শনিবার, ২৩ মে, ২০১৫

সাগরবক্ষে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়

সাগরবক্ষে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়
নুরুল্লাহ মাসুম

বিদেশে কর্মী পাঠাতে হলে গমনেচ্ছুদের প্রথমে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে; তারপরই কেবল তাদের বিদেশে পাঠাতে হবেএ দায়িত্ব দেশের সরকারেরকেবল অর্থ উপার্জনের পথ হিসেবে যাকে-তাকে যেন-তেন প্রকারে বিমানে তুলে দিলেই সরকারের দায়িত্ব পালন হয় নাঅর্থলিপ্সু কতিপয় দালাল যখন এমনতরো কাজ করে, তাদের দমন করা সরকারেরই দায়িত্বমনে রাখতে হবে দেশের বিরাট অংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গঠনে অভিবাসীদের অবদান সবচেয়ে বেশী এবং তাদের রেমিটেন্সের ওপর ভরসা করেই মধ্যআয়ের দেশ হবার স্বপ্ন দেখছে সরকার
অথচ দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে বাংলাদেশী দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য বাজার বন্ধ রয়েছেফলে একটু ভাল থাকার আশায়, বেশী আয়ের লক্ষ্য দিয়ে দেশের নিরিহ মানুষগুলো আদম পাচারকারীদের ফাঁদে পা দিচ্ছেকেউবা মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু বিক্রি করে অধিক আয়ের লক্ষ্যে পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে- অজানা গন্তব্যেএদের অনেকেই হয়তো আর ফিরে আসে না মাতৃভূমিতেপথিমধ্যেই দালালদের চাপে অনেকেই সর্বস্ব খুইয়ে পথে বসছে
বিষয়টি নতুন নয়, বহুদিন ধরে চলে আসছেতবে স¤প্রতি বিষয়টি এতটা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে যে, বিশ্ব বিষয়টি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্নহাজার হাজার বাঙালী ও রোহিঙ্গা অভিবাসী মালাক্কা প্রণালী ও আন্দামান সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে দুই মাস ধরেথাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া কোনো দেশই তাদের আশ্রয় দিচ্ছে নাআন্তর্জাতিক অনুরোধও তারা গ্রাহ্য করছে না; এমনকি জাতিসংঘের অনুরোধও তারা রাখছে নাএসব অসহায় মানুষদের আশ্রয় দেয়ার জন্য মালয়েশিয়ার বিরোধী দলও সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছে-  কে শোনে কার কথা১৪ মে মালয়েশিয়া ৮ শতাধিক বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা অভিবাসী বোঝাই দুটি নৌকি ফিরিয়ে দিয়েছেখাদ্যের অভাব, পানির অভাব সাগরে ভাসমান অনেকেই নিজের মূত্রপান করতে বাধ্য হচ্ছেকোথায় মানবতা, কোথায় মানুষের অধিকার, কোথায় ধর্ম, কোথায় গণতন্ত্র আর কোথায় মানুষের জন্য রাজনীতি? যদিও মালয়েশিয়ার নৌবাহিনী হেলিকপ্টার থেকে সামান্য খাবার ফেলছে সমুদ্রের পানিতে, তা একদিকে যেমন পর্যাপ্ত নয় অন্য দিকে সাগরে পরে যাওয়া খাবার সাঁতরে আনতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে অনেকে
এসব অসহায় অভিবাসী বহনকারী নৌযানগুলো সাগরে ফিরিয়ে দেয়া বন্ধে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচতিনটি দেশই লোক দেখানো খাবার সরবরাহ ও নৌকাগুলোর ইঞ্জিন মেরামত করে দিয়ে ফের সমুদ্রে ঠেলে দিচ্ছেআন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী কোনো বাণিজ্যিক জাহাজ ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকার এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে বাধ্য
মালয়েশিয়া বলছে, লংকাবি দ্বীপে প্রায় দেড় হাজার অবৈধ অভিবাসী উদ্ধারের পর পেনাংয়ের উত্তরাঞ্চলনীয় উপকলে পাঁচশত অভিবাসী বহনকারী একটি বোট পাওয়া যায়আমরা কি করতে পারি? যাঁরা আমাদের সীমান্ত ভেঙে ঢুকতে চাইছে তাদের সঙ্গে আমরা এখনো ভালো আচরণ করছি, এখনো তাদের সঙ্গে মানবতাবোধ দেখিয়ে আসছিকিন্তু তার মানে এই নয় যে, এভাবে অবৈধ অভিবাসীর ঢল সামলাতে হবেকথাটা সত্য; তবে এখন প্রয়োজন এই অসহায় মানুষগুলোকে নিষ্ঠুর মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো- তাদের উদ্ধার করাএখানে রাজনীতি করা উচিত নয়আগামীতে এ ধরনের অবৈধ অভিবাসন যাতে না ঘটে সে চেষ্টা করা, আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করা, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা
মানব পাচারকারীরা গ্রেপ্তার এড়াতে বহু আগেই নৌকা ছেড়ে চলে গেছে; ফলে নাবিকবিহীন অবস্থায় ঘুরপাক খাচ্ছে অনেক নৌকাকোনো কোন নৌকা দুই মাস বা তারওবেশী সময় ধরে ধরে সাগরে ভাসছেরাজনীতিকরা, কোথায় বিশ্ব মানবতা? আমরা অস্ত্র কেনার জন্য, অস্ত্র উৎপাদন করার জন্য কত লাখ লাখ ডলার ব্যয় করি অথচ অসহায় মানুষগুলোর জন্য কিছুই কি করতে পারি না?
সাগরে ভাসমান এ অমানবিক ঘটনার গোড়ার দিকে তাকালে দেখা যাবে, অধূনা মায়ানমার, যেটি আগে বার্মা বা বর্ম নামে পরিচিত ছিল, সেখানে সংখ্যালঘু মুসলমানদের, যারা রোহিঙ্গা নামে পরিচিত এবং ভেশীরভাগই সাবেক আরাকান অঞ্চলের বাসিন্দাধর্মে তার মুসলমান এবং তাদের ভাষার সাথে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভাষার কিছুটা মিল রয়েছেমায়ানমার বরাবর বলে আসছে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক, তাই রোহিঙ্গাদের মায়ানমারের নাগরিকত্ব নেইবিগত শতকের আশির দশকেই তখনকার বার্মা থেকে রোহিঙ্গারা  বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়; সেই থেকে বাংলাদেশে বসবাস করছে রোহিঙ্গারা- আন্তর্জাতিক শরনার্থীর মর্যাদায়হিসেবের বাইরে কত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে তা বলা মুষ্কিলবৈধ বা অবৈধভাবে বসবাসরত এ সকল রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য এক বড় বোঝা এবং তাদের উপস্থিতি এদেশের সংষ্কৃতিতে বেশ বিরূপ প্রভাব ফেলছেমাদক পাচার থেকে শুরু করে নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে আছে রোহিঙ্গারা, এমন অভিযোগ রয়েছেশরনার্থ হিসেবে যে সব রোহিঙ্গা এদেশে রয়েছে, তাদের জন্মহার কম নয়- তাই রোহিঙ্গা জনসংখ্যা বাড়ছে ক্রমাগত
ধারণা করে যেতে পারে, এসব রোহিঙ্গাদের সাথে নিয়ে দেশী ও বিদেশী অপরাধী চক্র কিছুটা উন্নত জীবনের আশা জাগিয়ে স্বল্প টাকায় নিরিহ মানুষদের বিদেশে যেতে উদ্বুদ্ধ করছেনিঃসন্দেহে এমন কর্মে যারা যুক্ত তাদের রয়েছে শক্তিশালী রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোশকসেই সাথে প্রশাসনের কিছু অসাধু লোকজন জড়িত না থাকলে ক্রমাগত মানব পাচার চলতে পারে নাকেননা, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল থেকে নদীপথে এসব পাচার হচ্ছে, যেখানে রয়েছে আধা-সামরিক বাহিনী বর্ডারগার্ড ও কোষ্টগার্ডের মত নিয়মিত বাহিনীর নিয়মিত টহলরয়েছে পুলিশ প্রশাসনযে কোন সাধারণ জ্ঞানের অধিকারীই বুঝতে পারবেন, শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ছাড়া এত বড়মাপের অপরাধ সংগঠিত হওয়া সম্ভব নয়
সবশেষ খবরে প্রকাশ, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সাময়িকভাবে সাগরে ভাসমান অভিবাসীদের আশ্রয় দেবে এটা অবশ্যই স্বস্তির সংবাদঅন্যদিকে রোহিঙ্গাদের প্রতি নমনীয় হওয়ার ইঙ্গি দিয়েছে মায়ানমার, এমন সংবাদও শোন যাচ্ছেরেহিঙ্গারা আরাকান অঞ্চলের বাসিন্দা, যুগ যুগ ধরে সেতায় তারা বসবাস করছে- প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে; তারা কি করে ভিনদেশী হয়? প্রশ্নটা আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে আসতে হবে, মায়ানমারকে বাধ্য করতে হবে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেবার জন্যঅপ্রাসঙ্গি হলেও বলতে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের আদিবাসীদের বলা হয় রেড ইন্ডিয়ান; ওরা ছাড়া সকলেই তাহলে কি ভিনদেশী হবে, যারা বৃটেন বা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল থেকে সেথায় বসবাস করছেঅস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। 

বিশ্বজুড়ে চলা অভিবাসী সমস্যার দিকে নজর দিলে দেখা যায়, ইওরোপও এ সমস্যা থেকে মুক্ত নয়মুক্ত নয় যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডাতবে চলমান এশিয়ার এই অভিবাসী সমস্যার পেছনে মূলত মায়ানমারের একগুঁয়েমির কারণে সৃষ্ট রোহিঙ্গা সমস্যাই দায়ী তাতে কোন সন্দেহ নেইরোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী বলে চালিয়ে দিতে যারা দায়ী তাদের সাথে মায়ানমারের সরকারেরও দায় রয়েছে বলে আমরা মনে করিঅপরাধী যে দেশেরই হোক না কেন, তার অপরাধীইমায়ানমারের এই বিশাল ক্ষমতাশালী সরকারী অপরাধীদের সাথে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের কিছু অপশক্তি- আমরা জানি না, তারা কারাএদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগেরআমরা আশা করবো, মানবসৃষ্ট ভয়াবহ এই মানবিক বিপর্যয়ের সাথে যারা সম্পৃক্ত, তারা যত ক্ষমতাশালীই হোক না কেন, আমাদের দেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো তাদের খুঁজে বের করতে সক্ষম হবে এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসবেতবে শংকা থেকেই যাযÑ অপরাধী সনাক্তের পরে রাজনৈতিক পরিচয় তাদের অব্যাহতির কারণ না হয়আমরা বিশ্বাস করতে চাই বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সরকারী বিভাগের সদস্যরা বেশ দক্ষ এবং অপরাধীরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তারা পার পাবে না

বুধবার, ১৩ মে, ২০১৫

নতুন করে ভাবতে হবে : পর্ব - একুশ

একুশতম পর্ব
 
দেশটাকে অকার্যকর প্রমানের জন্য সম্ভবত একটি গোষ্ঠী সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে আছেআমার ধারণা স্বাধীনতার পর সব কটি সরকারেরই এমন ঘাপটিওয়ালারা ছিলবঙ্গবন্ধু সরকারে যেমন ছিল মোশতাক গং তেমনি জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ও হাসিনা সরকারেও এরা ছিল এবং আছে বেশ সক্রিয়বঙ্গবন্ধু ও জিয়া হত্যাকান্ডের দায় কতিপয় বিপথগামী সামরিক অসিফারের ঘাড়ে চাপানো হলেও সকলেই মানবেন এর পেছনে রাজনৈতিক অপদেবতারা কাজ করেছিল সক্রিয় ও অতি গোপনীয়তার সাথেঅতীতের কথা বলে লেখার পরিধি না বাড়িয়ে সা¤প্রতিক ঘটনাবলীর দিকে নজর দেইহাসিনা সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ঝালকাঠীর কলেজ ছাত্র লিমনের ঘটনায় দায়ী র‌্যাব সদস্যদের শাস্তি দিলে বাহিনী হিসেবে র‌্যাবে সুনাম বাড়তো বই কমতো না, এ কথা তখনই  বলেছিঅতি সা¤প্রতিক বাংলা নববর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় নারী নির্যাতনের যে ঘটনা ঘটে গেল, আমার বিশ্বাস সরকার (বিশেষত সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনী) চাইলে দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে পারতোতা না করে কেউ কেউ দোষীদের রক্ষার কাজটিই করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়কেউবা বলেছেন- সে দিন এমন কোন ঘটনা ঘটে নিবিষয়টা শেষ পর্যন্ত হাস্যকর হয়ে গেছেএতে করে দায়ী ব্যক্তিদের সাহস আরো বেড়েছে এবং হয়তো এদরে এক সময়ে সামলানো অসম্ভব হয়ে পড়বেঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবী অনুসারে নির্দিষ্ট সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আজো প্রকাশ করা হয় নি, বরং অন্যান্য ক্যামেরার ফুটেজ থেকে পুরো দায় কথিত জঙ্গীবাদী বা মৌলবাদীদের কাজ বলে প্রচালনা চালানো হয়েছেআমি মনে করি এতে ক্ষতি হয়েছে সরকারেরইসেদিনে সেই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে একটি ছাত্র সংগঠন- বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ডিএমপি কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিতে গেলে পুলিশ যেভাবে অ্যাকশনে নেমেছে, তাতে মনে হয়েছে তারা কোন জঙ্গী সংগঠনের সাথে সংঘর্ষে লিপ্তঅথচ দেশের সকলেই জানে ছাত্র ইউনিয়ন দেশের সবগুলো ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সবচেয়ে সুশৃংখল এবং ভদ্রএক সময়ে এ সংগঠনকে বলা হতো লিপস্টিক পার্টিছাত্র ইউনিয়নকে ডিএমপি কমিশনার বরাবরে স্মারকলিপি দিতে দেয়া হলে কী ক্ষতি হতো পুলিশের? নিরস্ত্র ছাত্ররা পুলিশের সামনে এমন কি করতো যা পুলিশ বা দেশের জন্য ক্ষতিকর হতো? বরং যে ঘটনা ঘটানো হলো, তাতে গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা হলো এবং নারী নির্যাতনের প্রতিকার চাইতে গিয়ে প্রকাশ্যে পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হতে হলো নারীকেই; পুরুষরাও হয়েছে- সেটা অহরহ ঘটে বলে কেউ তেমন আমলে নেয় নাপ্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে প্রকাশ্যে  পুলিশের হাতে ভার্সিটির ছাত্রী নির্যাতন বা লাঞ্ছনার ছবি কী বার্তা দিচ্ছে আমাদের? মডারেট গণতান্ত্রিক বাংলাদশে সম্পর্কে কী বার্তা গেল বহির্বিশ্বে? তবে কি পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের সাথে বাংলাদেশের কোন তফাত নেই? যদিও এ ঘটনায় দায়ী এক পুলিশ বরখাস্ত হয়েছে; প্রশ্ন বরখাস্তকৃত ওই কনস্টবল বা ল্যান্স নায়েক কি একাই এ ঘটনার জন্য দায়ী? তার কমান্ডে থাকা উর্ধতন কর্মকর্তার কি কোন দায় নেই? খুশী হতে পারতাম যদি ওই স্কোয়াডে থাকা কমান্ডারের (পদ/পদবী জানা নেই বলে এমনটি বলছি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতোবাংলাদেশের পুলিশ কি কখনো গণতান্ত্রিক দেশের পুলিশ হবে না? বাংলা নববর্ষের নারী লাঞ্ছনার ঘটনা মানুষ ক্রমে ভুলে যাবে, ভুলে যাবে পুলিশের নারী নির্যাতনের ঘটনা

আমি মনে করি, সরকারের ভেতরে হয়তো বা কোন মহল সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য আগ-বাড়িয়ে এমন সব ঘটনার প্রেক্ষাপট তৈরী করছে, যা হবে সরকারের জন্য বুমেরাংতাই বলতে চাই সময় থাকতে সাধু সাবধান- সময় গেলে সাধন হবে না
১৩-০৫-২০১৫

নতুন করে ভাবতে হবে- পর্ব কুড়ি

কুড়িতম পর্ব

বর্ষবরণে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় এলাকায় ঘটে যাওয়া ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ফলাফল আসবে না, তবে সচেতনতা বাড়েবদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী হওয়া সত্তে¡ও এর আগে আমরা দেখেছি জাহাঙ্গীরনগরে সেঞ্চুরিয়ানদের১৯৭৩ সালের ঘটনা এ প্রজন্মের জানার কথা নয়নব্বই দশকের ডাকসু নির্বাচন শেষে বিজয় মিছিলের ঘটনা অনেকেরই মনে আছে বা থাকার কথাসকলের কাছে বাধন ঘটনা এখনো উজ্জ্বল·বাজার সৈকতে বিদেশী পর্যটকের স্ত্রীর ওপর হামলার ঘটনা কারো কারো হয়ত মনে আছেলক্ষ্য করুন, সব জায়গায় ক্ষমতাসীন দলের লোকজন এহেন অপকর্ম ঘটায়...এবারেও কি ব্যতিক্রম? না, তা বলার সুযাগ নেই১৯৭৩ সালের ঘটনাটা বাদ দিলে দেখবো সবগুলো ঘটনার সময় দেশের প্রধান ব্যক্তি নারীএসকল অঘটনপটয়সীদের পরিচয় ও শক্তি একটাই... ক্ষমতা....এদের রাজনৈতিক অভিভাবকরা কখনও কি এদের নিবৃত করেছে বা করতে চেয়েছে? সেঞ্চুরিয়ানদের কি বিচার হয়েছিল? যদি হত, তাহলে পরের ঘটনাগুলা ঘটত নাএকুশে বই মেলার ঘটনারও কোন বিচার হয় নি বা হতে দেয়া হয় নিকারণ হিসেবে ভাবা যায়, লাঠিয়ালদের লালন-পালনে তাদের রেহাই দেয়া হয় বা দিতে হয়আগের দিনের জমিদার বা সামন্ত প্রভুরা যেমন করে লাঠিয়াল পালন করতসমস্যা হলো, কেউ যদি এদের কথা সহস করে বলতে যায়, নন্দীর মত তার হাত ভাঙ্গবে, না ভাঙ্গলেও ভেঙ্গে দেয়া হবেকোটি টাকা খরচ করে সিসি ক্যামেরা বসাবেন, কাজের সময় সকলে ছি ছি করবে, কাজের কোন কাজ হবে না, এটাইতো বাস্তবতাপ্রক্টর পিসিতে গেম খেলবেন এমন একটা বড় আয়োজনের সময়, ভাগ্যিস তিনি নিরোর মত বাঁশি বাজাচ্ছিলেন নাঅবশ্য বাঁশি বাজালেও শোনা যেত না ভুভুজোলার কারণে
কথা বাড়িয়ে লাভ নেই, দাবী করছি:
- প্রক্টরের দায়িত্বে অবহেলার কারণে পদত্যাগ, না করলে বরখাস্ত
- কর্তব্যরত পুলিশদের কর্তব্যে অবহেরার কারণে শাস্তি প্রদান
- সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অপরধী সনাক্ত করে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা
সবশেষে: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কি কেবল সোনার ছেলেদের ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে আবারো ছাত্রলীগের অভিভাবক হিসেবে পদত্যাগ করবেন, না ওদের নিবৃত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন? ওদের লাগাম টেনে ধরুন না একটিবার, যাতে আরকেবার ওরা সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটাতে না পারে! আজ ক্ষমতায় বিএনপি থাকলেও আমি একথাই বলতাম তাদের নেতাকে

দেশটা সকলের, কারো একার নয়, কোন দলেরও নয়একথাটা মনে রাখলে গণতন্ত্র থাকবে, থাকবে সুন্দর বাংলাদেশ
১৭-০৪-২০১৫