শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৪

আগমীর কথা

আগমীর কথা
নুরুল্লাহ মাসুম


স্বজনের নীড়ে নিজেকে হারিয়ে খুঁজি
হাজারো জনতার ভীড়ে
বাকী জীবনের হালখাতা খুলি
কতদিন রবো জীবন নদীর তীরে

পতাকার রঙ বদল দেখিয়া
জনতার জয়গানের সূরে
জবনের গতি বদল ছাড়ি, ভাবি
কবে চলে যাব দূরে, বহু দূরে

রঙিন নয়তো জীবনাচার ক্রমাগত
প্রকৃতির নয়তো রঙ বদল অহরহ
জীবন তবু বদল হয় না, রহে তথাগত
চলতেই হবে পুরানো পথে; হতে পরাহত

দিন ফুরাবে জানি, চিরন্তন বাণী
রঙের ভেলায় ভাসতে হবে- কেবলি কল্পনায়
প্রকৃতি রইবে চিরন্তন- ফেলিয়া পেছনে জানি
চলে যাব একদিন, ফেলে সকলকে জল্পনায়।

কালশী, মিরপুর, ঢাকা
১২ ০২৩১ নভেম্বর ২০১৩ খৃষ্টাব্দ।

নতুন করে ভাবতে হবে - দশম পর্ব

দশম পর্ব


আমাদের দেশে রানা প্লাজা আর তাজরিন গর্মেন্টস দুর্ঘটনায় সরকারসহ কারো কোন দায়িত্ব আছে বলে মনে হয় নাএমনকি সড়ক বা রেল দুর্ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কারো কোন দায়-দায়িত্ব নেইপার্শবর্তী দেশ ভারতে রেল দুর্ঘটনায় রেলমন্ত্রী পদত্যাগ করেন, আমাদের মন্ত্রীদের ভাবখানা এমন, তারা তো আর রেল চালান নাসাম্প্রতিককালে বিরোধী দলের অসহযোগ আন্দোলনের অবরোধ বা হরতাল চলাকালে এত মানুষের জীবন ঝরে গেল, সরকার বিরোধীদের দায়ী করেই খালাশকে দায়িত্ব নেবে এই অসহায় মানুষগুলোর- যারা বলির পাঠা হচ্ছেন রাজনীতির কূটকৌশলের কাছে? কে দেখবে স্বজন হারানো পরিবারগুলোর সদস্যদের? এর কোন উত্তর নেইআমাদের দায়িত্বশীল মহলের কাছে মনে হতে পারে লাটভিয়া প্রধানমন্ত্রীর পুরো কেবিনেটসহ পদত্যাগের জন্য যে ঘটনা দায়ী, সেই ভবনটা প্রধানমন্ত্রী বা তার কেবিনেটের কেউ ভেঙ্গেছে বা কেউ গিয়ে ঐ ভবনের কোন পিলার নাড়াচাড়া করেছিল- নইলে তিনি পদত্যাগ করবেন কেন?
ফিরে আসি আমাদের দেশের রাজনীতিতেপাকিস্তান আমলে আওয়ামী লীগেই নিয়ম ছিল, দলের কেউ সরকারে থাকলে দলের দায়িত্ব ত্যাগ করবেনসে নিয়ম মেনেই শেখ মুজিবুর রহমান (তখনও বঙ্গবন্ধু হন নি তিনি) প্রাদেশিক মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করে দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন পঞ্চাশের দশকেনিয়ম মেনে দলের কাউন্সিল হতো- কাউন্সিলরগণ ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করতেনদেশ স্বাধীন হবার পর সব বদলে গেল- আওয়ামী লীগসহ কোন দলেই এখন গণতন্ত্র চর্চা হয় না; দলের প্রধান যা বলেন সেটাই আইনলোক দেখানো বা নিয়ম রক্ষার জন্য কাউন্সিল হলেও সেখানে নির্বাচন হয় নাহয় বটে দলীয় প্রধানের নির্বাচন, যেখানে প্রার্থী থাকেন একজনইএর পরে যা ঘটে, পুরো কমিটি গঠন করার ক্ষমতা দেয়া হয় সেই নেতাকেহায়রে গণতন্ত্র! দলের একজন সদস্য নিজ দলের নেতা নির্বাচনে ভুমিকা রাখতে পারে না, কেউ যদি কথা বলতে চায়, সে হয়ে যায় সংষ্কারপন্থী! এমন দল বা দলগুলোর কাছে দেশে গণতন্ত্র চর্চা হবে- এমন আশা করাটাই হয়তো বোকামী
গণতান্ত্রিক দল আওয়ামী লীগই সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদ যোগ করে সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করার পথ রম্নদ্ধ করে দিয়েছেএই অনুচ্ছেদের কারণে কোন সংসদ সদস্যই দলের সিদ্ধান্ত্মের বাইরে কথা বলতে পারেন নানিজ নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের কথাও কি তারা বলতে পারেন? গণতন্ত্রের সুতিকাগার সংসদের ভেতরের অবস্থা যখন এই, তখর দেশের সাধারণ মানুষের অবস্থা কেমন তা সহজেই অনুমান করা যায়
শুধু আওয়ামী লীগের কথা বলছি কেন, বিএনপি বা জাতীয় পার্টির মত দলেও কি আভ্যন্ত্মরীণ গণতন্ত্র আছে? আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যেন প্রইভেট লিমিটেড কোম্পানী হয়ে গেছেদলীয় প্রধানের পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়রাই কেবল বোর্ড অব ডিরেক্টরের সদস্য হবেন- সেটা কেন্দ্রীয় কমিটি বা স্ট্যান্ডিং কমিটি বা প্রেসিডিয়াম বা সেক্রেটারিয়েট- যে নামেই হোক না কেনআবার দলীয় প্রধানের ইচ্ছাতেই তাদের বিদায় নিতে হবেসাধারণ কর্মীদের কাজ হলো সারক্ষণ নেতাদের স্তুতি করা এবং মিছিল মিটিং এ হাজির হয়ে প্রয়োজনে দলের জন্য জীবন দান করে গণতন্ত্রের পতাকা সমুন্নত রাখা! এমনও দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নিজেদের নেতৃত্ব নির্বাচনের সামান্য অধিকারটুকু নেই, সেখানেও (ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা, পৌরসভা কমিটিতে) কেন্দ্রীয় নেতাদের পছন্দের মানুষদের ধরে এনে বসানো হয়ফলে সকল দলেই এমন সব স্থানীয় কমিটি রয়েছে, যেখানে ঐ কমিটির সভাপতি রাজধানীতে থেকে স্বীয় পান্ডাদের দিয়ে কমিটির কাজকর্ম চালিয়ে থাকেন
(চলবে)