বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৩
নতুন করে ভাবতে হবে
নতুন করে ভাবতে হবে
নুরুল্লাহ মাসুম
প্রথম পর্ব
ভাবনার শেষ কোথায়? প্রতিনিয়ত আমাদের
নতুন করে ভাবতে হয়, শিখতে
হয়- উদ্যোগ নিতে হয়; ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ
এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য। আমরা অবশ্য সকলেই অন্যকে বলতে অভ্যস্থ- নতুন কিছু
কর। বাঙালীয়ানার সেই ধারা বজায় রেখে আমিও না হয় তেমনি কিছু বলি; দেখি না যদি কিছু হয়, কোন কাজে লাগে।
শুরম্নতেই বলে নেয়া ভাল, আমি করতে পারি না
বলেই অন্যকে উপদেশ দেই- এটাও বাঙালীর চিরায়ত অভ্যেস। তবু বলে যদি কিছুটা শান্তি মেলে, দোষ
কি!
দীর্ঘ দুই শতকের বৃটিশ
বিরোধী সংগ্রামে বাঙালীর অবদান ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বেশী; সে কারণেই বলা হয়ে
থাকে- বাঙালীর অত্যাচারে দখলদার বৃটিশরা কলিকাতা থেকে রাজধারী দিল্লীতে স্থানান্তর করেছিল। সেই বৃটিশ যখন ভারত ছেড়ে চলে যায়, দ্বি-জাতি তত্ত্বের
অদ্ভূত এক সমীকরণে প্রায় দেড় হাজার মাইল ব্যবধানে ভিন্ন সংস্কৃতির দু'টি ভুখন্ডকে নিয়ে
তৈরী করে দিয়ে যায় পাকিস্ত্মান নামের এক অদ্ভুতুরে রাষ্ট্রের। পাকিস্ত্মান সৃষ্টির
পর থেকেই দিবালোকের মত পরিস্কার হতে থাকে মাউন্ট ব্যাটেন, জিন্না ও নেহেরম্নর
ফরমুলায় তৈরী পাকিস্ত্মান বেশী দিন টিকবে না। আমি এখানে পাকিস্তান আমলে বাঙালীর
স্বাধীকার আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করে পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটাবো না।
দীর্ঘ চব্বিশ বছরের আন্দোলন
সংগ্রাম শেষে এক রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যখন ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করলো; বাঙালী পেল একটি
স্বাধীন ভূখন্ড। তৈরী হল বৃটিশ মডেলের সংবিধান, যা '৭২-এর
সংবিধান নামে বর্তমান প্রজন্মের কাছে খুবই পরিচিত। অবশ্য আমরা সেই সংবিধান ধরে
রাখতে পারিনি। বহুবার অস্ত্রপচার করা হয়েছে সেই সংবিধানে- কখনও নির্বাচিত সরকারের
হাতে; কখনও
সামরিক স্বৈরশাসকদের হাতে। যদিও বলা হয়ে থাকে '৭২ এর সংবিধান ছিল সে সময়ের সবচেয়ে সুন্দরতম
সংবিধান; এখন
বলা হয় ওটাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে
ভাল সংবিধান।
সংবিধানটি ছিল সংসদীয়
গণতন্ত্রের সংবিধান। নির্বাচিত সার্বভৌম সংসদ হবে দেশের প্রধান চালিকা শক্তি; মন্ত্রিপরিষদ হবে
সংসদের কাছে দায়বদ্ধ। বৃটিশ সংসদীয় গণতন্ত্র তেমনটাই; যদিও সেখানে এখনও
রাজতন্ত্র বিদ্যমান, তবে
তা হলো সংসদ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। তাই বৃটিশ গণতন্ত্রকে বলা হয় নিয়মতান্ত্রিক
রাজতন্ত্র।
বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের
ধারায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যখন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন, তাঁর বিশাল
ব্যক্তিত্ব ও প্রশ্নাতীত নেতৃত্বের কারণে সেই সংসদ কখনও মন্ত্রিপরিষদকে সংসদের
কাছে দায়বদ্ধ করতে পারেনি। স্বাধীনতার খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর হাতে
সংসদীয় পদ্ধতির সরকার বিলুপ্ত হয়ে প্রতিষ্ঠা পায় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি
এবং গঠিত হয় জাতীয় দল-বাকশাল। সে অন্য ইতিহাস; ওটা আমার আলোচ্য বিষয় নয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সকল সদস্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তে নিহত হলে
দেশের শাসনতান্ত্রিক ধারা প্রবাহিত হয় অন্য ধারায়।
(চলবে)
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)