বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৩

চিফ স্কাউট হিসেবে রাষ্ট্রপতি এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ

চিফ স্কাউট হিসেবে রাষ্ট্রপতি এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ

তৃতীয় পর্ব

সরকারী কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক স্কাউটং কেন নয়


নুরুল্লাহ মাসুম


এবারে আসা যাক বাংলাদেশে স্কাউটিং আন্দোলনের গোড়ার কথায়। এ কথা সকলের জানা আছে, স্কাউটিং শুরু হয়েছিল ১৯০৭ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ইংল্যান্ডের পুল হারবারে অবিস্থত ব্রাউনসী দ্বীপে মাত্র ২০ জন বালককে নিয়ে। একজন বৃটিশ সেনাধ্যক্ষ লেফটেনেন্ট জেনারেল রবার্ট স্টিফেনশন স্মিথ ব্যাডেন পাওয়েল (বিপি নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত) স্কাউটিং কার্যক্রম শুরু করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায় নিজের যুদ্ধের অভিজ্ঞতার আলোকে। স্কাউট কার্যক্রমের ব্যতিক্রমতার কারণে সে সময়ে ইংল্যান্ড ছাড়াও পুরো বৃটিশ কলোনীতে এটি খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। ফলে ১৯২২ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে বিশ্বময় স্কাউট আন্দোলনকে একটি সাংগঠনিক কাঠামো দেয়া ও তদারকি করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক স্কাউট কনফারেন্স গঠিত হয়ে এর একটি নির্বাহী কমিটি ও সচিবালয় স্থাপন করা হয়। সেই শুরু- বর্তমানে এটির নাম  ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব দি স্কাউট মুভমেন্ট। এর সদর দফতর জেনেভায় এবং সচিবালয়টি বিশ্ব স্কাউট সংস্থা নামে পরিচিত।
বৃটিশ আমলেই বর্তমান বাংলাদেশ ভখন্ডে স্কাউটিং শুরু হলেও প্রথম দিকে তা কেবল এ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। ভারত বিভাগের পর পাকিস্তানের প্রদশে হিসেবে পূর্ব বাংলায় (পূর্ব পাকিস্তান) স্কাউটিং কার্যক্রম চলে। ১৯৫৯ সালে প্রথমবারের মত পাকিস্তানে স্কাউট কার্যক্রমের আইনী বৈধতা আসে একটি অর্ডিন্যান্স বলে যেটি পাকিস্তান বয় স্কাউটস অ্যাসোসিয়েশন অর্ডিন্যান্স-১৯৫৯ শীরোনামে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক জারী করা হয় ২৯ জুলাই ১৯৫৯ খৃষ্টাব্দে (Ordinance No. XLIII of 1959)।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির ১১১ নম্বর আদেশ বলে পাকিস্তান বয় স্কাউট সমিতিকে বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি হিসেব নামকরণ করে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয় এবং পূর্বোক্ত পাকিস্তান বয় স্কাউটস অ্যাসোসিয়েশন অর্ডিন্যান্স-১৯৫৯ অধাদেশটি রহিত করা হয়। ১৯৭৮ সালে Bangladesh Boy Scouts Samity (Amendment) Ordinance, 1978 (Ordinance No. LIV of 1978) বলে বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি-র নাম পরিবর্তন করে করা হয় বাংলাদেশ স্কাউট। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে সর্বশেষ সংশোধনীতেও রয়েছে এই কথাগুলো:
4. The constitution, powers and functions of the Bangladesh Scouts be such as may be prescribed by rules to be made by the Bangladesh Scouts with the previous approval of the Government, and until such rules are made, the rules of the Pakistan Boy Scouts Association and in force immediately before the commencement of this Order shall continue to be in force and be deemed to have been made under this Order.
বাংলাদেশ স্কাউটস এখনও তেমন কোন আইন তৈরী করেনি যা মহান জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়েছে বা অনুমোদিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান বয় স্কাউটস অ্যাসোসিয়েশন অর্ডিন্যান্স মতে চলতে হলে সংগঠনটিকে চলতে হবে THE SOCIETIES REGISTRATION ACT, 1860 অনুসারে। আর যদি কোন আইন বা নীতিমালা করতে হয়, তবে তা হতে হবে জাতীয় সংসদ কর্র্র্তৃক পাশকৃত। সে মতে চলতে হলে সংগঠনটির প্রতিটি স্তরে থাকতে হবে নির্বাচিত কমিটি। এবার দেকা যাক বাংলাদেশ স্কাউটস এর সাংগঠনিক কাঠামো কেমন। প্রথমেই বলতে হয় জাতীয় পর্যায়ের অর্থাৎ কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কাঠামো প্রসঙ্গে। আগেই বলা হয়েছে বাংলাদেশ স্কাউটস এর গঠন ও নিয়ম মোতাবেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হচ্ছেন চিফ স্কাউট। চিফ স্কাউটসহ বিশাল সংখ্যক মানুষ নিয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশ স্কাউটস এর জাতীয় কাউন্সিল যা কি না সংগঠনটির সর্বোচ্চ নতিনির্ধারণী সংস্থা। গঠন ও নিয়ম এর ১৫ ধারা অনুসারে এই কাইন্সিলের সদস্য হিসেবে রয়েছে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সকল সদস্য এবং
১৫ (ছ). বাংলাদেশের সকল স্বায়ত্বশাষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য থেকে চলমান বছরে দেশের প্রশাসনিক বিভাগসমুহ থেকে পর্যায়ক্রমে একজন করে উপাচার্য জাতীয় কাউন্সিলের সদস্য হবেন। বাংলাদেশ স্কাউটস এর সভাপতি ও প্রধান জাতীয় কমিশনার কর্তৃক যৌথ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এ উপাচার্যগণ জাতীয় কাউন্সিলের সাধারণ সভায় অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত হবেন।
মন্তব্য: বাংলাদেশ স্কাউটস একটি এনজিও হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিজ সংগঠনে একজন কাউন্সিলর হিসেবে মনোনয়ন দেবার অধিকার কি ভাবে লাভ করলো এবং মাননীয় উপাচার্যগণ কি করে এতে অংশগ্রহণ করেন? একজন উপচার্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন মহামান্য রাষ্ট্রপতি (বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য) কর্তৃক; তাঁকে একটি এনজিওতে সদস্য হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব বা মনোনয়ন দেবার অধিকার কি ঐ এনজিওর আছে?
গঠন ও নিয়ম এর একই ধারা মতে জাতীয় কাউন্সিলের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ হলেন:
জ. মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর
ঝ. মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর
ঞ. মহাপরিচালক, সমাজসেবা অধিদফতর
ট. সকল আঞ্চলিক স্কাউটস এর সভাপতি
ঠ. চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষা বোর্ড
ড. চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড
ঢ. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (উপ সচিব পদমর্যাদার নিচে নয়)
ণ. যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (উপ সচিব পদমর্যাদার নিচে নয়)
ত. জাতীয় উপ কমিশনারগণ
থ. আঞ্চলিক কমিশনার, বাংলাদেশ স্কাউটস, সকল অঞ্চল
দ. জাতীয় নির্বাহী কমিটির সকল সদস্য
ধ. জাতীয় কমিশনার, বাংলাদেশ গার্ল গাইডস এসোসিয়েশন
ন. মহাসচিব, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি
প. আজীবন পৃষ্ঠপোষকদের মধ্য থেকে সভাপতি ও প্রধান জথিীয় কমিশনার কর্তৃক যৌথভাবে মনোনীত একজন আজীবন পৃষ্ঠপোষক সদস্য
ফ.  আজীবন সদস্যদের মধ্য থেকে সভাপতি কর্তৃক যৌথভাবে মনোনীত পর্যায়ক্রমে একজন সদস্য
ব. সাধারণ সদস্যদের মধ্য থেকে সভাপতি কর্তৃক মনোনীত পর্যায়ক্রমে একজন সদস্য
ভ. প্রধান জাতীয় কমিশনার কর্তৃক মনোনীত প্রত্যেক অঞ্চল থেকে একজন লিডার ট্রেনার
ম. আঞ্চলিক কমিটি কর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধিগণ.........
য. নির্বাহী পরিচালক।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, উপধারা থেকে পযর্ংন্ত সকলেই সরকারী কর্মকর্তা। একজন সরকারী কর্মকর্তা  স্বীয় দায়িত্বের বাইরে অন্য কোন সংস্থায় কর্মর্তা হিসেবে কাজ করতে পারেন কি  না সে বিষয়ে আমাদের চেয়ে তারাই ভাল বলতে পারবেন। উপধারা - তে বর্ণিত জাতীয় কমিশনারগণ মনোনীত হন প্রধান জাতীয় কমিশনার কর্তৃক এককভাবে স্বীয় পছন্দে, যাদের মধ্যে বেশীরভাগই হচ্ছেন সরকারী কর্মকর্তা। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে -তে বর্ণিত আঞ্চলিক কমিশনারগণ সরকারী কর্মকর্তা। বিষয়টি বিতর্কিত। তবে আলোচ্য অংশে আমার বক্তব্য অন্যত্র। বাংলাদেশ স্কাউটস এর সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী সংস্থা জাতীয় কাউন্সিল এ নির্বাচিত সদস্যের চেয়ে মনোনীতদের সংখ্যা এতটাই বেশী যে, নির্বাচিত সদসগণ সেখানে আদীবাসী বা উপজাতি বা সংখ্যালঘু হিসেবে গণ্য হয়ে থাকেন।
এবারে আসা যাক উপধারা মোতাবেক জাতীয় নির্বাহী কমিটির সকল সদস্য প্রসঙ্গে। বাংলাদেশ স্কাউটস এর নির্বাহী সংস্থা হিসেবে জাতীয় নির্বাহী কমিটি কি ভাবে গঠিত হয় দেখুন:
ধারা ২৩: বাংলাদেশ স্কাউটসেন একটি জাতীয় নির্বাহী কমিটি থাকবে। এ কমিটি জাতীয় কাউন্সিলের পক্ষে প্রশাসনিক ব্যাপারে সর্বোচ্চ নির্বাহী পরিষদ হিসেবে কাজ করবে। নিম্নলিখিত সদস্যদের নিয়ে জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠিত হবে-
ক. সভাপতি {নির্বাচিত}
খ. সহ-সভাপতিগণ {দুই শিক্ষা সচিব পদাধিকারবলে এবং একজন নির্বাচিত}
গ. প্রধান জাতীয় কমিশনার {জাতীয় কাউন্সিলে সুপারিশকৃত এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত}
ঘ. কোষাধ্যক্ষ {নির্বাচিত}
ঙ. জাতীয় কমিশনারগণ {এদরে সংখ্যা ১৫, সকলেই প্রধান জাতীয় কমিশনার এর পছন্দের ব্যক্তি এবং তার সুপারিশে রাষ্ট্রপতি কর্তক নিয়োগকৃত}
চ. উপাচার্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় {পদাধিকারবলে}
ছ. মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর {পদাধিকারবলে}
জ. মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর {পদাধিকারবলে}
ঝ. চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষা অধিদফতর {পদাধিকারবলে}
ঞ. সকল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান {পদাধিকারবলে}
ট. চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড {পদাধিকারবলে}
ঠ. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি (উপ সচিব পদমর্যাদার নিচে নয়)-{পদাধিকারবলে}
ড. জাতীয় নির্বাহী কমিটি কর্তৃক সহজোযাজিত তিন জন সদস্য।
ঢ. জাতীয় নির্বাহী কমিটির জন্য ৬ অঞ্চলের ৬ জন কাউন্সিল প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। পরবর্তী মেয়াদে বাকী ৬ অঞ্চলের ৬ জন কাউন্সিলর প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। ফলে পূর্ববর্তী মেয়াদে নির্বাচিত ৬ জন কাউন্সিলরের পদ শুন্য হবে।
ণ. সকল আঞ্চলিক স্কাউটস থেকে দুজন করে সদস্য (আঞ্চলিক কাউন্সিল কর্তৃক মনোনীত একজন এবং আঞ্চলিক কমিশনার)
ত. নির্বাহী পরিচালক।
লাল বর্ণে {....} এর মধ্যের কথাগুলো বক্ষমান নিবন্ধকারের মন্তব্য।
