শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৩

নতুন করে ভাবতে হবে - নবম পর্ব

নবম পর্ব

দেশের আম-জনতা ক্রমান্বয়ে "কাঁঠাল-জনতা" হয়ে উঠতে পারেকথাটা রসবোধ থেকেই বলছি, আম মিষ্টি বলে সকলেই সেটি খেতে পছন্দ করেকাঁঠাল মিষ্টি হলেও এটির রয়েছে আঠালো স্বভাবএকবার ঠোঁটে (বিশেষত গোঁফে) লাগলে ছাড়ানো বেশ কষ্টসাধ্যআম-জনতাকে যতটা সহজে ধুয়ে-মুছে ফেলা যায়, কাঁঠাল-জনতাকে ততটা সহযে ধুয়ে-মুছে ফেলা যাবে কিনা তা রাজনৈতিক দলগুলোর ভাববার সময় এসেছে বলেই মনে হয়
সংগত কারণেই দেশের মানুষ দেশে দ্বিদলীয় শাসন ব্যবস্থার বিকল্প ভাবতে চাইছে- যদিও অদূর ভবিষ্যতে তেমনটি হওয়ার কোন সম্ভাবনা বা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে নাভুলে গেলে চলবে না, পাকিস্তান আন্দোলনের মূল শক্তি মুসলিম লীগের আজ আর কোন অস্ত্মিত্ব নেইবাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলনের মূল শক্তি আওয়ামী লীগকে বিষয়টি মনে রেখেই এগুতে হবেআওয়ামী লীগে আজ মস্কোপন্থী সাবেক কম্যুনিস্টদের সরব উপস্থিতি পক্ষান্তরে বিএনপিতে চীনপন্থী কম্যুনিস্টদের সংখ্যাধিক্য রয়েছেব্যতিক্রম দীলিপ বড়ুয়া; যিনি চীনপন্থী হয়েও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে শক্ত জায়গা করে নিয়েছেন শুরু থেকেইঅনেকে বলে থাকেন, আওয়ামী লীগে প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের তেমন কদর নেই এখন আরদাপটের সাথে এই দলে বিরাজ করছে ব্যবসায়ীরা, যাদের রাজনৈতিক আদর্শ বলে কিছু নেই
ইচ্ছে ছিল দেশের রাজনীতিকদের নিয়ে পর্যায়ক্রমিক আলোচনা করবোপ্রধান বিরোধী দলের সাথে কোনও ধরণের সমঝোতা ছাড়াই নির্বাচন কমিশন সরকারের নির্দেশিত পথ ধরে নির্বচনী তফসিল ঘোষণা করে দিল; যদিও সরকার সমর্থকরাই এত অল্প সময় দিয়ে তফসিল ঘোষণায় সন্তুষ্ট নয়তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে বিরোধী জোটের টানা অবরোধের নামে চল দেশব্যপী ধংসযজ্ঞ এবং মানুষ হত্যাঠিক তে এমনি সময়ে নজরে এলা- লাটভিয়ায় একটি সুপারমার্কেট ধস বিপর্যয়কে কেন্দ্র করে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ভালদিস ডোওমব্রোওসকিস পদত্যাগ করেছেনফলে সে দেশের ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ঘটলোগত বৃহস্পতিবার সুপারমার্কেট ধসের ঘটনায় অন্তত ৫৪ জন নিহত হয়েছিললাটভিয়ায়র প্রেসিডেন্ট অপ্রন্দ্রস ব্যারজিনস এর সঙ্গে বৈঠককালে পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রীপ্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, ওই ট্র্যাজেডির রাজনৈতিক দায় কাঁধে নিয়ে আমি পদত্যাগ করছিউদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম একটি সরকার এ মুহূর্তে লাটভিয়ার প্রয়োজন'
লাটভিয়া সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভূক্ত একটি দেশদীর্ঘদিন তারা সমাজতান্ত্রিক একনায়কত্ব দেখেছে- সহ্য করেছে স্ট্যালিনের কঠোর শাসনগর্বচেভের গ্লস্তনস্ত ও প্রেস্ত্রেইকার সুবাদে স্বাধীনতা লাভ করে নবীন গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেসেখানকার প্রধানমন্ত্রী একটি ভবন ধসের কারণে পদত্যাগ করেন- আমাদের রাজনীতিকদের কি শেখার মত কিছু আছে এটা দেখে?
(চলবে)

বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩

নতুন করে ভাবতে হবে - অষ্টম পর্ব

অষ্টম পর্ব

পরর্তীতে ক্ষমতায় এসে সেই হরতালের কারণে দুর্বল অর্থনীতির ভার বইতে হয়েছে আওয়ামী লীগকেই আওয়ামী লীগ সে কথা বহুদিন বলেছে- ২৪ বছরের জঞ্জাল সরতে হয়েছে তাদের এরশাদ আমলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের সহযোগীদের নিয়ে বহু আন্দোলন-হরতাল করেছে স্মরণ করতে হয়, এরশাদের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের শুরম্নটা হয়েছিল "মজিদ খানের শিক্ষা নীতি" নিয়ে বিরোধিতার মধ্য দিয়ে সাদা চোখে দেখলে দেখতে হয়, দুই বছরের ডিগ্রী কোর্স তিন বছরের হবে, প্রাথমিক শিক্ষ হবে আট বছর মেয়াদী, শিক্ষার ব্যয় বাড়বে- ইত্যাকার বিষয় ছিল মজিদ খানের শিক্ষা নীতির মধ্যে উলেস্নখ্য, মজিদ খান ছিলেন এরশাদ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রী সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ঝরেছে বহু প্রাণ দেখেছি লাগাতর হরতাল; এরশাদও চেষ্টা করেছেন সেই আন্দোলন দমনে অবশেষে নব্বইয়ে আন্দোলনের চূড়ান্ত্ম পর্যায়ে এরশাদের বিদায় এবং বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং বিএনপির ক্ষমতায় আরোহন কি হলো শেষ পর্যন্ত্ম! এখনতো আমাদের সন্ত্মানরা তিন বছরের ডিগ্রী কোর্সই পড়ছে, অনার্স চার বছরের এবং শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ করেছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ- দুই দলের সরকারই তাহলে মজিদ খানের কি দোষ ছিল?  কেনই বা জাফর-জয়নাল-দীপালী সাহা, জাহেদ, নূর হোসেন ও ডা. মিলনকে জীবন দিতে হলো? এসকল প্রশের উত্তর কে দেবে? প্রসঙ্গত আরেকটি কথা পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ছিলেন এরশাদ সরকারেরও অর্থমন্ত্রী তখন অবশ্য তাকে সবাই জানত এ. এম. এ. মুহিত নামে তিনি সে সময়ে কানাডা গিয়ে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন তাহলে আমাদের মত সাধারণ পাবলিক (আম-জনতা)-কে বলতেই হয়, মুহিত সাহেব এরশাদ সরকারে থেকে শিক্ষার যে বাণিজ্যিকীকরণ করতে পারেননি, আওয়ামী লীগ সরকারে থেকে একজন সাবেক তুখোর কম্যুনিস্টকে শিক্ষা মন্ত্রী হিসেবে সামনে রেখে সেই আরাধ্য সাধনে সমর্থ হয়েছেন! পাঠকের এ কথাও নিশ্চয়ই স্মরণ আছে বর্তমানশিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন বাংলাদেশের কম্যুনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-র সাধারণ সম্পাদক
(চলবে)



মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৩

নতুন করে ভাবতে হবে - সপ্তম পর্ব

সপ্তম পর্ব


অথবা নির্বাচন করার মত অবস্থায় নেই এমন বিজ্ঞ ব্যক্তিকেও মনোনীত করে সংসদে নেয়া যেত এভাবে সংসদে আসা সদস্যগণ নারী বা পুরম্নষ যে কেউ হতে পারেন; অর্থাৎ দল যাকে ভাল মনে করবে তাকেই সংসদে আনবে কেবল নারী সদস্য মনোনয়ন দেয়া বধ্যবাধকতার জালে আটকে থাকতে হবে না জলন্ত্ম উদাহরণ দেই, এমন পদ্ধতি থাকলে বর্তমান আইন মন্ত্রীকে সংসদ সদস্য না হয়ে সংসদে বসতে হত না; আওয়ামী লীগ তাকে সংসদ সদস্য করেই সংসদে বসাতে পারত দেশব্যাপী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট যদি ২ শতাংশ বা তার গুনিতক হয় সেক্ষেত্রে নির্বাচিন কমিশন তাদের একত্র করে তাদের মতামতের ভিত্তিতে এবং প্রয়োজনে ভোটাভুটির করে (যাদের জামানত বাতিল হয়নি এমন প্রার্থীদের মধ্য থেকে) সংসদ সদস্য নির্বাচন করতে পারে সংরক্ষিত আসনের জন্য এতে করে সংসদে আমরা পেতে পারি দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তি
অন্য প্রসঙ্গে যাওয়া যাক বর্তমানে দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে দৃশ্যমান অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এবং সরকার ও বিরোধী দল একে অপরকে সৃষ্ট অবস্থার জন্য দায়ী করছে; প্রকৃতার্থে এর জন্য দায়ী কে- তা এখন স্পষ্ট করে বলা শক্ত বিরোধী দল সরকারকে দায়ী করে বলছে, সরকার হাইকোর্টের এ সংক্রান্ত রায়ের পুরোটা অনুসরণ করেনি কথাটা একেবারে মিথ্যে নয় সরকার এতটা তাড়াহুড়া না করলেও পারতো আবার সরকার বলছে, বিরোধী দল সংবিধান মানছে না- এটাও সত্য তবে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের জন্য সরকার কেন তাড়াহুড়া করেছিল- তা বোধগম্য নয় সংসদে তাদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে রয়ে-সয়ে সংবিধান সংশোধন করলে কি এমন ক্ষতি হত তা বোধগম্য নয় হাইকোর্টের এ সংক্রান্ত্ম পূর্ণাঙ্গ রায়ের কটি পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলে খুব বেশী একটা যে ক্ষতি হতো, তাতো নয় হতে সময়ও ছিল এবং হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি হাতে নিয়ে সংসদে বিল আনা যেত তত্ত্ববধায়ক পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে নেতিবাচক মন্ত্মব্য থাকলেও আগামী আরো দু'টি নির্বাচন তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে করার কথা বলে বিচার বিভাগকে ঐ পদ্ধতিতে না জড়ানোর কথা বলা হয়েছে সরকার সেটি মানতে পারত বা নাও মানতে পারতো তাছাড়া সংসদ যেহেতু সার্বভৌম, সংসদ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধাই বহাল হত এতে করে বিরোধী দলের আন্দোল করার পথ কিছুটা হলেও দুরহ হত কার পরামর্শে সরকার এমন তাড়াহুড়া করেছে, তা হয়তো জানা যাবে ত্রিশ বছর পরে, বা আরো পরে এখন আমাদের অনুমান নির্ভর কোন মন্তব্য না করাই শ্রেয়
সরকারের এই দুর্বল সিদ্ধান্তটা  ভিন্ন কোন মস্তিস্ক থেকে এসে থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে সেই অদৃশ্য শক্তি দেশে স্থিতিশীলতা চায় না তাদের উদ্দেশ্য হয়তো ভিন্ন রকমের এ কথা সকলেই জানেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ভাগ্য নির্ধারিত হয় বড় বড় আলীসান হোটেলে - যাকে বলা যায় প্রাসাদ ষড়যন্ত্র বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো তাদের স্বার্থে বাংলাদেশ, নেপাল, নাইজেরিয়া বা অধুনা মালদ্বীপের মত সম্ভাবনাময় দেশগুলোয় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে থাকে এজন্য তারা ভর করে রাজনৈতিক দলগুলোর উপর কখনোবা তারা ভিন্ন পথেও এগোয় ওয়ান-ইলেভেন নিয়ে যেমন বিশেষ একটি সংস্থার নাম বরাবর সামনে এসেছে, তেমনি এবারেও কোন বিশেষ সংস্থা কাজ করছে কি না, তা কে জানে!
আন্দোলনের নামে ক্রমাগত হরতাল যে দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়, তা সকলেই বোঝেন বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগও দীর্ঘ মেয়াদে হরতাল করেছে
(চলবে)

সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৩

নতুন করে ভাবতে হবে


ষষ্ঠ পর্ব

তবু সংসদ সদস্যগণ নির্বাচিত নিজ নিজ এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচনে মোট প্রোপ্ত ভোটের অনুপাতও সংসদে আসন সংখ্যা নির্ধারণে ভূমিকা রাখে না ১৯৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কয়েকটি সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলো প্রাপ্ত ভোট ও প্রাপ্ত আসন সংখ্যা এবং সেই সাথে যে সকল দল কোন সংসদে একটিও আসন পায়নি তাদের প্রাপ্ত ভোটে সংখ্যার তুলনামূলক পরিসংখ্যান দেখলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে
১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ ৭৩.৬৬ শতাশ ভোট পেয়ে আসন পায় ২৭৬ টি অন্য দিকে ন্যাপ মোজাফ্‌ফর ৮.২৯ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ২টি এবং জাসদ ৬.৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ১টি ন্যাপ ভাসানী ৫.২ শতাংশ ভোট পেলেও সংসদে কোন আসন পায়নি
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩৭.৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ১৪৬টি বিএনপি ৩৩.৬০ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ১১৬টি জাতীয় পার্টি ১৬.৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ৩২ টি জাসদ (রব) ০.২৩ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন লাভ করে ১টি অন্যদিকে জামায়াতে ইসামী ৮.৬১ শতাংশ ভোট পেয়েও আসন পায় ৩ টি এ যেন ঠিক ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ে দ্বিতীয় বিভাগ.শ্রেণী অর্জন করার মত ফলাফল
বর্তমান সংবিধান অনুসারে সংরক্ষিত ৫০টি আসন দলগুলোর মোট প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে বরাদ্দ দেয়া হলে দলগুলো কিভাবে উপকৃত হবে তা দেখবো এবারে ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোর মোট প্রাপ্ত ভোটের খতিয়ান:
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪৮.০৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ২৩০টি বিএনপি ৩২.৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ৩০টি জাতীয় পার্টি ৭.০৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ২৭ টি জাসদ ০.৭২ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন লাভ করে ৩টি অন্যদিকে জামায়াতে ইসামী ৪.৭০ শতাংশ ভোট পেয়েও আসন পায় মাত্র ২টি পক্ষান্তরে ০.৩৭ শতাংশ ভোট পেয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি আসন পায় ২টি
২.৯৪ শতাংশ ভোট পায় ১৫১ জন স্বতন্ত্রপ্রার্থী এবং এর মধ্যে নির্বাচিত হন ৪ জন সংসদে প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে সংরক্ষিত নারী আসন (আসন ছিল ৪৫টি) বন্টনের ফলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩৬টি আসন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ৫টি আসন, জাতীয় পার্টি ৪টি আসন লাভ করে এমতাবস্থায় সংরক্ষি ৪৫ আসন যদি দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে বন্ট করা হত (২.২ শতাংশ ভোট সমান ১টি আসন- এই হিসেবে) তাহলে আওয়মী লীগ পেত ২১টি, বিএনপি পেত ১৫ টি জাতীয় পার্টি পেত ৩টি আসন এ ব্যবস্থায় এদের মধ্যে নারী ও পুরম্নষ উভয় সদস্য থাকতে পারতেন

