শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৩

নতুন করে ভাবতে হবে - নবম পর্ব

নবম পর্ব

দেশের আম-জনতা ক্রমান্বয়ে "কাঁঠাল-জনতা" হয়ে উঠতে পারেকথাটা রসবোধ থেকেই বলছি, আম মিষ্টি বলে সকলেই সেটি খেতে পছন্দ করেকাঁঠাল মিষ্টি হলেও এটির রয়েছে আঠালো স্বভাবএকবার ঠোঁটে (বিশেষত গোঁফে) লাগলে ছাড়ানো বেশ কষ্টসাধ্যআম-জনতাকে যতটা সহজে ধুয়ে-মুছে ফেলা যায়, কাঁঠাল-জনতাকে ততটা সহযে ধুয়ে-মুছে ফেলা যাবে কিনা তা রাজনৈতিক দলগুলোর ভাববার সময় এসেছে বলেই মনে হয়
সংগত কারণেই দেশের মানুষ দেশে দ্বিদলীয় শাসন ব্যবস্থার বিকল্প ভাবতে চাইছে- যদিও অদূর ভবিষ্যতে তেমনটি হওয়ার কোন সম্ভাবনা বা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে নাভুলে গেলে চলবে না, পাকিস্তান আন্দোলনের মূল শক্তি মুসলিম লীগের আজ আর কোন অস্ত্মিত্ব নেইবাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলনের মূল শক্তি আওয়ামী লীগকে বিষয়টি মনে রেখেই এগুতে হবেআওয়ামী লীগে আজ মস্কোপন্থী সাবেক কম্যুনিস্টদের সরব উপস্থিতি পক্ষান্তরে বিএনপিতে চীনপন্থী কম্যুনিস্টদের সংখ্যাধিক্য রয়েছেব্যতিক্রম দীলিপ বড়ুয়া; যিনি চীনপন্থী হয়েও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে শক্ত জায়গা করে নিয়েছেন শুরু থেকেইঅনেকে বলে থাকেন, আওয়ামী লীগে প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের তেমন কদর নেই এখন আরদাপটের সাথে এই দলে বিরাজ করছে ব্যবসায়ীরা, যাদের রাজনৈতিক আদর্শ বলে কিছু নেই
ইচ্ছে ছিল দেশের রাজনীতিকদের নিয়ে পর্যায়ক্রমিক আলোচনা করবোপ্রধান বিরোধী দলের সাথে কোনও ধরণের সমঝোতা ছাড়াই নির্বাচন কমিশন সরকারের নির্দেশিত পথ ধরে নির্বচনী তফসিল ঘোষণা করে দিল; যদিও সরকার সমর্থকরাই এত অল্প সময় দিয়ে তফসিল ঘোষণায় সন্তুষ্ট নয়তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে বিরোধী জোটের টানা অবরোধের নামে চল দেশব্যপী ধংসযজ্ঞ এবং মানুষ হত্যাঠিক তে এমনি সময়ে নজরে এলা- লাটভিয়ায় একটি সুপারমার্কেট ধস বিপর্যয়কে কেন্দ্র করে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ভালদিস ডোওমব্রোওসকিস পদত্যাগ করেছেনফলে সে দেশের ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ঘটলোগত বৃহস্পতিবার সুপারমার্কেট ধসের ঘটনায় অন্তত ৫৪ জন নিহত হয়েছিললাটভিয়ায়র প্রেসিডেন্ট অপ্রন্দ্রস ব্যারজিনস এর সঙ্গে বৈঠককালে পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রীপ্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, ওই ট্র্যাজেডির রাজনৈতিক দায় কাঁধে নিয়ে আমি পদত্যাগ করছিউদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম একটি সরকার এ মুহূর্তে লাটভিয়ার প্রয়োজন'
লাটভিয়া সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভূক্ত একটি দেশদীর্ঘদিন তারা সমাজতান্ত্রিক একনায়কত্ব দেখেছে- সহ্য করেছে স্ট্যালিনের কঠোর শাসনগর্বচেভের গ্লস্তনস্ত ও প্রেস্ত্রেইকার সুবাদে স্বাধীনতা লাভ করে নবীন গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেসেখানকার প্রধানমন্ত্রী একটি ভবন ধসের কারণে পদত্যাগ করেন- আমাদের রাজনীতিকদের কি শেখার মত কিছু আছে এটা দেখে?
(চলবে)

বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩

নতুন করে ভাবতে হবে - অষ্টম পর্ব

অষ্টম পর্ব

পরর্তীতে ক্ষমতায় এসে সেই হরতালের কারণে দুর্বল অর্থনীতির ভার বইতে হয়েছে আওয়ামী লীগকেই আওয়ামী লীগ সে কথা বহুদিন বলেছে- ২৪ বছরের জঞ্জাল সরতে হয়েছে তাদের এরশাদ আমলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের সহযোগীদের নিয়ে বহু আন্দোলন-হরতাল করেছে স্মরণ করতে হয়, এরশাদের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের শুরম্নটা হয়েছিল "মজিদ খানের শিক্ষা নীতি" নিয়ে বিরোধিতার মধ্য দিয়ে সাদা চোখে দেখলে দেখতে হয়, দুই বছরের ডিগ্রী কোর্স তিন বছরের হবে, প্রাথমিক শিক্ষ হবে আট বছর মেয়াদী, শিক্ষার ব্যয় বাড়বে- ইত্যাকার বিষয় ছিল মজিদ খানের শিক্ষা নীতির মধ্যে উলেস্নখ্য, মজিদ খান ছিলেন এরশাদ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রী সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ঝরেছে বহু প্রাণ দেখেছি লাগাতর হরতাল; এরশাদও চেষ্টা করেছেন সেই আন্দোলন দমনে অবশেষে নব্বইয়ে আন্দোলনের চূড়ান্ত্ম পর্যায়ে এরশাদের বিদায় এবং বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং বিএনপির ক্ষমতায় আরোহন কি হলো শেষ পর্যন্ত্ম! এখনতো আমাদের সন্ত্মানরা তিন বছরের ডিগ্রী কোর্সই পড়ছে, অনার্স চার বছরের এবং শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ করেছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ- দুই দলের সরকারই তাহলে মজিদ খানের কি দোষ ছিল?  কেনই বা জাফর-জয়নাল-দীপালী সাহা, জাহেদ, নূর হোসেন ও ডা. মিলনকে জীবন দিতে হলো? এসকল প্রশের উত্তর কে দেবে? প্রসঙ্গত আরেকটি কথা পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ছিলেন এরশাদ সরকারেরও অর্থমন্ত্রী তখন অবশ্য তাকে সবাই জানত এ. এম. এ. মুহিত নামে তিনি সে সময়ে কানাডা গিয়ে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন তাহলে আমাদের মত সাধারণ পাবলিক (আম-জনতা)-কে বলতেই হয়, মুহিত সাহেব এরশাদ সরকারে থেকে শিক্ষার যে বাণিজ্যিকীকরণ করতে পারেননি, আওয়ামী লীগ সরকারে থেকে একজন সাবেক তুখোর কম্যুনিস্টকে শিক্ষা মন্ত্রী হিসেবে সামনে রেখে সেই আরাধ্য সাধনে সমর্থ হয়েছেন! পাঠকের এ কথাও নিশ্চয়ই স্মরণ আছে বর্তমানশিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন বাংলাদেশের কম্যুনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-র সাধারণ সম্পাদক
(চলবে)



মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৩

নতুন করে ভাবতে হবে - সপ্তম পর্ব

সপ্তম পর্ব


অথবা নির্বাচন করার মত অবস্থায় নেই এমন বিজ্ঞ ব্যক্তিকেও মনোনীত করে সংসদে নেয়া যেত এভাবে সংসদে আসা সদস্যগণ নারী বা পুরম্নষ যে কেউ হতে পারেন; অর্থাৎ দল যাকে ভাল মনে করবে তাকেই সংসদে আনবে কেবল নারী সদস্য মনোনয়ন দেয়া বধ্যবাধকতার জালে আটকে থাকতে হবে না জলন্ত্ম উদাহরণ দেই, এমন পদ্ধতি থাকলে বর্তমান আইন মন্ত্রীকে সংসদ সদস্য না হয়ে সংসদে বসতে হত না; আওয়ামী লীগ তাকে সংসদ সদস্য করেই সংসদে বসাতে পারত দেশব্যাপী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট যদি ২ শতাংশ বা তার গুনিতক হয় সেক্ষেত্রে নির্বাচিন কমিশন তাদের একত্র করে তাদের মতামতের ভিত্তিতে এবং প্রয়োজনে ভোটাভুটির করে (যাদের জামানত বাতিল হয়নি এমন প্রার্থীদের মধ্য থেকে) সংসদ সদস্য নির্বাচন করতে পারে সংরক্ষিত আসনের জন্য এতে করে সংসদে আমরা পেতে পারি দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তি
অন্য প্রসঙ্গে যাওয়া যাক বর্তমানে দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে দৃশ্যমান অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এবং সরকার ও বিরোধী দল একে অপরকে সৃষ্ট অবস্থার জন্য দায়ী করছে; প্রকৃতার্থে এর জন্য দায়ী কে- তা এখন স্পষ্ট করে বলা শক্ত বিরোধী দল সরকারকে দায়ী করে বলছে, সরকার হাইকোর্টের এ সংক্রান্ত রায়ের পুরোটা অনুসরণ করেনি কথাটা একেবারে মিথ্যে নয় সরকার এতটা তাড়াহুড়া না করলেও পারতো আবার সরকার বলছে, বিরোধী দল সংবিধান মানছে না- এটাও সত্য তবে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের জন্য সরকার কেন তাড়াহুড়া করেছিল- তা বোধগম্য নয় সংসদে তাদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে রয়ে-সয়ে সংবিধান সংশোধন করলে কি এমন ক্ষতি হত তা বোধগম্য নয় হাইকোর্টের এ সংক্রান্ত্ম পূর্ণাঙ্গ রায়ের কটি পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলে খুব বেশী একটা যে ক্ষতি হতো, তাতো নয় হতে সময়ও ছিল এবং হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি হাতে নিয়ে সংসদে বিল আনা যেত তত্ত্ববধায়ক পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে নেতিবাচক মন্ত্মব্য থাকলেও আগামী আরো দু'টি নির্বাচন তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে করার কথা বলে বিচার বিভাগকে ঐ পদ্ধতিতে না জড়ানোর কথা বলা হয়েছে সরকার সেটি মানতে পারত বা নাও মানতে পারতো তাছাড়া সংসদ যেহেতু সার্বভৌম, সংসদ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধাই বহাল হত এতে করে বিরোধী দলের আন্দোল করার পথ কিছুটা হলেও দুরহ হত কার পরামর্শে সরকার এমন তাড়াহুড়া করেছে, তা হয়তো জানা যাবে ত্রিশ বছর পরে, বা আরো পরে এখন আমাদের অনুমান নির্ভর কোন মন্তব্য না করাই শ্রেয়
সরকারের এই দুর্বল সিদ্ধান্তটা  ভিন্ন কোন মস্তিস্ক থেকে এসে থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে সেই অদৃশ্য শক্তি দেশে স্থিতিশীলতা চায় না তাদের উদ্দেশ্য হয়তো ভিন্ন রকমের এ কথা সকলেই জানেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ভাগ্য নির্ধারিত হয় বড় বড় আলীসান হোটেলে - যাকে বলা যায় প্রাসাদ ষড়যন্ত্র বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো তাদের স্বার্থে বাংলাদেশ, নেপাল, নাইজেরিয়া বা অধুনা মালদ্বীপের মত সম্ভাবনাময় দেশগুলোয় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে থাকে এজন্য তারা ভর করে রাজনৈতিক দলগুলোর উপর কখনোবা তারা ভিন্ন পথেও এগোয় ওয়ান-ইলেভেন নিয়ে যেমন বিশেষ একটি সংস্থার নাম বরাবর সামনে এসেছে, তেমনি এবারেও কোন বিশেষ সংস্থা কাজ করছে কি না, তা কে জানে!
আন্দোলনের নামে ক্রমাগত হরতাল যে দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়, তা সকলেই বোঝেন বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগও দীর্ঘ মেয়াদে হরতাল করেছে
(চলবে)

সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৩

নতুন করে ভাবতে হবে


ষষ্ঠ পর্ব

তবু সংসদ সদস্যগণ নির্বাচিত নিজ নিজ এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচনে মোট প্রোপ্ত ভোটের অনুপাতও সংসদে আসন সংখ্যা নির্ধারণে ভূমিকা রাখে না ১৯৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কয়েকটি সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলো প্রাপ্ত ভোট ও প্রাপ্ত আসন সংখ্যা এবং সেই সাথে যে সকল দল কোন সংসদে একটিও আসন পায়নি তাদের প্রাপ্ত ভোটে সংখ্যার তুলনামূলক পরিসংখ্যান দেখলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে
১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ ৭৩.৬৬ শতাশ ভোট পেয়ে আসন পায় ২৭৬ টি অন্য দিকে ন্যাপ মোজাফ্‌ফর ৮.২৯ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ২টি এবং জাসদ ৬.৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ১টি ন্যাপ ভাসানী ৫.২ শতাংশ ভোট পেলেও সংসদে কোন আসন পায়নি
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩৭.৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ১৪৬টি বিএনপি ৩৩.৬০ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ১১৬টি জাতীয় পার্টি ১৬.৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ৩২ টি জাসদ (রব) ০.২৩ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন লাভ করে ১টি অন্যদিকে জামায়াতে ইসামী ৮.৬১ শতাংশ ভোট পেয়েও আসন পায় ৩ টি এ যেন ঠিক ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ে দ্বিতীয় বিভাগ.শ্রেণী অর্জন করার মত ফলাফল
বর্তমান সংবিধান অনুসারে সংরক্ষিত ৫০টি আসন দলগুলোর মোট প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে বরাদ্দ দেয়া হলে দলগুলো কিভাবে উপকৃত হবে তা দেখবো এবারে ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোর মোট প্রাপ্ত ভোটের খতিয়ান:
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪৮.০৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ২৩০টি বিএনপি ৩২.৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ৩০টি জাতীয় পার্টি ৭.০৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ২৭ টি জাসদ ০.৭২ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন লাভ করে ৩টি অন্যদিকে জামায়াতে ইসামী ৪.৭০ শতাংশ ভোট পেয়েও আসন পায় মাত্র ২টি পক্ষান্তরে ০.৩৭ শতাংশ ভোট পেয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি আসন পায় ২টি
২.৯৪ শতাংশ ভোট পায় ১৫১ জন স্বতন্ত্রপ্রার্থী এবং এর মধ্যে নির্বাচিত হন ৪ জন সংসদে প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে সংরক্ষিত নারী আসন (আসন ছিল ৪৫টি) বন্টনের ফলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩৬টি আসন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ৫টি আসন, জাতীয় পার্টি ৪টি আসন লাভ করে এমতাবস্থায় সংরক্ষি ৪৫ আসন যদি দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে বন্ট করা হত (২.২ শতাংশ ভোট সমান ১টি আসন- এই হিসেবে) তাহলে আওয়মী লীগ পেত ২১টি, বিএনপি পেত ১৫ টি জাতীয় পার্টি পেত ৩টি আসন এ ব্যবস্থায় এদের মধ্যে নারী ও পুরম্নষ উভয় সদস্য থাকতে পারতেন

