বিচারিতা!
তারা কি জামায়াত নিষিদ্ধ করার দায়বার নিতে চায় না! মনে রাখতে হবে ১৯৭২ সালের সংবিধানে
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এদশে নিষিদ্ধ ছিল; এখন
তেমনি একটি দল, যাদের নিবন্ধন বৈধ নয়
বলে হাইকোর্টও রায় দিয়েছে- তাদের নিষিদ্ধি করতে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দলটির এত
গড়িমসি কেন?
জানা গেল, আগামী রোববার নতুন মন্ত্রীসভা শপথ নেবে, অর্থাৎ গঠিত হতে যাচ্ছে দশম সংসদের অধীন সরকার। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হবেন তা তো নিশ্চিত; সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হচ্ছেন জাতীয় পার্টির
রওশন এরশাদ। এও শোনা যাচ্ছে জাতীয়
পার্টি সংসদের প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করলেও মন্ত্রীসভায় তারা যোগ দেবেন। যদি তাই হয়, তাহলে কার্যত দেশে সংসদে কোন বিরোধী দল থাকবে
না। সে ক্ষেত্রে বিএনপিসহ যে সব দল সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি, তারা জোর গলায় বলতে পারবে, এ সরকার মূলত বাকশাল কায়দায় একদলীয় বা একজোটের
সরকার। এই ইস্যুতে আগামীতে
সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে।
নবম সংসদ রেখে
দশম সংসদের নির্বাচিত সদস্যদের শপথ পড়ানোর মধ্যে দিয়ে এখন কি দেশে কার্যত দু'টি সংসদ চালু রইলো না? নবম সংসদের মেয়াদ ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত্ম এবং যেহেতু
নবম সংসদ ভেঙ্গে দেয়া হয়নি, তাই
ঐ সংসদের একজন সদস্য যদি নেজেকে সংসদ সদস্য দাবী করেন, সে ক্ষেত্রে সরকার বা স্পিকার কি উত্তর দেবেন? (চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন