শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৩

প্রত্যাশার দিগন্ত


প্রত্যাশার দিগন্ত


ভাল থেকো
কথাটা শোনার জন্য
উদগ্রীব, মহা উদগ্রীব, ছয়টি
সময় রেখার পশ্চিমে
একাকী আমি
জলবিহীন সাগর তীরে
উন্মুক্ত আকাশ নয় মেঘমুক্ত,
তবুর আঁখির সন্ধানে ছোটে অশ্রু
সীমাহীন দিগন্ত পানে
কল্পনার ডানা মেলে

মুদিত নয়নে, অবারিত মুক্ত আকাশ-
কোন এক সুবর্ণ গাঁয়ে, সুদূর অতীতের;
দুটি কুড়ি একটি পাতার দেশে
সুবর্ণ সময়ে, আঁখি অশ্রুর
মিলন গাঁথার অপূর্ব মেলা

প্রতীক্ষার শেষে,
পূণর্বার-
ভাল থেকো-
এই প্রত্যাশা-
কত দিনের, কত কালের?

ডরসেট, ইংল্যান্ড
২৭ মার্চ ২০০২ খৃষ্টাব্দ

উদ্যমে নতুন


উদ্যমে নতুন


বিস্তীর্ণ সোনালী আঁশ  ছড়ানো
নিজ পিতৃভূমি, মাতৃ জঠরে
অবিরিত কাঁচা সোনা
নৃত্যে ব্যতিব্যস্ত দখিনা হাওয়া

তফা তেমনি নয়
উত্তর বা দক্ষিণ, নয়ত পূর্ব
আর পশ্চিম যেন সহোদর
আমি মুগ্ধ বিমোহিত

পূবালী হাওয়া
নতুন করে ডাক দিয়ে যায়
কৈশোর যেন ফিরে আসে
নতুন ভাবনায়

খুঁজি নতুন পথ
অবারিত সবুজের মাঝে
একাকী নয়
দল বেধে- নব উদ্যমে

খেদাবাগ, লালমনিরহাট
১৩০৮৩০ মে ১৯৮৮ খৃষ্টাব্দ

সন্ধ্যা থেকে ধরলা


সন্ধ্যা থেকে ধরলা


আকাশ ছোঁয়া সুপারী আর
আম-জাম, দারুচিনির গাছ
পত্র পল­বের আড়ালে
উঁকি দেয় রবি মামা

অবাক আমি
সুদূর দক্ষিণ থেকে এসে
ধরলার দেশে, এ কোন শৈশব
করি আবিষ্কার- নতুন করে!

হারানো দিনের স্মৃতিতে
আমি বিলীন হতে চাই
পশ্চিমা হাওয়া আমায় ডাকে
সন্ধ্যা আর ধরলা যেন দৃঢ় বন্ধন

আমায় ডাকে গৌড়, সোনারগাঁ
আর চন্দ্র দ্বীপের রাজ্যপাল
আমি নিজে বিহ্বল, বাংলার
অপরূপ সৌন্দর্যে বিলীন অস্তিত্ব

হারানোর ভয় নেই আর
নিশ্চিন্তেদীর্ঘশ্বাস ফেলি

খেদাবাগ,লালমনিরহাট
১৩০৮২৫ মে ১৯৮৮ খৃষ্টাব্দ

অনুভূতির শিহরণ


অনুভূতির শিহরণ


পাখ পাখালীর দেশ থেকে
দূরে বহু দূরে
থমকে দাড়িয়ে দেখি আমি
আম নারকেল আর আমলকির গাছ

স্নেহের তপ্ত ভান্ডার
ঝরে অবিরাম আষাঢ়ের মেঘ
পুকুর পানি হীন নয়
তবুও নির্লিপ্ত মন, উদাস গগণ

কপোল ভিজে যায়
অবারিত জল সিঞ্চনে
উদাস আকাশ শান্তনা দেয়
হারিয়ে যাই শৈশবে, সুদূর দক্ষিণায়

বিহ্বল আমি
ধরলা তিস্তার দেশে
নিজেকে পেয়ে অনেকের মাঝে
একাকী নয়- হাজারো মানুষের ভীরে

খেদাবাগ, লালমনির হাট
১৩০৮২০ মে ১৯৮৮ খৃষ্টাব্দ


পেতে চাই


পেতে চাই


পুজার প্রসাদ আর
মসজিদের তবারক
যাই হোক-
আমি পেতে চাই

কুমারীর ভালবাসা
প্রেয়সীর প্রেমের আবেগ
অথবা দয়িতার প্রত্যাখান
সবই আমি পেতে চাই

রাজতন্ত্রের দোর্দন্ড প্রতাপ
ফ্যাসিবাদের অমোঘ স্বাদ
গণতন্ত্রের সমাদর বুলি
সাথে সমাজতন্ত্রও পেতে চাই

যাকে বা তাকে
ওকে বা যাকে অথবা
তাকেই- আমি পেতে চাই

জিন্দাবাহার, ঢাকা
১৪০১১৭ মার্চ ১৯৮৮ খৃষ্টাব্দ

দ্বগ্ধ


দ্বগ্ধ


ওরা আমায় ডাকে না
দেয়না ভালবাসা
অথচ আমি চাই শিশির সিক্ত
এক টুকরো কাপড়

প্রশান্তির কামনায় আমি
অপেক্ষা করি ফাগুনের শেষাবধী
তবুও ধুলিকনা জোটে না

বড্ড অসহায়
বিভাবতীর কথাই মনে হয়
শিশির ভেজা রাতে খড়ে জ্বালানো
আগুন, আমাকে তপ্ত করে না
ঠান্ডা খেজুর পানীয় আমায়
করেনা সিক্ত, বসন্তের মৃদু সমীরণ
আমায় দেয়না প্রশান্তি
ভালবাসা পাইনা,
কেবলই চৈতি হাওয়ার প্রখরতা
দগ্ধ হতে হয় প্রতিনিয়ত
একাকী নিঃসংগ।

জিন্দাবাহার, ঢাকা
১৫১২৪৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৮ খৃষ্টাব্দ

কবি


কবি

(দক্ষিণ আফ্রিকার মানবতাবাদী কবি বেঞ্জামিন মলয়ঁস স্মরণে)

কবি তুমি উজ্জল নক্ষত্র
তীব্র আলোকিত এক
চন্দ্র, অথবা নিহারিকা
উল্কাও হতে পারতে
হতে পারতে ধুমকেতু
পতনেই তুমি স্মরণীয়
মলয়ঁস-
আঁধারে তুমি ডুবে গেলেও
প্রভাতে তুমি উজ্জ্বল
নব দিগন্তে উদীত রবি
ক্ষচিত করেছে তোমায়
বিশাল গগণে
কবি, তোমার শেষ নেই
তুমি অজেয়, তোমাতেই
খুঁজছি মোরা মরণ অস্ত্রবল
মুখে মোদেরও গুজে দেয়া কাপড়
থুবড়ে পড়ে আছি সবাই
হাতকড়া বহু আগে থেকেই
তবু অগ্রসর-
মিলবো তোমাতে একদিন-
কামনা চিরন্তন

জিন্দাবাহার, ঢাকা
০৬১৯৩০ ডিসেম্বর ১৯৮৭ খৃষ্টাব্দ

আমাতেই আমি


আমাতেই আমি


আমাতেই আমি
সীমাবদ্ধ হয়ে পরেছি
সেই অনেক আগেই

ক্লান্ত চন্দ্রমুখ দর্শনে
আরো নিরাশ হই
পূর্ণিমার আলো বিনষ্ট

খোলা আকাশে চাঁদ
পাবেনা দেখা
যেন হাজার ব্যারিকেড

তুমি আমি আজ
মানব শিকল
ঠোকাতে প্রকৃতি

তৃষ্ণার্ত আমি
একটিবার সুধাপানে ইচ্ছুক
প্রকৃতি বিরান
আমি মৃতব, তথাপি
যান্ত্রিক গতি সম্পন্ন
আমি, নতুন এক আমি
আমাতেই বিলীন আমি

জিন্দাবাহার, ঢাকা
০৯১৯১২ ডিসেম্বর ১৯৮৭ খৃষ্টাব্দ

কখনো দেখিনি


কখনো দেখিনি


নীল আকাশ আমি দেখিনি
প্রত্যুষে আবির রঙ্গে রাঙা
শান্ত পৃথিবী ওঠে জেগে

দ্বিপ্রহরে-
রক্তাক্ত চক্ষু নিয়ে
রবি মামা দেয় হানা
ঠাঁই নাই

গোধুলী-
ধুলিময় পৃথিবী
রাখাল গরু নিয়ে ফেরে
ঘরে নিশ্চিন্তবাসে
রাত্রি কালিন শান্ত হাওয়া
ক্লান্ত ধরণী
নীল আমি দেখনি

একদা কালবৈশাখী
ঈষাণ কোনে
কালো জামদানী
যেন মা বাসন্তী

মায়ের আর্শীবাদ
হয়তো বর্ষিত হলো
নয়ন জুরিয়ে গেল
দেখলাম
রঙধনু- ঠিক পশ্চাতে

আবীরের লাল নয়
গোধুলীর ধুলি নয়
অথবা নয় রক্ত চক্ষু
কিংবা শয়নে ধরণী
সর্পাকৃতি নিয়ে
নীল আছে ঠিকই-

এসেছে আমার সম্মুখে
এক সন্যাসী মুর্তি নিয়ে
কাল বৈশাখীর
ছোবলের পরে

নাখালপাড়া
১৩২২১৮ এপ্রিল ১৯৮৭ খৃষ্টাব্দ

লাল রক্তের মাঝে


লাল রক্তের মাঝে


খুঁজছি, কাকে জানেন?
আমাকে
অবাক হলেন?
হবার কথাই বটে

কোথায় খুঁজছি তা জানেন?
কেমন করে জানবেন
আমি তো নিরুদ্দেশ

একুশের শহীদ মিনার
ছাব্বিশের স্মৃতিসৌধ কিংবা
ষোড়ষীর.......
নেই কোথাও নেই আমি

পাবার বা জানার কথা নয়
তাই, আমি নিজে
আমাকেই খুঁজছি
পথে প্রান্তরে
লাল রক্তের মাঝে

খুলনা
২১২২১০ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৭ খৃষ্টাব্দ

একাকিনী


একাকিনী


হীম শীতলরাত্রিতে
একাকিনী বালিকা কাঁদে
ক্ষুধার লাগি- আশ্রয়হীনা

মধুগুঞ্জরণে ভরপুর চারিধার
অলি আসে- অলি যায়
সুহাসিনীর নেই কোন দুঃখ

চুলে ধরেছে পাক
ঝাপসা সবই আজ সম্মুখে
তবু যেন দেখি ঠিক
এবং দেখলাম-
এক বৃদ্ধ, একাকিনী শীতের রাতে
ভ্রমর নেই, নেই কোন সুবাস
এবড়ো-থেবড়ো অবয়ব
বিভস- আতংকিত

দীর্ঘশ্বাস পারিনি রাখতে ধরি
মুদিলাম নয়ন-
আসমুদ্র ভাসিয়ে নিল মোরে
শতবর্ষ আগের এক নিশিথে- একাকী

পাবলিক লাইব্রেরী, ঢাকা
১০১৫০৫ ডিসেম্বর ১৯৮৬ খৃষ্টাব্দ

লাল চা এবং আজাদ


লাল চা এবং আজাদ


নদীর ধারে
নন্দীর চায়ের দোকান
একটা লাল চা দে তো-
লালচে কালো রংয়ে
জীবনের সব কিছু যেন
যায় হারিয়ে

চা দে- জলদি
আরে হারামখোর, বাসে যামু;
কৈ রে আজাদ.........
থমকে যায় আজাদ!!
আজাদ পাকিস্তান, আজাদ কাশ্মীর
তারপর.....

বিস্মৃতির গহ্বরে হারিয়ে যায় সাইজুদ্দি-
সাদা চামড়া খ্যাদাও
লড়কে লেঙে পাকিস্তান
কাশ্মির, আজাদ না জম্মু-
লাল সাদা উড়োজাহাজের দৌড়
সেকি উদ্দাম!

আবার থমকে যেতে হয়-
বায়ান্নোর রক্ত
কেনো ঝরেছিল? শুনেছিল
বাংলা ভাষা, তারপর-
উনসত্তর, মতিউর-
সেই বাচ্চা পোলাডা মরলো
বইন্যার কথাও মনে হয়...
স্মৃতি ডুব দেয় আরো গহীন জলে

সত্তর একাত্তর
দুইটা মাস- একষট্টি দিন
যেন একষট্টি বছর, সাথে যোগ হয়
আরো পঁচিশ যুগ, পঁচিশ শতাব্দি....

কইরে, হালার আজাদ না অজাদ
লাল চা দিলি না?
ক্রদ্ধ হয়ে ওঠে সাইজউদ্দি
ক্ষেতে যামু, ধান কাটুম,
ঘাম ঝরবো
তবু আমার ধান পামু না
রাজাকারের বাচ্চা মহাজন....
- বিরবির করে

একদিন রাইতে
বুকের মধ্যিখানে বউটারে কাইড়া নিল
ছেড়া কাথা গরম করতে
ফিরা আর আসে নাই শাফিয়া;
দেশে শীত কেবল বাড়তেই আছে
শাফিয়া নাই-
কম্বলও জোটে না, যদিবা আট কোটি...
হুনছিলো মাইনষের কাছে

খড়া, বর্ষা আর বন্যা
সাইজুদ্দি বাইচা আছে, থাকবে
হয়তো থাকবে নাকিন্তু
ঘড়ির কাটা চলবে
লাল চা-ও বেচবে আজাদ

খুলনা
২৬ জানুয়ারি ১৯৮৬ খৃষ্টাব্দ

দেখা না দেখা


দেখা না দেখা


বিভাবতি আজ ভিক্ষা করে
আরিচার ঘাটে-
তাকে আমি চিনেছি,
আমায় সে দেখেনি

জানিনা ফুটফুটে মেয়ে
কমলা দেবী কোথায়?
পতিদেব নিরুদ্দেশ
সেই সাতচলি­শ থেকে

বিভাবতি একা- চলে সংসার
কথা বলতে সাহস পাইনা
এড়িয়ে যাই, সে আমায় দেখেনি

তার সুন্দরী কমলা দেবী,
সবাই বলতো রাধা
কেউ কেউ হিংসে করত
তাকেও সে দেখেনি- কোন দিন

তবু চলছে তার সংসার
আমরা শুধুই দেখছি
আপনজনেরা

নাখালপাড়া, ঢাকা
০৬০১৩৮ আগস্ট ১৯৮৬ খৃষ্টাব্দ
il� ~ l i 07 �. so-hansi-font-family:"Times New Roman"'>খুলনা
১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬ খৃষ্টাব্দ

বেঁচে আছি


বেঁচে আছি


কঞ্চির মত কচা
আজ উদ্দাম সন্ধ্যা
উদ্বেলিত যৌবন যেন উপচে পড়ছে

কালের স্বাক্ষী
বটবৃক্ষ আর নেই, তবুও
সীকলা চলে পুরানো গতি নিয়ে

কচা আর বটবৃক্ষ, যেন
মিলে মিশে একাকার
ছিল এক কালে- আজ নেই

সন্ধ্যা আছে উদ্দাম নিয়ে
বটবৃক্ষ হীন সমাজটা চলছে
আমরাও বেঁচে আছি

নাখলপাড়া,ঢাকা
২৭১৫৫০ জুলাই ১৯৮৬ খৃষ্টাব্দ

বাস্তবতার কষাঘাতে


বাস্তবতার কষাঘাতে


সন্ধ্যার তীরে শুয়ে থাকা
দূরন্তবালক র্দূবার
টানছে আজি ঘাণির চাকা
বলছি যাকে আমরা- সংসার

বটবৃক্ষের নেইতো ছায়
রোদ ঠেকানোর একগোছা চুল
বাস্তবতার কষাঘাতে ভাবুক হৃদয়
দেখছে কেবল হলদে রংয়ের সরষে ফুল

বলবে সে আজ কেমন তরো
দুঃখির কথা দরদ দিয়ে
ক্ষুধার জ্বালায় নিজেই সে আজ জড়োসড়ো
বউ বাচ্চা সকল নিয়ে

খুলনা
২৯ মার্চ ১৯৮৬ খৃষ্টাব্দ

প্রষ্ফুটিত কৃষ্ণচূড়া


প্রষ্ফুটিত কৃষ্ণচূড়া


তমাসাবৃত আঁধার পেরিয়ে
কুয়াছাচ্ছন্ন প্রভাতে
কৃষ্ণচূড়ার আধো প্রষ্ফুটিত
শেষ বসন্তে-

উদাস হাওয়া আর প্রবল ঝলকানী
বিদ্যুতের, যৌবন আসে
খরতাপে বিদগ্ধ হতে
এই বাংলায়

প্রষ্ফুটিত কৃষ্ণচুড়া, ঝরে যায় পলাশ
রচিত হয় নতুন শহীদ মিনার
নগ্ন বিভস-
অষ্টাদশী, যেন চির ভাষ্মর

খুলনা
২৯ মার্চ ১৯৮৬ খৃষ্টাব্দ

ফাগুণের আগুন


ফাগুণের আগুন


ফাগুন এসছে আবারো
ঝির ঝির হাওয়ার তালে
হিন্দোলিত প্রকৃতি-
গোধূলী তা বলে দেয়

শীতের জড়তা গেছে চলে
আনন্দের বন্যা বইছে
ধরণীর বুকে নতুন রূপে
আমি কই?

যৌবনের গান গাওয়া হলো না
স্তব্ধ, নিস্তব্ধ, যেন মৃত-
তবু আগামীর চেতনায়
গান আমায় গাইতে হবে

ভরসা একটাই
চিরন্তন আগামী ভবিষ্যত
না পাওয়ার দুঃখে ভেজেনা
চোখ, সাধনা তব আগামীর

আগামীর ফাগুন যেন আসে
ফাগুনের আগুন নিয়ে
যে আগুন শুধু জ্বালাবে সারা বিশ্ব

খালিশপুর, খুলনা
১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬ খৃষ্টাব্দ

জলোচ্ছাস এবং আসমানী


জলোচ্ছাস এবং আসমানী


হুসফিরা আসতি আসমানী, তরেই খোঁজলাম
ডাইনে-বামে, এদিক-সেদিক
কোনহানে পাইলাম না

রাইতের কালে হুইছিলাম
একলগে- এক বিছানায়, আর মনে নাই-
হাচাই কই আসমানী, আর মনে নাই

ক্যাদা মাটি আর
পাশে আছে কত্ত মরা গরু ছাগল
পেটফুলা বহুত মানুষ দেখলাম
কিন্তুক- তরে পাইলাম না

চোখটা ঝাপ্সা লাই্গলো
চলি গেইলাম হপ্পনের রাজ্যি-
য্যান- হাচাই হেই দিন!

বিহান বেলা উঠি
মেলায় যাবার কথা আছিল-
তোর লাগি আলতা আর
ঠোট মালিস আনুম- কথা দিছিলাম

ঠোটে লাগাবি, আদর করুম,
গাল লাল হইব-
সব কথা কওনও যায় না,
তরে খুজিও পাই না

আগামীর কথা ভাবি
আদর করি তরে, ঘুমাইলাম-
বড় শান্তির ঘুম-
য্যান বেহেস্তের চির শান্তি

মট্ মটাস্ শব্দে
ঘুম ভাঙ্গি গেল, মনে অইল
পানিতে ভাসতাছি-
তুই আমি- পাশাপাশি

আন্ধার চারদিক, খালি দেহা যায়
ধলা পানির মুকুট-
য্যান তুফান দৈত্যের রাজা আস্তিছে,
তুই জড়াইয়া ধরলি মোরে;
সাতার কাইট্তাছি- কাইট্তাছি
তুফানের ধাক্কায় জোর কমি গেল
বিষ্টির ঝাপ আরেক জ্বালা-
শীত করতি লাইগল

খানিক বাদে-
কত মাইনষের চিকাইর
কে কারে বাচাইব, নিজে ব্যস্ত
যেমনি অইল নিজের বেলায়

তর কতা হুনলাম, পেরেশান-
সাতার কাটতি পারস না
কি করুম কআমি কাহিল-
কেমনে ধরি রাহি!

গর গর - গরম! বাজ পইড়ল
তুফান দৈত্যি ছুটি আইসলো
গুড়ি একখান পাইলাম হাতে-
তুই নাই, গুড়ি ছুটি গেল

কত বাচাও বাচাও হুনলাম-
ছুটি গেলাম, আসমানী কই
খুজতি লাগলাম অথৈই পানির মদ্যি


মহাজন হিকদার আর দারোগা বাড়ী
বড় দালান গুলান য্যান
লাল চর, নতুন চর, কুককির চর
দেখতে ভালাই লাইগল

লাল ভেজা কাপড় মাথায়,
এই আসমানী-
হায়! কতা কইল না
গেলাম আরেক চরে

কত সাত্রাইলাম
জানি না তুই কুনডে আছিলি,
হায় আসমানি!
কোথায় গেলি- ঠোট মালিস পরলি না!

সাহেবেরা আইলো, মোরে তুলি লইল
কত আদর যত্ন কইরল-
ট্যাকা দিল,
তরে পাইলাম না

আসমানী- আসমানীরে,
কোন্ডে গেলি-
সমুদ্দুরে চরে ফেলাই মোরে
ওরে আসমানী।

খুলনা
০১ জুন ১৯৮৫ খৃষ্টাব্দ