এবারে দেখুন, কতজন নির্বাচিত সদস্য নিয়ে জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠিত? দেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর কেবিনেটে ১০ শতাশেংর বেশী অনির্বাচিত মন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন না; এখানে প্রধান জাতীয় কমিশনার নিয়োগকৃত ১৫ জন জাতীয় কমিশনারের সকলেই মনোনীত, কেউই নির্বাচিত নয়।
প্রসঙ্গক্রমে বলে নেয়া ভাল, যারা নিয়মিত স্কাউটিং করেন, তারা দীর্ঘ দিন স্কাউটিং করে (কখনো কখনো ১৫ থেকে ২৫ বছর অতিক্রম করে) লিডার ট্রেনার হয়ে থাকেন। তাদের সংখ্যা দেশে খুব বেশী নয়। সর্বশেষ তথ্য না থাকায় লিডার ট্রেনারদের সংখ্যা উল্লেখ করতে পারলাম না বলে দুঃখিত। এই খেটে খাওয়া মানুষগুলো লিডার ট্রেনার হিসেবে জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে স্থান করে নিতে পারেন না; এমনকি জাতীয় কাউন্সিলে যে কয়জন লিডার ট্রেনার থাকেন তারাও প্রধান জাতীয় কমিশনার এর পছন্দের ব্যক্থি। তাদের প্রয়োজন কেবল ট্রেনিং এর সময়ে। কেউ কেউ ঠাট্টা করে বলে থাকেন লিডার ট্রেনারগণ হচ্ছেন মৌলবী-দের মতন, কেবল জানাজা পড়তে তাদের ডাক পড়ে।
এনিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে পাঠক বিরক্ত হতে পারেন। মোদ্দা কথা হচ্ছে, একজন ব্যক্তি প্রধান জাতীয় কমিশনার হিসেবে কোন গণতান্ত্রিক নিয়মে এতগুলো পদে মনোনয়ন দেবার অধিকার লাভ করেন? আর এই যখন অবস্থা, তখন সেই সংস্থার সেই কমিটি বা কাউন্সিল কতটা গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে?
১৫ জন জাতীয় কমিশনার ছাড়াও ৩০ জন জাতীয় উপ কমিশনার নিয়োগ দিয়ে থাকেন প্রধান জাতীয় কমিশনার। এই ১৫ জন জাতীয় কমিশনার এবং ৩০ জন জাতীয় উপ কমিশনার জাতীয় কাউন্সিলের সদস্য এবং তাদের ভোটাধিকার রয়েছে। বলা যায় কাউন্সিল বা কমিটিতে প্রধান জাতীয় কমিশনার এর একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখা বা  স্বৈরশাসন বজায় রাখার জন্যই গঠন ও নিয়ম টা এমনি করে তৈরী করা হয়েছে।
এবার দেখা যাক অঞ্চলগুলো কেমনে চলছে। নৌ অঞ্চল ও বিমান অঞ্চল যথাক্রমে নিয়ন্ত্রণ করে নৌ-বাহিনী ও বিমান বাহিনী। রেলওয়ে অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে রেলওয়ে বিভাগ। রোভার অঞ্চল দেশব্যাপী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভারিং নিয়ন্ত্রণ করে। এই অঞ্চলের সভাপতি হচ্ছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এর আগে অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রোভার অঞ্চলের সভাপতি ছিলেন। অন্য সকল অঞ্চলের মতই রোভার অঞ্চলের প্রধান নির্বাহী হচ্ছেন আঞ্চলিক কমিশনার। রোভার অঞ্চলের আঞ্চলিক কাউন্সিলে ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্বাচিত বা সর্বসম্মতিক্রমে মনোনীত কোন ব্যাক্তিকে প্রধান জাতীয় কমিশনারের সুপারিশক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। বাস্তবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এক প্রকার দখল করে রেখেছেন রোভার অঞ্চলের আঞ্চলিক কমিশনারের পদটি দীর্ঘদিন ধরে। মজার বিষয় হচ্ছে রোভার অঞ্চলের আঞ্চলিক কমিশনার (মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর) জাতীয় কাউন্সিল ও জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে দুটি পদ একআি দখল করে রেখেছেন। দেখুন জাতীয় কাউন্সিল সম্পর্কিত ধারা ১৫ (জ) ও ১৫ (থ)এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটি সংক্রান্ত ধারা ২৩ (ছ) ও ২৩ (ণ)।