সংরক্ষি ৫০ টি আসনের জন্য দুই শতাংশ করে ভোটের বিপরীতে একটি করে আসন বরাদ্দের ব্যবস্থা নেয়া হলে সংসদে আসন পাওয়া দল গুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ পেত ২৪টি, বিএনপি পেত ১৬টি, জাতীয় পার্টি পেত ৩টি, জামাত ২টি এবং অন্যান্য ছোট ছোট দল মিলে পেত ৪টি আসন যে সকল দলের কোন সদস্য নির্বাচনে জয়লাভ করেনি, তাদের মধ্য থেকেও সংসদে আসতে পারত অন্ত্মত ১ জন {উলেস্নখ্য ২.২৫ শতাংশ পেয়ে এইসব ছোট ছোট দলের ৭৭২ জন প্রার্থীর কেউই নির্বাচিত হতে পারেননি} এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে লাভ হত এভাবে- কোন দলের কোন এক প্রভাশালী সদস্য দল যাকে সংসদে চাইলেও তিনি নির্বাচিত হতে পারেননি তাকে এ পদ্ধতিতে সংসদে নেয়া সম্ভব হত
(চলবে)

বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৩

নতুন করে ভাবতে হবে

নতুন করে ভাবতে হবে

নুরুল্লাহ মাসুম

পঞ্চম পর্ব

আওয়ামী লীগ উপজেলা পদ্ধতি বাস্তবায়নের কথা বললেও আজো তা বাস্তবায়ন করেনি অথচ, আমার মনে হয় শক্তিশালী উপজেলা/জেলা পরিষদ বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশের মানুষের রাজধানীমূখী হওয়ার প্রবণতা কমে যেত রাজধানী ঢাকার ওপর চাপ কমত, আর্থিকভাবে দেশ লাভবান হত এখনও দেশে উপজেলা পরিষদ রয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্যদের ক্ষমতার টানাপোড়নে বহু এলাকার উন্নয়ন কার্য ব্যহত হচ্ছে- এমন সংবাদ প্রতিনিয়ত সংবাদপত্রে দেখা যায় সংসদ সদস্যগণ যদি কেবল আইন প্রণয়ন নিয়েই থাকতেন এবং স্থানীয় সরকারকে স্থানীয় উন্নয়ন কাজ করতে দিতেন নির্বিঘ্নে, তাহলে দেশ ও জনগণ উপকৃত হত সংসদ সদস্যগণ অবশ্য বলবেন, এলাকার উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্ত না থাকলে আবারো জনতার কাছে কি নিয়ে যাবেন ভোট চাইতে? খাটি সত্য কথা তবে সংসদ সদস্যগণ যদি তাঁদের মূল কাজ- আইন প্রণয়ন বাদ দিয়ে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত্ম থাকেন; তবে সংসদে এমন আইন পাশ হবে যা কিনা আমলাদের তৈরী করা- যা কখনও কখনও নিজের দল ও দেশের স্বার্থে পরিপন্থী হতে পারে অথবা হতে পারে অসম্পূর্ণ এক আইন গত ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ের পর দেখা গেল আইনটি সম্পূর্ণ নয় এবং সে কারণেই সুষ্টি হল গণজাগরণ মঞ্চ- নতুন আইন করার দাবী নিয়ে আইনটি সংশোধিতও হল আমার তো মনে হয়, সংসদ সদস্যগণ আইনটি পাশ করার আগে ভাল করে দেখলে এত অল্প ব্যবধানে আইনটি সংশোধন করার দরকার হত না; সৃষ্টি হত না গণজাগরণ মঞ্চের এসবই আমাদের সাদা চোখে দেখা বিষয়; এর অন্ত্মর্নিহিত অন্য কোন বিষয় আছে কিনা, তা আমাদের জানা নেই

