রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৪

আশার ভুবনে

আশার ভুবনে

নুরুল্লাহ মাসুম


যন্ত্রণার শেষ দেখনিদেখতে চাও
চলে এসো হিমালয়ের পাদদেশে- একাকী;
দেখবেরিক্ত হস্তে ধ্যানমগ্ন ঋষি বসে হেথায়
নিরস্ত্র-নিরন্ন তবু হতাশা বিহীন এক তান্ত্রিক
নিরবধি কালোত্তীর্ণ মহাপুরুষ- মুক্ত বিহঙ্গে
অবারিত পদচারণায়- কি প্রশান্তি তার মনে!

অবগাহন করবুঝতে পারবে মুক্তি স্বাদ কত মধুর
না পাওয়ার কি যে প্রশান্তি- বুঝতে চেষ্টা কর

হারাবার মাঝেও প্রশান্তির বারতাকত মধুর
বুঝতে পারছউত্তর যদি না বোধক হয়
ফিরে যাও লোকালয়েবিরক্ত করো না তাকে

প্রবল বর্ষণে-কর্ষণে প্রশান্তি যদিবা আছে
প্রচন্ড খরার শান্তির রূপ ভিন্নবুঝতে হবে
ব্যর্থতা তোমারশুধরে নাও। দেখপ্রকৃতির নবরূপ;
এখনও কি বোঝ নিতবে ফিরে যাও লোকালয়ে

বিরক্ত করোনা ধ্যানমগ্ন ঋষিকে ক্ষণিকের তরে
স্বল্পবসনা নিরন্ন ঋষিকে থাকতে দাও বিব্রতহীন
অনাহুত কামনায় তাকে ডেক নাভেঙ্গোনা তার ধ্যান
অনাদিকাল থাকতে দাও তাকেপ্রকৃতির মাঝে
ফেরাবে যদিভাঙ্গবে ঈশ্বরের মনগড়বে কে নতুন ভূবন?

সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪

নতুন করে ভাবতে হবে - উনিশতম পর্ব

উনিশতম পর্ব

গত সপ্তাহে সুন্দরবনের ভেতরে শ্যালা নদীতে একটি তেলবাহী জাহাজ দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে ডুবে গেছেনৌ-পথে নৌযান ডুবে যাওয়া নতুন কিছু নয়এবারের ঘটনাটা একটু ব্যতিক্রমধর্মীউপকূলবর্তী নোনা পানির পরিবেশে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং অখন্ড ম্যানগ্রোভ বনভমি হিসেবে পরিচিত এই সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নৌ-চলাচল নিষিদ্ধি১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের ইউনেস্কো এ বনটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করেএর ভেতর দিয়ে নৌ-চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় বিশেষ ও জরুরী প্রয়োজনে নৌ-যান চলাচলের অনুমতি দিয়েছিল, যদিবা পরিবেশ মন্ত্রণালয় বহুবার সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌ-চলাচল বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।  কে শোনে কার কথা!  অবস্থা দৃষ্টে মনে হতে পারে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় একই বাড়ির দুই সতিনপরিবেশ মন্ত্রণালয় পরিবেশ রক্ষার কথা বলছে, অন্যদিকে নৌ মন্ত্রণালয় মানুষের প্রয়োজনের কথা বলছেশ্যালা নদীতে তেলবাহী জাহাজ ডুবে যাবার পর সম্প্রতি নৌ পরিবহন মন্ত্রী এমনটাই বলেছেন
ঘটনার বর্ণনার কোন প্রয়োজন নেই, কেননা দেশবাসী, তথা বিশ্ববাসী ইতোমধ্যে পুরো ঘটনা জেনে গেছেন; তারা আরো জেনেছেন, সরকারী সংস্থাগুলো পানি থেকে তেল অপসারণে ব্যর্থ হয়ে স্থানীয় অধিবাসীদের সহায়তায় গতানুগতিক পন্থায় তেল অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছেডিজিটাল যুগে আদী পন্থায় কাজ করাটা তেমন সুখের হবার কথা নয়পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশবাদীদের ক্রমাগত আবেদন নিবেদন সত্তে¡ও কেন এবং কার স্বার্থে নিষিদ্ধ নৌপথে নৌ চলাচলের অনুমতি দিল, সেটা একটা বিরাট প্রশ্ন  এবং বিস্ময়ও বটে! যেখানে সাধারণ নৌ চলাচল করার কথা নয়, সেখানে তেলবাহী জাহাজ কেন চলবেবিকল্প পথ হিসেবে যে কোন সময়ে এ পথ ব্যবহৃত হতে পারে; এর অর্থ এই নয় যে, নিয়মিত রুট সংস্কারের কাজ না হওয়ায় বিকল্প পথ’-ই হয়ে উঠবে নিয়মিত পথউপরন্ত জানা গেছে, ডুবে যাওয়া জাহাজটি মূলত তেলবাহী জাহাজ নয়, ওটা ছিল মোডিফাইড জাহাজআরো বিস্ময়ের বিষয় হলো- পরিবেশের জন্য মারাত্মক এই দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কোন কর্তাব্যক্তি ঘটনাস্থাল পরিদর্শন করনে নিপরিবেশ মন্ত্রী ঘটনার সয়ম পেরুতে পরিবেশ সম্মেলন নিয়ে ব্যস্তএমন একটা ঘটনা উন্নত বিশ্বের কথা বাদ দিয়েও বলা যায়, প্রতিবেশী ভারতে ঘটলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী সফর বাতিল করে দেশে ফিরে আসতেনআমাদের দেশে এমনটি হওয়ার কোন সুযোগ (!) নেইনৌ পরিবহন মন্ত্রী তো  বলেই দিলেন বিশেষজ্ঞের মতো করে- ফার্নেস অয়েলে সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হবে না!
ঘটনার পর থেকে টেলিভিশন টক শো গুলোয় কথার ঝড় বইছেনানান মুনির নানান মতকেউ তীব্র ভাষায় সরকারের সমালোচনা করছেন, কেউ বা একটু নরম সুরেতবে সকলেই ঘটনার দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কথা মেনে নিচ্ছেনসরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নিজেদের গা বাঁচিয়ে কথা বলছেনকথায় কথায় প্রধান-মন্ত্রীর তরি সিদ্ধান্তে কথার রেফারেন্স দিয়ে নিজের চেয়ার ঠিক রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেনপ্রধানমন্ত্রী অবশ্য নিয়মিত নৌপথ দ্রুত চালু করার তাগিদ দিয়েছেন, তবে সুন্দবনের ভেতর দিয়ে নৌ চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন নি; এমন কি এটি ব্যবহারে কৃচ্ছতা অবলম্বনের কথাও তারা বলছেন না
সুন্দরবন- বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতে এর অংশ রয়েছে, সেখানে নৌ চলাচলের অনুমতি নেই; আমাদের এখানে থাকবে কেন? একশত নটিক্যাল মাইল ঘুরে যেতে হলে যে ক্ষতি হবেএ পথটি অবিলম্বে বন্ধ করে দেয়া না হলে দেশের ক্ষতির পরিমান আরো বেশী হবে; তাই এ পথে অবিলম্বে নৌ চলাচল বন্ধ করা একান্ত জরুরী
১৯-১২-২০১৪