একাদশ পর্ব
দশম জাতীয় সংসদের
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দেশের প্রধান বিরোধী দলের আন্দোলন বেগবান হয়েছে এবং
তারা তাদের পূর্ব ঘোষণা মোতাবেক লাগাতর অবরোধ কর্মসূচী পালন করছে। ফলে দেশের আম-জনতা বেশ কষ্টে আছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও এই আম-জনতাই প্রাণ দিচ্ছে। ক্ষতিটা ঐ পরিবারের সদস্যদের; প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের এতে কোন দায়-দায়িত্ব
আছে বলে মনে হয় না। ক্রমাগত সড়ক-রেল-নৌ
পথ অবরোধে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে; ভবিষ্যতে এ অবস্থা আরো মারাত্মক আকার ধারণ করবে। কেবল প্রত্যক্ষ অর্থনীতিই যে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বা আম-জনতা প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছে, তাই-ই নয়; অবরোধ প্রক্রিয়ার হাতিয়ার হিসেবে অকালে মৃত্যবরণ(!)
করতে হচ্ছে হাজার হাজার উদ্ভিদ শ্রেণীকে। অবশ্য
দেশের পরিবেশবাদীরা এখনো এবিষয়ে উচ্চকিত নন। যেমনটি
ঘটে ট্রান্সপিরেন্সী ইন্টারন্যাশনাল বা হিউম্যান রাইট ওয়াচ নামের আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে। উদ্ভিত
শ্রেণীর এই বলিদানে কেবলি প্রাকৃতিক ক্ষতি হচ্ছে তাই নয়, সামাজিক বনায়নের কারণে
বহু ভোক্তাশ্রেণীও আর্থিক ক্ষতির
সম্মুখিন হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি
প্রধানমন্ত্রী মুখ খুলেছেন। জানি না পরিবেশ
বাদীরা কবে নিদেনপক্ষে একটি বিবৃতি দিয়ে
উদ্ভিদ নিধন থেকে বিরত থাকার জন্য বিরোধী দলকে অনুরোধ জানাবেন। হরতাল অবরোধে শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার দেশের
রাজনৈতিক অঙ্গণে এক নতুন বিষয়; এর
থেকেও পরিত্রাণ পাওয়া দরকার। এবার দেখা যাক
বর্তমানে দেশে যে মন্ত্রী পরিষদ রয়েছে, তারা
কি করছে। সরকার বলছে এটি বহুদলীয়
সরকার,
সরকারের ভেতরের কেই বা বলছে এটি
নির্বাচন কালীন সরকার। বিরোধী দল বলছে এটি
অবৈধ সরকার। নাম যা-ই হোক না কেন, দেশে একটা সরকার রয়েছে এবং সরকারের পরমর্শ মতই
দেশের স্বাধীন নির্বাচন কমিশন আগামী ৫ জানুয়ারী দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে
যাচ্ছে,
যদিবা ইতোমধ্যে মোট আসন সংখ্যার
অর্ধেকেরও বেশী সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারী ভাবে নির্বাচিত হয়ে গেছেন। এটাও আমাদের দেশের একটি নতুন রেকর্ড। ইতোপূর্বে কোন সংসদ নির্বাচনে এত বেশী সংখ্যক
প্রার্থী নির্বাচন না করে প্রত্যক্ষভাবে
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হননি।
ইতোমধ্যে আলোচনা
শুরু হয়েছে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী
বলে ফেলেছেন, দশম সংসদ নিয়ে নয়- সমঝোতা
হলে একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলের সাথে আলোচনা হতে পারে। তবে কি ধরে নিতে হবে দশম সংসদও ১৯৮৮ এবং ১৯৯৫
সালের সংসদের মত ক্ষণস্থায়ী সংসদ হতে যাচ্ছে?
এমনি পরিস্থিতিতে
বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া ২৯ ডিসেম্বর 'মার্চ
ফর ডেমোক্রেসি' নামে ঢাকা অবরোধের ডাক
দিয়েছেন এবং সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করার আহ্বান জানিয়েছেন। দৃশ্যত দীর্ঘ সড়ক-রেল-নৌ পথ অবরোধের পর ঘোষিত
কর্মসূচী বিরোধী দলের পিঁছুটান বলে মনে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ডিএমপি বিএনপির ঢাকায় সমাবেশ
করার অনুমতি দেয়নি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে
সরকার বিএনপির এমন আয়োজনে অনুমতি নাও দিতে পারে। সেক্ষেত্রে আরো একটি সাংঘর্ষিক অবস্থার দিকেই দেশ ধাবিত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। সরকার যে করেই হোক সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করে
সরকার গঠন করতে বদ্ধপরিকর। বিরোধী বিএনপি
ও তার জোটবদ্ধ দলসমুহ এটা ঠেকাতে প্রস্তুত; সংঘর্ষের
এক পর্যায়ে তৃতীয় শক্তির ক্ষমতা
দখলের জন্য দুয়ে মিলে কোন পথ তৈরী করে দিচ্ছে কি না তা ভাববার বিষয় বটে। দেশের রাজনীতি এখন এমনিতে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের
হাতে নেই; এখন কি সেই অবস্থান
স্থায়িত্বলাভের দিকে এগুচ্ছে?
(চলবে)