১৯৭২ সালের সংবিধানে সংসদে সমাজে অনগ্রসর গোষ্ঠী হিসেবে নারীদের জন্য ১০টি সংরক্ষিত আসন রাখা হয়েছিল পরে তা বাড়িয়ে ১৫, ৩০ এবং সবশেষে ৫০টিতে উন্নীত করা হয় বর্তমানে দেশের প্রধান প্রধান সবগুলো পদে আসীন নারীরা পুরুষদের সাথে সরাসরি নির্বাচন করে বহু নারী সংসদে স্থান করে নিয়েছেন এখন কি নারীদের জন্য আর সংরক্ষিত আসনের প্রয়োজন আছে? আমি মনে করি - প্রয়োজন নেই বরং এই ৫০টি আসন সংরক্ষণ করা দরকার সংখ্যানুপাতে প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোর জন্য বর্তমানে সংসদে প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন বন্টন করা হয় যেহেতু আসনগুলো সাংবিধানিকভাবে নারীদের জন্য, তাই সেখানে পুরম্নষদের মনোনীত করার সুযোগ নেই আমি মনে করি ৫০টি সংরক্ষিত আসন ঠিক রেখে সেগুলোয় যদি নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোর সারা দেশে প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার হিসেব করে বন্টনের সুযোগ দেয়া হয়, তাতে দলগুলো যেমন লাভবান হবে; তেমনি দেশও উপকৃত হবে একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক: বর্তমান নিয়মে ৩০০ আসনে নির্বাচন হলো আসন ভিত্তিতে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা জয় লাভ করলেন যেহেতু সারা দেশের সবগুলো আসনের ভোটা সংখ্যা সমান নয়, সেহেতু কোন আসনের পরাজিত ব্যক্তির চেয়ে কম ভোট পেয়েও অন্য আসনের এক প্রার্থী নির্বাচিত বলে ঘোষিত হতে পারে তুল্যমান উদাহরণ- একসময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পাশ করতে হলে ৪৫০ নম্বর পেতে হত; সেই সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পাশের জন্য প্রয়োজন ছল ৪০০ নম্বর ফলটা হলো এমন, ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয় থেকে কোন ছাত্র ৪৪৯ নম্বর পেয়ে পেল তৃতীয় শ্রেণী, অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪০১ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় বিভাগ বা শ্রেণী সংসদ নির্বাচনেও এমন ঘটনা ঘটছে
(চলবে)

রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৩

নতুন করে ভাবতে হবে

নতুন করে ভাবতে হবে


নুরুল্লাহ মাসুম

চতুর্থ পর্ব

এবারে বলতে চাই, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রায়শঃই বলা হয়ে থাকে ১৯৭২ সালের সংবিধান দেশের সেরা সংবিধান সেটি করা হয়েছিল বৃটেনের গণতন্ত্রের ধাঁচে বা বলা যেতে পারে পশ্চিমা গণতন্ত্রের ধাঁচে তৈরী সেই সংবিধান তবে কোন কালেই বৃটেন বা পশ্চিমা ধাঁচে আমাদের দেশে সংসদ চলেনি বা চলতে দেয়া হয়নি রাজনৈতিক বিশেস্নষকরা বলে থাকেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের থেকেও বেশী ক্ষমতাবান কথাটা একে বারে উড়িয়ে দেবার মত নয় দেখা যাক আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কতটুকু সংসদে সংখা গরিষ্ঠ দলের প্রধান যিনি তিনিই হন দেশের প্রধান মন্ত্রী সুতরাং সংসদে সংখ্যা গরিষ্ঠ দলের সভাপতি বা প্রধান, সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের 'সংসদীয় পার্টি'র প্রধান বা সংসদ নেতা, প্রধানমন্ত্রী তথা সরকার প্রধান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী {আরো কয়েকটি মন্ত্রণালয়তো থাকছেই) এবং 'সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ' এর প্রধান রূপে অঘোষিত সামরিক প্রধান (যদিও রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন সাংবিধানিকভাবে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধনায়ক) এক ব্যাক্তির হাতে যখন এতগুলো ক্ষমতা থাকে, তখন কেনইবা পুরো দল বা সরকার তাঁর আজ্ঞাবহ হবে না? যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে একজন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নিয়োগ দিতে হয় এবং সেই নিয়োগ পার্লামেন্টে অনুমোদ করিয়ে নিতে হয় আমাদের দেশে একবার যিনি প্রধানমন্ত্রী হন, তিনি স্বীয় ইচ্ছেমত মন্ত্রী নিয়োগ দিয়ে থাকেন; সংসদে তাদের নিয়োগ অনুমোদন করাতে হয় না এমনকি প্রধান মন্ত্রী নিজের পছন্দের মানুষকে উপদেষ্টা পদে বসিয়ে মন্ত্রীদের ওপরে খবরদারী করার পথ সুগম করে দেন এতে মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট ঐ মন্ত্রীকে বিশ্বাস করতে পারছেন না
টেকেনোক্র্যাট মন্ত্রী নিয়োগের বিধান করেছিলেন (যতদূর মনে পড়ে) প্রেসিডেন্ট জিয়া তিনি অবশ্য মন্ত্রিপরিষদের মোট সংখ্যার দশ শতাংশ পর্যন্ত্ম টেকেনোক্র্যাট মন্ত্রী নিয়োগের বিধান করেছিলেন ভারতে সংসদ সদস্য নন এমন মন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হলে তাদের অবশ্য ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে টেকেনোক্র্যাট মন্ত্রীরা অবশ্য সংসদে ভোটাভুটিতে অংশ নিতে পারে না- এটা ভাল দিক তবে আরো ভাল হত, যদি টেকেনোক্র্যাট মন্ত্রীরা সংসদে না যেতেন সরকারের কাজের সুবিধার জন্য হয়ত কখনও কখনও টেকেনোক্র্যাট মন্ত্রীর দরকার হয়, তবে তার সংসদে না যাওয়াই ভাল- কেননা সংসদ হচ্ছে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদে জন্য টেকেনোক্র্যাট মন্ত্রীর দপ্তরের জন্য সংসদে অন্য কোন মন্ত্রী দায়িত্ব পালন করতে পারেন
পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (তখনও তিনি বঙ্গবন্ধু হননি) দলীয় দায়িত্ব পালনের জন্য মন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন এখনও কি এমনটি হতে পারে না? যিনি মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী হবেন, তিনি দলের কোন পদে থাকবেন না ভারতে সংসদ নেতা সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হননি, সেখানে কি সংসদে কংগ্রেসের আধিপত্য নেই? বৃটেনের হাউস অব কমনস এ 'লিডার অব দ্য হাউস' এবং প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তি অধিষ্ঠিত হন না সেখানে কি সরকার চলছে না? আমাদের দেশে কি একই ব্যক্তির ৫/৬টি পদে আসীন হওয়ার সংষ্কৃতি থেকে আমাদের নেতারা বেরিয়ে আসতে পারেন না? কেন আমারা সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী পদে দুই জন ব্যক্তিকে দেখতে পাব না? এমনটি হলে আমাদের গণতন্ত্র আরো শক্তিশালী হতো বলেই মনে করি
আমাদের দেশের সংবিধানে ১৯৭২ সাল থেকেই শক্তিশালী স্থানীয় সরকার গঠনের বিদান রয়েছে তবে তা কখনই বাস্তবতার মুখ দেখেনি স্বৈরশাসক এরশাদ অবশ্য উপ জেলা পদ্ধতি চালু করে সীমিত আকারে হলেও স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত বিএনপি সরকার সে পদ্ধতির উন্নয়ন সাধন না করে সেই ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়
(চলবে)