আঞ্চলিক স্কাউট কাউন্সিল ও আঞ্চলিক নির্বাহী কমিটির অবস্থায় একই। ব্যতিক্রম নয় জেলা ও উপজেরা পর্যায়ের কাউন্সিল ও নির্বাহী কমিটির গঠন প্রক্রিয়াও। সকল স্তরে কাউন্সিল ও নির্বাহী কমিটির গঠন প্রক্রিয়া এমনভাবে করা হয়েছে যাতে কেন্দ্রীয়ভাবে সবকিছুই প্রধান জাতীয় কমিশনার এর নিয়ন্ত্রনে থাকে। ফলত বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব নিয়ে যে সংগঠনটির গণতান্ত্রিকভাবে কাজ করার কথা, সেটি হয়ে উঠেছে এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে একটি স্বৈরাচারী সংগঠন। এখানে কেউ যদি প্রধান জাতীয় কমিশনার সুনজরে থাকেন তিনি হবেন রাজ বংশের মানুষ। এর ব্যত্যয় ঘটলে তিনি হবে বিদ্রোহী। ফলত তাকে বিদায় নিতে হবে স্কাউটিং থেকে; যদিও বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত স্কাউটিং হচ্ছে সকলের জন্য উন্মুক্ত
মূলত গঠন ও নিয়ম এর মধ্য দিয়ে সরকারী কর্মকর্তাদের পদাধিকারবলে স্কাউটিং এর সর্বস্তরের কমিটিতে দখলদারিত্ব কায়েম করার মধ্য দিয়ে স্কাউটং এর মূলনীতি থেকে বহুদূরে চলে গেছে বাংলাদেশ স্কাউটস। অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা সংগঠন নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনার সুযোগ এলে বিষয়টি আরো পরিস্কার হবে।
একটি এনজিও হিসেবে বাংলাদেশ স্কাউটস এর প্রতিটি সাংগঠনিক স্তরে নির্বাচিত কমিটি থাকা দরকার এবং অবশ্যই যারা স্কাউটিং এর সাথে যুক্ত তাদের নিয়ে। বিশেষত যারা দীর্ঘ দিন ধরে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্কাউটিং এর সাথে যুক্ত, তাদের প্রতিটি স্তরের কমিটিতে থাকার নিয়ম করলে স্কাউটিং হবে সত্যিকারের স্কাউটিং- যা এখন পরিণত হয়েছে সরকারী কর্মকর্তাদের বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে। সরকারী কর্মকর্তাগণ স্কাউটিং করবেন না, তা বলছি না; অনেক সরকারী কর্মকর্তা আছেন যারা ছাত্র জীবন থেকে স্কাউটিং করে আসছেন। আমার বক্তব্য হচ্ছে সরকারী কর্মকর্তাদের পদাধিকারবলে স্কউটিং এর গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় বসিয়ে স্কাউটিং এর মূলধারা থেকে সড়ে যাওয়ার বিষয়ে। যেমন একজন জেলা প্রশাসক চান বা না চান, তাকে জেলা স্কাউটস এর সভাপতি হতেই হবে। কোন কোন জেলায় জেলা প্রশাসককে একাধিক জেলা স্কাউটস এর সভাপতি হতে হয়; কেউ কেউ এতে বিরক্তও হন। যেমন, ঢাকার জেলা প্রশাসক তিনটি জেলা স্কাউটস এর সভাপতি- ঢাকা মেট্রোপলিটন স্কাউটস, ঢাকা জেলা স্কাউটস এবং ঢাকা জেলা রোভার
এছাড়া গঠন ও নিয়মে ২৪৩(খ) ধারায় বর্ণিত অস্কাউটসুলভ আচরণ ব্যবহার করে অপছন্দের মানুষদের স্কাউটিং থেকে দূরে রাখার প্রবণতা এবং ২৪৯ ধারয় বর্ণিত বাংলাদেশ স্কাউট ফাউন্ডেশন নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনার ইচ্ছে রইল। এখানে মজার বিষয় হলো বর্ণিত গঠন ও নিয়ম-এ অস্কাউটসুলভ আচরণ এর সুস্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা না থাকায় এটির ব্যাপক অপব্যবহার হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে; বলা যায় এটি হচ্ছে একটি নিপীড়নমূলক স্কাউট আইন

এবিষেয়