সংরক্ষি ৫০ টি আসনের জন্য দুই শতাংশ করে ভোটের বিপরীতে একটি করে আসন বরাদ্দের ব্যবস্থা নেয়া হলে সংসদে আসন পাওয়া দল গুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ পেত ২৪টি, বিএনপি পেত ১৬টি, জাতীয় পার্টি পেত ৩টি, জামাত ২টি এবং অন্যান্য ছোট ছোট দল মিলে পেত ৪টি আসন যে সকল দলের কোন সদস্য নির্বাচনে জয়লাভ করেনি, তাদের মধ্য থেকেও সংসদে আসতে পারত অন্ত্মত ১ জন {উলেস্নখ্য ২.২৫ শতাংশ পেয়ে এইসব ছোট ছোট দলের ৭৭২ জন প্রার্থীর কেউই নির্বাচিত হতে পারেননি} এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে লাভ হত এভাবে- কোন দলের কোন এক প্রভাশালী সদস্য দল যাকে সংসদে চাইলেও তিনি নির্বাচিত হতে পারেননি তাকে এ পদ্ধতিতে সংসদে নেয়া সম্ভব হত
(চলবে)

বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৩

নতুন করে ভাবতে হবে

নতুন করে ভাবতে হবে

নুরুল্লাহ মাসুম

পঞ্চম পর্ব

আওয়ামী লীগ উপজেলা পদ্ধতি বাস্তবায়নের কথা বললেও আজো তা বাস্তবায়ন করেনি অথচ, আমার মনে হয় শক্তিশালী উপজেলা/জেলা পরিষদ বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশের মানুষের রাজধানীমূখী হওয়ার প্রবণতা কমে যেত রাজধানী ঢাকার ওপর চাপ কমত, আর্থিকভাবে দেশ লাভবান হত এখনও দেশে উপজেলা পরিষদ রয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্যদের ক্ষমতার টানাপোড়নে বহু এলাকার উন্নয়ন কার্য ব্যহত হচ্ছে- এমন সংবাদ প্রতিনিয়ত সংবাদপত্রে দেখা যায় সংসদ সদস্যগণ যদি কেবল আইন প্রণয়ন নিয়েই থাকতেন এবং স্থানীয় সরকারকে স্থানীয় উন্নয়ন কাজ করতে দিতেন নির্বিঘ্নে, তাহলে দেশ ও জনগণ উপকৃত হত সংসদ সদস্যগণ অবশ্য বলবেন, এলাকার উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্ত না থাকলে আবারো জনতার কাছে কি নিয়ে যাবেন ভোট চাইতে? খাটি সত্য কথা তবে সংসদ সদস্যগণ যদি তাঁদের মূল কাজ- আইন প্রণয়ন বাদ দিয়ে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত্ম থাকেন; তবে সংসদে এমন আইন পাশ হবে যা কিনা আমলাদের তৈরী করা- যা কখনও কখনও নিজের দল ও দেশের স্বার্থে পরিপন্থী হতে পারে অথবা হতে পারে অসম্পূর্ণ এক আইন গত ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ের পর দেখা গেল আইনটি সম্পূর্ণ নয় এবং সে কারণেই সুষ্টি হল গণজাগরণ মঞ্চ- নতুন আইন করার দাবী নিয়ে আইনটি সংশোধিতও হল আমার তো মনে হয়, সংসদ সদস্যগণ আইনটি পাশ করার আগে ভাল করে দেখলে এত অল্প ব্যবধানে আইনটি সংশোধন করার দরকার হত না; সৃষ্টি হত না গণজাগরণ মঞ্চের এসবই আমাদের সাদা চোখে দেখা বিষয়; এর অন্ত্মর্নিহিত অন্য কোন বিষয় আছে কিনা, তা আমাদের জানা নেই

১৯৭২ সালের সংবিধানে সংসদে সমাজে অনগ্রসর গোষ্ঠী হিসেবে নারীদের জন্য ১০টি সংরক্ষিত আসন রাখা হয়েছিল পরে তা বাড়িয়ে ১৫, ৩০ এবং সবশেষে ৫০টিতে উন্নীত করা হয় বর্তমানে দেশের প্রধান প্রধান সবগুলো পদে আসীন নারীরা পুরুষদের সাথে সরাসরি নির্বাচন করে বহু নারী সংসদে স্থান করে নিয়েছেন এখন কি নারীদের জন্য আর সংরক্ষিত আসনের প্রয়োজন আছে? আমি মনে করি - প্রয়োজন নেই বরং এই ৫০টি আসন সংরক্ষণ করা দরকার সংখ্যানুপাতে প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোর জন্য বর্তমানে সংসদে প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন বন্টন করা হয় যেহেতু আসনগুলো সাংবিধানিকভাবে নারীদের জন্য, তাই সেখানে পুরম্নষদের মনোনীত করার সুযোগ নেই আমি মনে করি ৫০টি সংরক্ষিত আসন ঠিক রেখে সেগুলোয় যদি নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোর সারা দেশে প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার হিসেব করে বন্টনের সুযোগ দেয়া হয়, তাতে দলগুলো যেমন লাভবান হবে; তেমনি দেশও উপকৃত হবে একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক: বর্তমান নিয়মে ৩০০ আসনে নির্বাচন হলো আসন ভিত্তিতে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা জয় লাভ করলেন যেহেতু সারা দেশের সবগুলো আসনের ভোটা সংখ্যা সমান নয়, সেহেতু কোন আসনের পরাজিত ব্যক্তির চেয়ে কম ভোট পেয়েও অন্য আসনের এক প্রার্থী নির্বাচিত বলে ঘোষিত হতে পারে তুল্যমান উদাহরণ- একসময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পাশ করতে হলে ৪৫০ নম্বর পেতে হত; সেই সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পাশের জন্য প্রয়োজন ছল ৪০০ নম্বর ফলটা হলো এমন, ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয় থেকে কোন ছাত্র ৪৪৯ নম্বর পেয়ে পেল তৃতীয় শ্রেণী, অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪০১ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় বিভাগ বা শ্রেণী সংসদ নির্বাচনেও এমন ঘটনা ঘটছে
(চলবে)

রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৩

নতুন করে ভাবতে হবে

নতুন করে ভাবতে হবে


নুরুল্লাহ মাসুম

চতুর্থ পর্ব

এবারে বলতে চাই, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রায়শঃই বলা হয়ে থাকে ১৯৭২ সালের সংবিধান দেশের সেরা সংবিধান সেটি করা হয়েছিল বৃটেনের গণতন্ত্রের ধাঁচে বা বলা যেতে পারে পশ্চিমা গণতন্ত্রের ধাঁচে তৈরী সেই সংবিধান তবে কোন কালেই বৃটেন বা পশ্চিমা ধাঁচে আমাদের দেশে সংসদ চলেনি বা চলতে দেয়া হয়নি রাজনৈতিক বিশেস্নষকরা বলে থাকেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের থেকেও বেশী ক্ষমতাবান কথাটা একে বারে উড়িয়ে দেবার মত নয় দেখা যাক আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কতটুকু সংসদে সংখা গরিষ্ঠ দলের প্রধান যিনি তিনিই হন দেশের প্রধান মন্ত্রী সুতরাং সংসদে সংখ্যা গরিষ্ঠ দলের সভাপতি বা প্রধান, সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের 'সংসদীয় পার্টি'র প্রধান বা সংসদ নেতা, প্রধানমন্ত্রী তথা সরকার প্রধান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী {আরো কয়েকটি মন্ত্রণালয়তো থাকছেই) এবং 'সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ' এর প্রধান রূপে অঘোষিত সামরিক প্রধান (যদিও রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন সাংবিধানিকভাবে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধনায়ক) এক ব্যাক্তির হাতে যখন এতগুলো ক্ষমতা থাকে, তখন কেনইবা পুরো দল বা সরকার তাঁর আজ্ঞাবহ হবে না? যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে একজন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নিয়োগ দিতে হয় এবং সেই নিয়োগ পার্লামেন্টে অনুমোদ করিয়ে নিতে হয় আমাদের দেশে একবার যিনি প্রধানমন্ত্রী হন, তিনি স্বীয় ইচ্ছেমত মন্ত্রী নিয়োগ দিয়ে থাকেন; সংসদে তাদের নিয়োগ অনুমোদন করাতে হয় না এমনকি প্রধান মন্ত্রী নিজের পছন্দের মানুষকে উপদেষ্টা পদে বসিয়ে মন্ত্রীদের ওপরে খবরদারী করার পথ সুগম করে দেন এতে মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট ঐ মন্ত্রীকে বিশ্বাস করতে পারছেন না
টেকেনোক্র্যাট মন্ত্রী নিয়োগের বিধান করেছিলেন (যতদূর মনে পড়ে) প্রেসিডেন্ট জিয়া তিনি অবশ্য মন্ত্রিপরিষদের মোট সংখ্যার দশ শতাংশ পর্যন্ত্ম টেকেনোক্র্যাট মন্ত্রী নিয়োগের বিধান করেছিলেন ভারতে সংসদ সদস্য নন এমন মন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হলে তাদের অবশ্য ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে টেকেনোক্র্যাট মন্ত্রীরা অবশ্য সংসদে ভোটাভুটিতে অংশ নিতে পারে না- এটা ভাল দিক তবে আরো ভাল হত, যদি টেকেনোক্র্যাট মন্ত্রীরা সংসদে না যেতেন সরকারের কাজের সুবিধার জন্য হয়ত কখনও কখনও টেকেনোক্র্যাট মন্ত্রীর দরকার হয়, তবে তার সংসদে না যাওয়াই ভাল- কেননা সংসদ হচ্ছে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদে জন্য টেকেনোক্র্যাট মন্ত্রীর দপ্তরের জন্য সংসদে অন্য কোন মন্ত্রী দায়িত্ব পালন করতে পারেন
পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (তখনও তিনি বঙ্গবন্ধু হননি) দলীয় দায়িত্ব পালনের জন্য মন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন এখনও কি এমনটি হতে পারে না? যিনি মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী হবেন, তিনি দলের কোন পদে থাকবেন না ভারতে সংসদ নেতা সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হননি, সেখানে কি সংসদে কংগ্রেসের আধিপত্য নেই? বৃটেনের হাউস অব কমনস এ 'লিডার অব দ্য হাউস' এবং প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তি অধিষ্ঠিত হন না সেখানে কি সরকার চলছে না? আমাদের দেশে কি একই ব্যক্তির ৫/৬টি পদে আসীন হওয়ার সংষ্কৃতি থেকে আমাদের নেতারা বেরিয়ে আসতে পারেন না? কেন আমারা সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী পদে দুই জন ব্যক্তিকে দেখতে পাব না? এমনটি হলে আমাদের গণতন্ত্র আরো শক্তিশালী হতো বলেই মনে করি
আমাদের দেশের সংবিধানে ১৯৭২ সাল থেকেই শক্তিশালী স্থানীয় সরকার গঠনের বিদান রয়েছে তবে তা কখনই বাস্তবতার মুখ দেখেনি স্বৈরশাসক এরশাদ অবশ্য উপ জেলা পদ্ধতি চালু করে সীমিত আকারে হলেও স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত বিএনপি সরকার সে পদ্ধতির উন্নয়ন সাধন না করে সেই ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়
(চলবে)

শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৩

নতুন করে ভাবতে হবে

নতুন করে ভাবতে হবে

নুরুল্লাহ মাসুম

তৃতীয় পর্ব 

বেগম খালেদা জিয়া প্রধান মন্ত্রীত্বের সাথে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পদটিও হাতে রেখেছিলেন তারপরও তিনি যা করেন, 'সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ' নামে একটি বিভাগ চালু করেন, যেটি মূলত রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির শাসনামলে চালু ছিল সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি সশস্ত্র বাহিণীর সর্বাধিনায়ক থেকেই গেলেন বলা যেতে পারে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়ে রাষ্ট্রপতির আচরণ করে গেছেন পুরো সময়টাতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সে সময়ের মতই খালেদার আমলে সংসদ সার্বভৌম হলেও কখনোই মন্ত্রিপরিষদ সংসদের কাছে দায় বদ্ধ হয়ে ওঠেনি পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও একই ধারা চলতে থাকে
১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা চালু হলেও সংসদ কখনোই ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে ওঠেনি
১৯৯০ সালে নবপর্যায়ে বাংলাদেশ সংসদীয় পদ্ধতির সরকার পেল- এটা ঠিক তবে সংসদ কতটা সার্বভৌম এবং কার্যকর হয়েছে তা বিতর্কের বিষয় আন্তৰরাষ্ট্র চুক্তিসহ সকল বিষয়ে সংসদের অনুমতি প্রয়োজন আমাদের প্রধান মন্ত্রীগণ সংসদকে কতটা সম্মান দেখিয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতেই পারে বহু আন্তদেশীয় চুক্তি হয়েছে যা কখনোই সংসদে পেশ করা হয়নি আবার অসম্ভব দ্রুত সময়ে সংসদে বিল পাশ হয়েছে- এমন নজিরও আছে তবে মন্দের ভাল আওয়ামী লীগ সরকার সংসদয় কমিটির সভাপতির পদে  সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে বাদ দিয়ে অন্য সংসদ সদস্যকে সভাপতি করে একটা ভাল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে নিঃসন্দেহে সংসদীয় কমিটির কার্যকারিতা নিয়ে কথা বলার অবকাশ রয়েছে এখনও সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্ত্ম কেবলই নির্দেশনা মূলক হয়ে থাকলে সংসদের ক্ষমতার হ্রাস করা হয় কি না, তাও ভেবে দেখা দরকার অবশ্য ৯০ পরবর্তী সংসদগুলোয় আমাদের অভিজ্ঞতা ভাল নয় বিরোধী দলের ক্রমাগত সংসদ বর্জন এবং ক্ষমতাসীনদের একগুয়েমির কারণে সত্যিকার অর্থে সংসদ কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পেরেছে সেটা গবেষণার বিষয় বটে তত্ত্ববধায়ক সরকার দাবী নিয়ে প্রথমে আওয়ামী লীগের আন্দোলন, পরে বিএনপি'র একক নির্বাচন অনুষ্ঠান- সব মিলিয়ে আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্র নিঃষ্কণ্টক পথ চলতে পারেনি এ ধারা চলে আসছে ৯০ সালে সরকার পদ্ধতি পরিবর্তনের পর থেকেই। 
(চলবে)

বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৩

নতুন করে ভাবতে হবে

নতুন করে ভাবতে হবে
নুরুল্লাহ মাসুম

দ্বিতীয় পর্ব

পঁচাত্তর পরবর্তী ইতিহাস কম-বেশী সকলের জানা। বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিপরিষদের অন্যতম সদস্য খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতি হলেন। পরে এলেন বিচারপতি আবু সা'দত মোহাম্মদ সায়েম। তিনি দেশে সামরিক শাসন জারী করলেন। সংবিধান স্থগিত করা হলো। আরো পরে এলেন মেজর জেনারেল জিয়া। এঁরা সকলেই বঙ্গবন্ধুর জারী করা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বহাল রাখলেন। হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে অবশেষে সংসদ নির্বাচন হলো ১৯৭৯ সালে। সেই সংসদ হলো মূলত রাবার স্ট্যাম্প ধাঁচের। প্রথমে মন্ত্রিপরিষদের প্রধানকে বলা হল সিনিয়ার মন্ত্রী; সংসদ নির্বাচন শেষে দেশ একজন প্রধান মন্ত্রী পেল- সেই প্রধানমন্ত্রী '৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন আমাদের স্বাধীনতা বিরোধীদের একজন। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি {লেঃ জেনারেল} জিয়াউর রহমানের হত্যাকান্ডের পর দ্বিতীয়বারের মত দেশে হলে সরাসারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সংখ্যা গরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে বিএনপি 'উপ-রাষ্ট্রপতি' পদটাকে 'লাভজনক' পদ থেকে অলাভজনক বানিয়ে উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে নির্বাচনে প্রার্থী করে দিল। সাত্তার হলেন দেশের দ্বিতীয় বারের মত প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। এর পরের ইতিহাস কারো ভুলে যাবার কথা নয়। এরশাদ এলেন দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের দণ্ড হাতে নিয়ে। উৎখাত করা হলো রাষ্ট্রপতি সাত্তারকে। জেলে ঢোকানো হল বিএনপি'র বহু নেতাকে- দুর্নীতির অভিযোগে। পরে অবশ্য ঐ দুর্নীতিবাজদের একজনকে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী এবং পরে উপ-রাষ্ট্রপতি মনোনীত করা হলো। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং তাদের জোটবদ্ধ দলসমুহের {প্রথমে ১৫ দল ও ৭ দল; পরে ৮ দল, ৫ দল ও ৭ দল এবং জামায়াতে ইসলামী} যুথবদ্ধ আন্দোলনে ১৯৯০ সালে এরশাদকে বিদায় নিতে হয়। আসে প্রথমবারের মত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সময়মতো নির্বাচন হলেও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের প্রধান বিচারপতি পদে ফিরে যাওয়ার উপায় নিয়ে বেশ কিছুটা সময় চলে যায়। অবশেষে সংসদে সংখ্যা গরিষ্টদল বিএনপি ও প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার থেকে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারে ফিরে যায়। বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের সুপ্রীম কোর্টে ফিরে যাওয়ার পথও পরিষ্কার হয়।
ক্ষমতায় পাকাপোক্ত হয়ে বসার আগেই সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া কেবল সরকার প্রধান নয়, রাষ্ট্রপ্রধানের মত আচরণ করতে থাকেন। সে সময়ের পত্র-পত্রিকা উল্টালে যে কারো কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। আব্দুর রহমান বিশ্বাস সংসদীয় পদ্ধতির সরকারে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে। সাহাবুদ্দিন ফিরে যান প্রধান বিচারপতির আসনে।
এরপর বেগম খালেদা জিয়া যা করেন, তার অন্যতম একটি হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির আদলে প্রধানমন্ত্রীর জন্য আলাদা মনোগ্রাম ব্যবহার শুরম্ন করেন- রাষ্ট্রপতির জন্য নির্ধারিত মনোগ্রামের নিচে 'প্রধানমন্ত্রী' লিখে। তৈরী হয় প্রধান মন্ত্রীর নিজস্ব পতাকা- ঠিক রাষ্ট্রপতির আদলে, একই রঙের কাপড়ে। অথচ সরকার প্রধান হিসেবে তাঁর ব্যবহার করার কথা সরকারের মনোগ্রাম; যেটি বঙ্গবন্ধুও প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ব্যবহার করতেন।
সংসদীয় পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রী অনেকগুলো মন্ত্রণালয় নিজের হাতে রাখেন- সে হিসেবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও তাঁর হাতে থাকে {অবশ্য উন্ন বিশ্বে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে অন্যরা নিয়োগ পান; বাংলাদেশে মোশতাক আমলে অল্প কিছুদিনের জন্য জেনারেল ওসমানী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ছিলেন- ঐ শেষ; আর কোন দিন বাংলাদেশ আলাদা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পায়নি}
(চলবে)

নতুন করে ভাবতে হবে

নতুন করে ভাবতে হবে

নুরুল্লাহ মাসুম

প্রথম পর্ব
ভাবনার শেষ কোথায়? প্রতিনিয়ত আমাদের নতুন করে ভাবতে হয়, শিখতে হয়- উদ্যোগ নিতে হয়; ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য। আমরা অবশ্য সকলেই অন্যকে বলতে অভ্যস্থ- নতুন কিছু কর। বাঙালীয়ানার সেই ধারা বজায় রেখে আমিও না হয় তেমনি কিছু বলি; দেখি না যদি কিছু হয়, কোন কাজে লাগে।
শুরম্নতেই বলে নেয়া ভাল, আমি করতে পারি না বলেই অন্যকে উপদেশ দেই- এটাও বাঙালীর চিরায়ত অভ্যেস। তবু বলে যদি কিছুটা শান্তি মেলে, দোষ কি!
দীর্ঘ দুই শতকের বৃটিশ বিরোধী সংগ্রামে বাঙালীর অবদান ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বেশী; সে কারণেই বলা হয়ে থাকে- বাঙালীর অত্যাচারে দখলদার বৃটিশরা কলিকাতা থেকে রাজধারী দিল্লীতে স্থানান্তর করেছিল। সেই বৃটিশ যখন ভারত ছেড়ে চলে যায়, দ্বি-জাতি তত্ত্বের অদ্ভূত এক সমীকরণে প্রায় দেড় হাজার মাইল ব্যবধানে ভিন্ন সংস্কৃতির দু'টি ভুখন্ডকে নিয়ে তৈরী করে দিয়ে যায় পাকিস্ত্মান নামের এক অদ্ভুতুরে রাষ্ট্রের। পাকিস্ত্মান সৃষ্টির পর থেকেই দিবালোকের মত পরিস্কার হতে থাকে মাউন্ট ব্যাটেন, জিন্না ও নেহেরম্নর ফরমুলায় তৈরী পাকিস্ত্মান বেশী দিন টিকবে না। আমি এখানে পাকিস্তান আমলে বাঙালীর স্বাধীকার আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করে পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটাবো না।
দীর্ঘ চব্বিশ বছরের আন্দোলন সংগ্রাম শেষে এক রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যখন ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করলো; বাঙালী পেল একটি স্বাধীন ভূখন্ড। তৈরী হল বৃটিশ মডেলের সংবিধান, যা '৭২-এর সংবিধান নামে বর্তমান প্রজন্মের কাছে খুবই পরিচিত। অবশ্য আমরা সেই সংবিধান ধরে রাখতে পারিনি। বহুবার অস্ত্রপচার করা হয়েছে সেই সংবিধানে- কখনও নির্বাচিত সরকারের হাতে; কখনও সামরিক স্বৈরশাসকদের হাতে। যদিও বলা হয়ে থাকে '৭২ এর সংবিধান ছিল সে সময়ের সবচেয়ে সুন্দরতম সংবিধান; এখন বলা হয় ওটাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ভাল সংবিধান।
সংবিধানটি ছিল সংসদীয় গণতন্ত্রের সংবিধান। নির্বাচিত সার্বভৌম সংসদ হবে দেশের প্রধান চালিকা শক্তি; মন্ত্রিপরিষদ হবে সংসদের কাছে দায়বদ্ধ। বৃটিশ সংসদীয় গণতন্ত্র তেমনটাই; যদিও সেখানে এখনও রাজতন্ত্র বিদ্যমান, তবে তা হলো সংসদ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। তাই বৃটিশ গণতন্ত্রকে বলা হয় নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র।
বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যখন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন, তাঁর বিশাল ব্যক্তিত্ব ও প্রশ্নাতীত নেতৃত্বের কারণে সেই সংসদ কখনও মন্ত্রিপরিষদকে সংসদের কাছে দায়বদ্ধ করতে পারেনি। স্বাধীনতার খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর হাতে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার বিলুপ্ত হয়ে প্রতিষ্ঠা পায় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি এবং গঠিত হয় জাতীয় দল-বাকশাল। সে অন্য ইতিহাস; ওটা আমার আলোচ্য বিষয় নয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সকল সদস্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তে নিহত হলে দেশের শাসনতান্ত্রিক ধারা প্রবাহিত হয় অন্য ধারায়।
(চলবে)

রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৩

সুখের সন্ধানে

সুখের সন্ধানে

নুরুল্লাহ মাসুম


স্পর্শ বিহীন সুখ পেয়েছ কি কখনো
শান্তির এমন নহর দেখেছ কি কোথাও
হাস্যকর কাল্পনিক এমন সুখ

নীলিমায় নীল, দিগন্তে রঙিন আভা
লক্ষ যোজন ব্যবধানে ভাসমান
শ্বেতশুভ্র মেঘমালা,ভাসছে অবিরত
ধরণীর বুকে তুমি আমি এবং কেউ কেউ
বিমোহিত;আহ্লাদিত। অথচ দেখ
এদের কারো সাথে কারো স্পর্শ নেই
নেই কোন উত্তেজনার সংস্পর্শ।

আষাঢ়ের মেঘে ভিজে একাকার হয়ে
যা তুমি পেলে, শরতে না ভিজেও
কেবলি দর্শনে মেলে অপার সুখ; বর্ষণ
তোমায় স্পর্শ দিলেও,শরতের শুভ্র মেঘ
শুধুই অনুভূতির ছোঁয়া দেয় মনে
কে বলে,সুখের জন্য চাই শুধুই স্পর্শ!

ইস্টার্ন প্লাজা, ঢাকা
২৯ ১৯২৫ জুলাই ২০১৩

বহমান ধারা

বহমান ধারা

নুরুল্লাহ মাসুম

স্থবির নয় এ ভূবন, চলমান সকল যুগেই
পথ চলতে হয় তাল মিলিয়ে, নিয়ম বলে তাই
তিক্ততা রইবে সহচর, তবু ধাবমান- যেন গ্যালাক্সি।

সাহসে ভর করে যোগ্যতার মাপকাঠিতে এগুতে হয়
লঙ্কা হোক গন্তব্য;  সাথী না হোক রাবন
মানব জীবন গড়তে হবে;  চাইব না দানব জীবন।

আশা-নিরাশার দোলাচলে হারাই না যেন কভু
উত্তরের বিশাল হিমালয় হয় যেন দিক-নির্দেশক
আগামীর চেতনা হোক সদা জাগ্রত;  নৈরাশ্যবাদ নয়
লক্ষ্যভেদী হতে হবে- পথ হোক না তীর্যক সেথায়।

শঠতার শৃখল ভাঙ্গলে তুমি; গড়তে ভবিতব্য
ফিরবে শান্তি মনোজগতে;  দেখালে যে পথ তুমি।

ইস্টার্ন প্লাজা, ঢাকা
২৪ ১৬১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩ খৃষ্টাব্দ

রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৩

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অভিনন্দন

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অভিনন্দন


মহামন্য হাইকোর্টের জারী করা রুল এর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১০ (দশ) টাকা হারে স্কাউট ফি আদায় বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করে সকল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবরে পরিপত্র জারি করায় অভনন্দন জানাচ্ছি

আমরা আশা করবো, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরও মহামান্য হাইকোর্টের রুলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অতি শীঘ্র ব্যবস্থা নেবে। এবং বাংলাদেশ স্কাউটসও রুল মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৩

চিফ স্কাউট হিসেবে রাষ্ট্রপতি এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ

চিফ স্কাউট হিসেবে রাষ্ট্রপতি এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ

তৃতীয় পর্ব

সরকারী কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক স্কাউটং কেন নয়


নুরুল্লাহ মাসুম


এবারে আসা যাক বাংলাদেশে স্কাউটিং আন্দোলনের গোড়ার কথায়। এ কথা সকলের জানা আছে, স্কাউটিং শুরু হয়েছিল ১৯০৭ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ইংল্যান্ডের পুল হারবারে অবিস্থত ব্রাউনসী দ্বীপে মাত্র ২০ জন বালককে নিয়ে। একজন বৃটিশ সেনাধ্যক্ষ লেফটেনেন্ট জেনারেল রবার্ট স্টিফেনশন স্মিথ ব্যাডেন পাওয়েল (বিপি নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত) স্কাউটিং কার্যক্রম শুরু করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায় নিজের যুদ্ধের অভিজ্ঞতার আলোকে। স্কাউট কার্যক্রমের ব্যতিক্রমতার কারণে সে সময়ে ইংল্যান্ড ছাড়াও পুরো বৃটিশ কলোনীতে এটি খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। ফলে ১৯২২ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে বিশ্বময় স্কাউট আন্দোলনকে একটি সাংগঠনিক কাঠামো দেয়া ও তদারকি করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক স্কাউট কনফারেন্স গঠিত হয়ে এর একটি নির্বাহী কমিটি ও সচিবালয় স্থাপন করা হয়। সেই শুরু- বর্তমানে এটির নাম  ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব দি স্কাউট মুভমেন্ট। এর সদর দফতর জেনেভায় এবং সচিবালয়টি বিশ্ব স্কাউট সংস্থা নামে পরিচিত।
বৃটিশ আমলেই বর্তমান বাংলাদেশ ভখন্ডে স্কাউটিং শুরু হলেও প্রথম দিকে তা কেবল এ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। ভারত বিভাগের পর পাকিস্তানের প্রদশে হিসেবে পূর্ব বাংলায় (পূর্ব পাকিস্তান) স্কাউটিং কার্যক্রম চলে। ১৯৫৯ সালে প্রথমবারের মত পাকিস্তানে স্কাউট কার্যক্রমের আইনী বৈধতা আসে একটি অর্ডিন্যান্স বলে যেটি পাকিস্তান বয় স্কাউটস অ্যাসোসিয়েশন অর্ডিন্যান্স-১৯৫৯ শীরোনামে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক জারী করা হয় ২৯ জুলাই ১৯৫৯ খৃষ্টাব্দে (Ordinance No. XLIII of 1959)।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির ১১১ নম্বর আদেশ বলে পাকিস্তান বয় স্কাউট সমিতিকে বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি হিসেব নামকরণ করে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয় এবং পূর্বোক্ত পাকিস্তান বয় স্কাউটস অ্যাসোসিয়েশন অর্ডিন্যান্স-১৯৫৯ অধাদেশটি রহিত করা হয়। ১৯৭৮ সালে Bangladesh Boy Scouts Samity (Amendment) Ordinance, 1978 (Ordinance No. LIV of 1978) বলে বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি-র নাম পরিবর্তন করে করা হয় বাংলাদেশ স্কাউট। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে সর্বশেষ সংশোধনীতেও রয়েছে এই কথাগুলো:
4. The constitution, powers and functions of the Bangladesh Scouts be such as may be prescribed by rules to be made by the Bangladesh Scouts with the previous approval of the Government, and until such rules are made, the rules of the Pakistan Boy Scouts Association and in force immediately before the commencement of this Order shall continue to be in force and be deemed to have been made under this Order.
বাংলাদেশ স্কাউটস এখনও তেমন কোন আইন তৈরী করেনি যা মহান জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়েছে বা অনুমোদিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান বয় স্কাউটস অ্যাসোসিয়েশন অর্ডিন্যান্স মতে চলতে হলে সংগঠনটিকে চলতে হবে THE SOCIETIES REGISTRATION ACT, 1860 অনুসারে। আর যদি কোন আইন বা নীতিমালা করতে হয়, তবে তা হতে হবে জাতীয় সংসদ কর্র্র্তৃক পাশকৃত। সে মতে চলতে হলে সংগঠনটির প্রতিটি স্তরে থাকতে হবে নির্বাচিত কমিটি। এবার দেকা যাক বাংলাদেশ স্কাউটস এর সাংগঠনিক কাঠামো কেমন। প্রথমেই বলতে হয় জাতীয় পর্যায়ের অর্থাৎ কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কাঠামো প্রসঙ্গে। আগেই বলা হয়েছে বাংলাদেশ স্কাউটস এর গঠন ও নিয়ম মোতাবেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হচ্ছেন চিফ স্কাউট। চিফ স্কাউটসহ বিশাল সংখ্যক মানুষ নিয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশ স্কাউটস এর জাতীয় কাউন্সিল যা কি না সংগঠনটির সর্বোচ্চ নতিনির্ধারণী সংস্থা। গঠন ও নিয়ম এর ১৫ ধারা অনুসারে এই কাইন্সিলের সদস্য হিসেবে রয়েছে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সকল সদস্য এবং
১৫ (ছ). বাংলাদেশের সকল স্বায়ত্বশাষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য থেকে চলমান বছরে দেশের প্রশাসনিক বিভাগসমুহ থেকে পর্যায়ক্রমে একজন করে উপাচার্য জাতীয় কাউন্সিলের সদস্য হবেন। বাংলাদেশ স্কাউটস এর সভাপতি ও প্রধান জাতীয় কমিশনার কর্তৃক যৌথ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এ উপাচার্যগণ জাতীয় কাউন্সিলের সাধারণ সভায় অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত হবেন।
মন্তব্য: বাংলাদেশ স্কাউটস একটি এনজিও হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিজ সংগঠনে একজন কাউন্সিলর হিসেবে মনোনয়ন দেবার অধিকার কি ভাবে লাভ করলো এবং মাননীয় উপাচার্যগণ কি করে এতে অংশগ্রহণ করেন? একজন উপচার্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন মহামান্য রাষ্ট্রপতি (বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য) কর্তৃক; তাঁকে একটি এনজিওতে সদস্য হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব বা মনোনয়ন দেবার অধিকার কি ঐ এনজিওর আছে?
গঠন ও নিয়ম এর একই ধারা মতে জাতীয় কাউন্সিলের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ হলেন:
জ. মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর
ঝ. মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর
ঞ. মহাপরিচালক, সমাজসেবা অধিদফতর
ট. সকল আঞ্চলিক স্কাউটস এর সভাপতি
ঠ. চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষা বোর্ড
ড. চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড
ঢ. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (উপ সচিব পদমর্যাদার নিচে নয়)
ণ. যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (উপ সচিব পদমর্যাদার নিচে নয়)
ত. জাতীয় উপ কমিশনারগণ
থ. আঞ্চলিক কমিশনার, বাংলাদেশ স্কাউটস, সকল অঞ্চল
দ. জাতীয় নির্বাহী কমিটির সকল সদস্য
ধ. জাতীয় কমিশনার, বাংলাদেশ গার্ল গাইডস এসোসিয়েশন
ন. মহাসচিব, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি
প. আজীবন পৃষ্ঠপোষকদের মধ্য থেকে সভাপতি ও প্রধান জথিীয় কমিশনার কর্তৃক যৌথভাবে মনোনীত একজন আজীবন পৃষ্ঠপোষক সদস্য
ফ.  আজীবন সদস্যদের মধ্য থেকে সভাপতি কর্তৃক যৌথভাবে মনোনীত পর্যায়ক্রমে একজন সদস্য
ব. সাধারণ সদস্যদের মধ্য থেকে সভাপতি কর্তৃক মনোনীত পর্যায়ক্রমে একজন সদস্য
ভ. প্রধান জাতীয় কমিশনার কর্তৃক মনোনীত প্রত্যেক অঞ্চল থেকে একজন লিডার ট্রেনার
ম. আঞ্চলিক কমিটি কর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধিগণ.........
য. নির্বাহী পরিচালক।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, উপধারা থেকে পযর্ংন্ত সকলেই সরকারী কর্মকর্তা। একজন সরকারী কর্মকর্তা  স্বীয় দায়িত্বের বাইরে অন্য কোন সংস্থায় কর্মর্তা হিসেবে কাজ করতে পারেন কি  না সে বিষয়ে আমাদের চেয়ে তারাই ভাল বলতে পারবেন। উপধারা - তে বর্ণিত জাতীয় কমিশনারগণ মনোনীত হন প্রধান জাতীয় কমিশনার কর্তৃক এককভাবে স্বীয় পছন্দে, যাদের মধ্যে বেশীরভাগই হচ্ছেন সরকারী কর্মকর্তা। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে -তে বর্ণিত আঞ্চলিক কমিশনারগণ সরকারী কর্মকর্তা। বিষয়টি বিতর্কিত। তবে আলোচ্য অংশে আমার বক্তব্য অন্যত্র। বাংলাদেশ স্কাউটস এর সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী সংস্থা জাতীয় কাউন্সিল এ নির্বাচিত সদস্যের চেয়ে মনোনীতদের সংখ্যা এতটাই বেশী যে, নির্বাচিত সদসগণ সেখানে আদীবাসী বা উপজাতি বা সংখ্যালঘু হিসেবে গণ্য হয়ে থাকেন।
এবারে আসা যাক উপধারা মোতাবেক জাতীয় নির্বাহী কমিটির সকল সদস্য প্রসঙ্গে। বাংলাদেশ স্কাউটস এর নির্বাহী সংস্থা হিসেবে জাতীয় নির্বাহী কমিটি কি ভাবে গঠিত হয় দেখুন:
ধারা ২৩: বাংলাদেশ স্কাউটসেন একটি জাতীয় নির্বাহী কমিটি থাকবে। এ কমিটি জাতীয় কাউন্সিলের পক্ষে প্রশাসনিক ব্যাপারে সর্বোচ্চ নির্বাহী পরিষদ হিসেবে কাজ করবে। নিম্নলিখিত সদস্যদের নিয়ে জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠিত হবে-
