রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৩

নতুন করে ভাবতে হবে

নতুন করে ভাবতে হবে


নুরুল্লাহ মাসুম

চতুর্থ পর্ব

এবারে বলতে চাই, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রায়শঃই বলা হয়ে থাকে ১৯৭২ সালের সংবিধান দেশের সেরা সংবিধান সেটি করা হয়েছিল বৃটেনের গণতন্ত্রের ধাঁচে বা বলা যেতে পারে পশ্চিমা গণতন্ত্রের ধাঁচে তৈরী সেই সংবিধান তবে কোন কালেই বৃটেন বা পশ্চিমা ধাঁচে আমাদের দেশে সংসদ চলেনি বা চলতে দেয়া হয়নি রাজনৈতিক বিশেস্নষকরা বলে থাকেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের থেকেও বেশী ক্ষমতাবান কথাটা একে বারে উড়িয়ে দেবার মত নয় দেখা যাক আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কতটুকু সংসদে সংখা গরিষ্ঠ দলের প্রধান যিনি তিনিই হন দেশের প্রধান মন্ত্রী সুতরাং সংসদে সংখ্যা গরিষ্ঠ দলের সভাপতি বা প্রধান, সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের 'সংসদীয় পার্টি'র প্রধান বা সংসদ নেতা, প্রধানমন্ত্রী তথা সরকার প্রধান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী {আরো কয়েকটি মন্ত্রণালয়তো থাকছেই) এবং 'সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ' এর প্রধান রূপে অঘোষিত সামরিক প্রধান (যদিও রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন সাংবিধানিকভাবে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধনায়ক) এক ব্যাক্তির হাতে যখন এতগুলো ক্ষমতা থাকে, তখন কেনইবা পুরো দল বা সরকার তাঁর আজ্ঞাবহ হবে না? যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে একজন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নিয়োগ দিতে হয় এবং সেই নিয়োগ পার্লামেন্টে অনুমোদ করিয়ে নিতে হয় আমাদের দেশে একবার যিনি প্রধানমন্ত্রী হন, তিনি স্বীয় ইচ্ছেমত মন্ত্রী নিয়োগ দিয়ে থাকেন; সংসদে তাদের নিয়োগ অনুমোদন করাতে হয় না এমনকি প্রধান মন্ত্রী নিজের পছন্দের মানুষকে উপদেষ্টা পদে বসিয়ে মন্ত্রীদের ওপরে খবরদারী করার পথ সুগম করে দেন এতে মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট ঐ মন্ত্রীকে বিশ্বাস করতে পারছেন না
টেকেনোক্র্যাট মন্ত্রী নিয়োগের বিধান করেছিলেন (যতদূর মনে পড়ে) প্রেসিডেন্ট জিয়া তিনি অবশ্য মন্ত্রিপরিষদের মোট সংখ্যার দশ শতাংশ পর্যন্ত্ম টেকেনোক্র্যাট মন্ত্রী নিয়োগের বিধান করেছিলেন ভারতে সংসদ সদস্য নন এমন মন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হলে তাদের অবশ্য ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে টেকেনোক্র্যাট মন্ত্রীরা অবশ্য সংসদে ভোটাভুটিতে অংশ নিতে পারে না- এটা ভাল দিক তবে আরো ভাল হত, যদি টেকেনোক্র্যাট মন্ত্রীরা সংসদে না যেতেন সরকারের কাজের সুবিধার জন্য হয়ত কখনও কখনও টেকেনোক্র্যাট মন্ত্রীর দরকার হয়, তবে তার সংসদে না যাওয়াই ভাল- কেননা সংসদ হচ্ছে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদে জন্য টেকেনোক্র্যাট মন্ত্রীর দপ্তরের জন্য সংসদে অন্য কোন মন্ত্রী দায়িত্ব পালন করতে পারেন
পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (তখনও তিনি বঙ্গবন্ধু হননি) দলীয় দায়িত্ব পালনের জন্য মন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন এখনও কি এমনটি হতে পারে না? যিনি মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী হবেন, তিনি দলের কোন পদে থাকবেন না ভারতে সংসদ নেতা সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হননি, সেখানে কি সংসদে কংগ্রেসের আধিপত্য নেই? বৃটেনের হাউস অব কমনস এ 'লিডার অব দ্য হাউস' এবং প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তি অধিষ্ঠিত হন না সেখানে কি সরকার চলছে না? আমাদের দেশে কি একই ব্যক্তির ৫/৬টি পদে আসীন হওয়ার সংষ্কৃতি থেকে আমাদের নেতারা বেরিয়ে আসতে পারেন না? কেন আমারা সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী পদে দুই জন ব্যক্তিকে দেখতে পাব না? এমনটি হলে আমাদের গণতন্ত্র আরো শক্তিশালী হতো বলেই মনে করি
আমাদের দেশের সংবিধানে ১৯৭২ সাল থেকেই শক্তিশালী স্থানীয় সরকার গঠনের বিদান রয়েছে তবে তা কখনই বাস্তবতার মুখ দেখেনি স্বৈরশাসক এরশাদ অবশ্য উপ জেলা পদ্ধতি চালু করে সীমিত আকারে হলেও স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত বিএনপি সরকার সে পদ্ধতির উন্নয়ন সাধন না করে সেই ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়
(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই: