শনিবার, ১০ মে, ২০১৪

নতুন করে ভাবতে হবে – ষোড়শ পর্ব

ষোড়শ পর্ব


আইন কি সবার জন্য সমান নয়? বাস্তবে যাই দেখা যাক না কেন আমাদের সংবিধান তাই-ই বলেকেউ-ই আইনের উর্ধে নয়যদিবা বৃটিশ ঔপনিবেশিক কাল থেকেই আমরা আইনের সমান প্রয়োগ দেখেছি- একথা হলফ করে বলা যাবে নাবৃটিশরা তাদের উপনিবেশ ধরে রাখার জন্য নানানভাবে আইনের অপপ্রয়োগ করেছে, আইনের ভাষায় শিশুকেও ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়েছেপাকিস্তান আমলের বেশীরভাগ সময় স্বৈরশাসকরা তাদের প্রয়োজনে আইনকে ইচ্ছেমত ব্যবহার করেছেস্বাধীন বাংলাদেশে অন্তত এইটুকু আশা করা হয়েছিল- বিদেশী শাসক বিদেয় হয়েছে, বাংলার মানুষ হয়তো আইনের শাসন পাবেবান্তবে হলো উল্টোদিন দিন আইনের শাসনের অপমৃত্যু প্রত্যক্ষ করতে থাকলো বাঙালীস্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকেই এ ধারা চলে আসছে এবং ক্রমান্বয়ে এ অবস্থার অবনতি ঘটছেবিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ক্রমাগত বেড়ে চলেছে আমাদের দেশেআমরা এমন সরকারও প্রত্যক্ষ করেছি যারা বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডে অভিযুক্তদের অব্যহতি দিয়ে আইন পর্যন্ত করেছেতাহলে দেশের আমজনতার মতো করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে হয়, যায় দিন ভাল, আসে দিন খারাপ
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত তিন সামরিক কর্মকর্তাকে অকালীর অবসরে পাঠিয়ে সরকার এক প্রকার স্বকার করেই নিয়েছে, অভিযুক্তরা অপরাধীঅবাক বিষয় হলো, তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় না এনে সকল সুবিধা দিয়ে অবসরে পাঠানো হয়েছে, যেমনটি পেয়ে থাকেন স্বাভাবিক নিয়মে যে সকল সরকারী কর্মকর্তা অবসরে যানকথা উঠতে পারে, তারা সামরিক বাহিনীর সদস্য, তাদের বিচার হবে সামরিক আইনেবিষয়টা তাতো নয়তারা সামরিক সদস্য হলেও যে সংস্থায় থেকে তারা অপরাধ করেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে বা সন্দেহ করা হচ্ছে, সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়াধীন শৃংখলা রক্ষা বাহিনী পুলিশের একটি বিশেষ বাহিনী, এটির প্রধান বরাবরই পুলিশের লোকমানুষ মনে করে, তাদের সিভিল আইনেই বিচার হওয়া উচিতস্মরণযোগ্য, আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাবেক সামরিক গোয়েন্দা প্রধান ও এনএসআই প্রধানকেও গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছেনারায়ণগঞ্জ হত্যাকান্ডে যাদের অভিযুক্ত বলে সন্দেহ করে অবসরে পাঠানো হলো, তারা কি পূর্বোক্তদের থেকেও প্রভাবশালী- এমন প্রশ্ন ওঠাই তো স্বাভাবিক
দরিদ্র কলেজ ছাত্র লিমনের পা হারানোর ঘটনায় পুরো র‌্যাব দায়ী নয়, দায়ী দু-চার জন র‌্যাব সদস্য; তাদের ক্ষমতার অপ-ব্যবহারের যথাযথ বিচার হলে হয়তো আর কোন এমনতরো ঘটনা ঘটতো নাকেন জানি না কথিত দু-চার জন দোষী ব্যাক্তির পক্ষে নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ মরিয়া হয়ে ওঠেন- তাদের বাঁচানোর জন্য!  কেন তারা পারেন না আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে? কেন তারা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করতে ভয় পান? ঐ দু-চার জনের জন্য পুরো বাহিনীর গায়ে কালিমা লেপন হয়; যদিবা তা আইনের দ্বা প্রমানিত হয় না; তবু জনসমাজে সকলেই তা বিশ্বাস করেনপ্রশ্ন- দু-চার জন ব্যক্তির অপরাধের বা ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়িত্ব কেন পুরো বাহিনী নেবে? মনে রাখতে হবে দেশের সকল সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী জনগনের করের টাকায় লালিত-পালিত হনতারা সকলেই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীপ্রজাতন্ত্রের মালিক সাধারণ জনগণ; তাদের প্রতি ক্রমাগত অবিচার হতে থাকলে পরিনাম ভাল হবার নয়
ক্ষমতায় থাকার জন্য আমাদের সরকারগুলো (অতীতের বা বর্তমানের) গণতান্ত্রিক ধারা অনুসরণ করেছে তা প্রশ্ন সাপেক্ষদলের চেয়ে দেশ বড় বলা হলেও বরাবরই বাংলাদেশ দেখেছে, দল কতটা বড় হয়ে আছে দলীয় প্রধান বা শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের কাছে; এ ধারার পরিবর্তন প্রয়োজন এবং সরকারকেই এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে সকলের আগে