ক. সভাপতি {নির্বাচিত}
খ. সহ-সভাপতিগণ {দুই শিক্ষা সচিব পদাধিকারবলে এবং একজন নির্বাচিত}
গ. প্রধান জাতীয় কমিশনার {জাতীয় কাউন্সিলে সুপারিশকৃত এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত}
ঘ. কোষাধ্যক্ষ {নির্বাচিত}
ঙ. জাতীয় কমিশনারগণ {এদরে সংখ্যা ১৫, সকলেই প্রধান জাতীয় কমিশনার এর পছন্দের ব্যক্তি এবং তার সুপারিশে রাষ্ট্রপতি কর্তক নিয়োগকৃত}
চ. উপাচার্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় {পদাধিকারবলে}
ছ. মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর {পদাধিকারবলে}
জ. মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর {পদাধিকারবলে}
ঝ. চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষা অধিদফতর {পদাধিকারবলে}
ঞ. সকল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান {পদাধিকারবলে}
ট. চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড {পদাধিকারবলে}
ঠ. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি (উপ সচিব পদমর্যাদার নিচে নয়)-{পদাধিকারবলে}
ড. জাতীয় নির্বাহী কমিটি কর্তৃক সহজোযাজিত তিন জন সদস্য।
ঢ. জাতীয় নির্বাহী কমিটির জন্য ৬ অঞ্চলের ৬ জন কাউন্সিল প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। পরবর্তী মেয়াদে বাকী ৬ অঞ্চলের ৬ জন কাউন্সিলর প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। ফলে পূর্ববর্তী মেয়াদে নির্বাচিত ৬ জন কাউন্সিলরের পদ শুন্য হবে।
ণ. সকল আঞ্চলিক স্কাউটস থেকে দুজন করে সদস্য (আঞ্চলিক কাউন্সিল কর্তৃক মনোনীত একজন এবং আঞ্চলিক কমিশনার)
ত. নির্বাহী পরিচালক।
লাল বর্ণে {....} এর মধ্যের কথাগুলো বক্ষমান নিবন্ধকারের মন্তব্য।
এবারে দেখুন, কতজন নির্বাচিত সদস্য নিয়ে জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠিত? দেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর কেবিনেটে ১০ শতাশেংর বেশী অনির্বাচিত মন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন না; এখানে প্রধান জাতীয় কমিশনার নিয়োগকৃত ১৫ জন জাতীয় কমিশনারের সকলেই মনোনীত, কেউই নির্বাচিত নয়।
প্রসঙ্গক্রমে বলে নেয়া ভাল, যারা নিয়মিত স্কাউটিং করেন, তারা দীর্ঘ দিন স্কাউটিং করে (কখনো কখনো ১৫ থেকে ২৫ বছর অতিক্রম করে) লিডার ট্রেনার হয়ে থাকেন। তাদের সংখ্যা দেশে খুব বেশী নয়। সর্বশেষ তথ্য না থাকায় লিডার ট্রেনারদের সংখ্যা উল্লেখ করতে পারলাম না বলে দুঃখিত। এই খেটে খাওয়া মানুষগুলো লিডার ট্রেনার হিসেবে জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে স্থান করে নিতে পারেন না; এমনকি জাতীয় কাউন্সিলে যে কয়জন লিডার ট্রেনার থাকেন তারাও প্রধান জাতীয় কমিশনার এর পছন্দের ব্যক্থি। তাদের প্রয়োজন কেবল ট্রেনিং এর সময়ে। কেউ কেউ ঠাট্টা করে বলে থাকেন লিডার ট্রেনারগণ হচ্ছেন মৌলবী-দের মতন, কেবল জানাজা পড়তে তাদের ডাক পড়ে।
এনিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে পাঠক বিরক্ত হতে পারেন। মোদ্দা কথা হচ্ছে, একজন ব্যক্তি প্রধান জাতীয় কমিশনার হিসেবে কোন গণতান্ত্রিক নিয়মে এতগুলো পদে মনোনয়ন দেবার অধিকার লাভ করেন? আর এই যখন অবস্থা, তখন সেই সংস্থার সেই কমিটি বা কাউন্সিল কতটা গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে?
১৫ জন জাতীয় কমিশনার ছাড়াও ৩০ জন জাতীয় উপ কমিশনার নিয়োগ দিয়ে থাকেন প্রধান জাতীয় কমিশনার। এই ১৫ জন জাতীয় কমিশনার এবং ৩০ জন জাতীয় উপ কমিশনার জাতীয় কাউন্সিলের সদস্য এবং তাদের ভোটাধিকার রয়েছে। বলা যায় কাউন্সিল বা কমিটিতে প্রধান জাতীয় কমিশনার এর একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখা বা  স্বৈরশাসন বজায় রাখার জন্যই গঠন ও নিয়ম টা এমনি করে তৈরী করা হয়েছে।
এবার দেখা যাক অঞ্চলগুলো কেমনে চলছে। নৌ অঞ্চল ও বিমান অঞ্চল যথাক্রমে নিয়ন্ত্রণ করে নৌ-বাহিনী ও বিমান বাহিনী। রেলওয়ে অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে রেলওয়ে বিভাগ। রোভার অঞ্চল দেশব্যাপী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভারিং নিয়ন্ত্রণ করে। এই অঞ্চলের সভাপতি হচ্ছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এর আগে অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রোভার অঞ্চলের সভাপতি ছিলেন। অন্য সকল অঞ্চলের মতই রোভার অঞ্চলের প্রধান নির্বাহী হচ্ছেন আঞ্চলিক কমিশনার। রোভার অঞ্চলের আঞ্চলিক কাউন্সিলে ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্বাচিত বা সর্বসম্মতিক্রমে মনোনীত কোন ব্যাক্তিকে প্রধান জাতীয় কমিশনারের সুপারিশক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। বাস্তবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এক প্রকার দখল করে রেখেছেন রোভার অঞ্চলের আঞ্চলিক কমিশনারের পদটি দীর্ঘদিন ধরে। মজার বিষয় হচ্ছে রোভার অঞ্চলের আঞ্চলিক কমিশনার (মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর) জাতীয় কাউন্সিল ও জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে দুটি পদ একআি দখল করে রেখেছেন। দেখুন জাতীয় কাউন্সিল সম্পর্কিত ধারা ১৫ (জ) ও ১৫ (থ)এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটি সংক্রান্ত ধারা ২৩ (ছ) ও ২৩ (ণ)।
আঞ্চলিক স্কাউট কাউন্সিল ও আঞ্চলিক নির্বাহী কমিটির অবস্থায় একই। ব্যতিক্রম নয় জেলা ও উপজেরা পর্যায়ের কাউন্সিল ও নির্বাহী কমিটির গঠন প্রক্রিয়াও। সকল স্তরে কাউন্সিল ও নির্বাহী কমিটির গঠন প্রক্রিয়া এমনভাবে করা হয়েছে যাতে কেন্দ্রীয়ভাবে সবকিছুই প্রধান জাতীয় কমিশনার এর নিয়ন্ত্রনে থাকে। ফলত বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব নিয়ে যে সংগঠনটির গণতান্ত্রিকভাবে কাজ করার কথা, সেটি হয়ে উঠেছে এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে একটি স্বৈরাচারী সংগঠন। এখানে কেউ যদি প্রধান জাতীয় কমিশনার সুনজরে থাকেন তিনি হবেন রাজ বংশের মানুষ। এর ব্যত্যয় ঘটলে তিনি হবে বিদ্রোহী। ফলত তাকে বিদায় নিতে হবে স্কাউটিং থেকে; যদিও বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত স্কাউটিং হচ্ছে সকলের জন্য উন্মুক্ত
মূলত গঠন ও নিয়ম এর মধ্য দিয়ে সরকারী কর্মকর্তাদের পদাধিকারবলে স্কাউটিং এর সর্বস্তরের কমিটিতে দখলদারিত্ব কায়েম করার মধ্য দিয়ে স্কাউটং এর মূলনীতি থেকে বহুদূরে চলে গেছে বাংলাদেশ স্কাউটস। অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা সংগঠন নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনার সুযোগ এলে বিষয়টি আরো পরিস্কার হবে।
একটি এনজিও হিসেবে বাংলাদেশ স্কাউটস এর প্রতিটি সাংগঠনিক স্তরে নির্বাচিত কমিটি থাকা দরকার এবং অবশ্যই যারা স্কাউটিং এর সাথে যুক্ত তাদের নিয়ে। বিশেষত যারা দীর্ঘ দিন ধরে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্কাউটিং এর সাথে যুক্ত, তাদের প্রতিটি স্তরের কমিটিতে থাকার নিয়ম করলে স্কাউটিং হবে সত্যিকারের স্কাউটিং- যা এখন পরিণত হয়েছে সরকারী কর্মকর্তাদের বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে। সরকারী কর্মকর্তাগণ স্কাউটিং করবেন না, তা বলছি না; অনেক সরকারী কর্মকর্তা আছেন যারা ছাত্র জীবন থেকে স্কাউটিং করে আসছেন। আমার বক্তব্য হচ্ছে সরকারী কর্মকর্তাদের পদাধিকারবলে স্কউটিং এর গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় বসিয়ে স্কাউটিং এর মূলধারা থেকে সড়ে যাওয়ার বিষয়ে। যেমন একজন জেলা প্রশাসক চান বা না চান, তাকে জেলা স্কাউটস এর সভাপতি হতেই হবে। কোন কোন জেলায় জেলা প্রশাসককে একাধিক জেলা স্কাউটস এর সভাপতি হতে হয়; কেউ কেউ এতে বিরক্তও হন। যেমন, ঢাকার জেলা প্রশাসক তিনটি জেলা স্কাউটস এর সভাপতি- ঢাকা মেট্রোপলিটন স্কাউটস, ঢাকা জেলা স্কাউটস এবং ঢাকা জেলা রোভার
এছাড়া গঠন ও নিয়মে ২৪৩(খ) ধারায় বর্ণিত অস্কাউটসুলভ আচরণ ব্যবহার করে অপছন্দের মানুষদের স্কাউটিং থেকে দূরে রাখার প্রবণতা এবং ২৪৯ ধারয় বর্ণিত বাংলাদেশ স্কাউট ফাউন্ডেশন নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনার ইচ্ছে রইল। এখানে মজার বিষয় হলো বর্ণিত গঠন ও নিয়ম-এ অস্কাউটসুলভ আচরণ এর সুস্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা না থাকায় এটির ব্যাপক অপব্যবহার হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে; বলা যায় এটি হচ্ছে একটি নিপীড়নমূলক স্কাউট আইন

এবিষেয়