শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০১৩

একটি দাঁড় কাক এবং অন্যান্য

শরতের স্নিগ্ধ সকালসামাদ সাহেব গরম এক কাপ চা নিয়ে ব্যালকুনীতে বসে আছেন নিত্যদিনের অভ্যেসমতআরাম কেদারায় গা এলিয়ে আলস্যভরা দেহ-মন চাঙ্গা করার একমাত্র ঔষধ হচ্ছে এক মগ কড়া গরম চাপঞ্চাশোর্ধ বয়সে আজো চলছে তার এই অভ্যেস
মৃদু শীতল হাওয়ায় তার মনটা জুড়িয়ে যায়এমন সুন্দর স্নিগ্ধ সকালে প্রকৃতির ছোঁয়া পাবার কালে বিরক্ত করার জন্য একটা কাকই যথেষ্ট।  কা-কা শব্দে হালকা সকালটা ক্রমে ভারী হতে থাকে প্রতিদিনের মতসামাদ সাহেব কখনোই ওদের প্রাতঃকালীন গলা সাঁধার কাজে বাধ সাধেন নাবরং কখনো সখনো কিছু একটা অফার করার চেষ্টা করেন ওদের- ঝামেলাটা হয় তখনইএকটা কাক কাহ্-কাহ্ স্বরে সিগন্যাল দিয়ে খুব দ্রুততার সাথে জড়ো করে ফেলে আরো ডজনখানেকএরপর শুরু হয়ে যায় সমস্বরে ওদের গলা সাঁধার কাজটাএ যেন কোন এক সঙ্গীত একাডেমী! সামাদ সাহেব অন্তত আধা ঘন্টা ধরে উপভোগ করেন সেই সঙ্গীত একাডেমীর শিক্ষার্থীদের সঙ্গীত সাধনা
আজো তেমনি করে বসে আছেন তিনিহঠা করেই ইজি চেয়ার ছেড়ে এক প্যাকেট নিমকি নিয়ে আসেননা, নিজে খাবার জন্য নয়; তার প্রিয় সঙ্গীত একাডেমীর শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি প্যাকেটটা সামান্য খুলে ব্যালকুনীর গ্রীলের সাথে রেখে ফিরে আসেন নিজ আসনে
খানিক বাদে সুন্দর একটা পাতি কাক গ্রীলের কাছে এসে বসে এবং মাতাবেলীদের মত করে সিগন্যাল দেয়- কাহ্ কাহ্মুহূর্তেই আরো তিনটি সুশ্রী সুদর্শন জড়ো হয় সেখানেদলনেতা বার কয়েক সামাদ সাহেবের চোখে চোখ রেখে খাবার গ্রহণের অনুমোদন নিয়ে নেয় এবং বিলম্ব না করে প্যাকেটের ছেড়া অংশে নাকসহ পুরো মুখটা ঢুকিয়ে দেয়টেস্ট করে নেয় সামাদ সাহেবের দেয়া খাবারটা তাদের খাওয়ার যোগ্য কি না! বেশ আয়েশ করেই কিছুটা খাবার হজম করে দলনেতা- বেজায় খুশী সে!
অতঃপর, সামাদ সাহেব অবাক বিষ্ময়ে লক্ষ্য করলেন, দলনেতা তার সামনে বসা সঙ্গী, হতে পারে জীবন সঙ্গী অথবা কাছের বন্ধু- যেটি খুব কাছেই বসেছিল; তার কাছে অনুমতি চাইলোসামাদ সাহেব স্থির নেত্রে তাকিয়ে রইলেন দলনেতার অনুমতি নেয়ার ভঙ্গিমার  দিকেবার তিনেক ঠোঁটসহ মাথাটা উপর নিচে ঝাঁকালো সেটি
দলনেতার চোখ এবার দ্বিতীয় কাকটির দিকে, সেটিও সামাদ সাহেবের চোখে চোখ রেখে সম্মতি নিল বলে মনে হলোএরপর, কালবিলম্ব না করে দলনেতার প্রশ্নে সায় দিল সঙ্গীটি- ডানদিকে মাথা কাত করে
এবার সামাদ সাজেবের আরো অবাক হওয়ার পালাসঙ্গীর অনুমতি পেয়ে মুহর্ত বিলম্ব করে না দলনেতাবড় বড় কালো ঠোঁটে প্লাস্টিকের প্যাকেটটি শক্ত করে ধরে নিয়ে উড়াল দেয় সেগন্তব্য পাশের নির্মানাধীন একতলা বাড়ির ছাদদলনেতাকে অনুসরণ করে বাকী তিনটি সুদর্শনএকই সাথে ভেসে আসে প্রাপ্তিযোগের আনন্দ ধ্বণী- কা-কা-কা
পাশের নির্মানাধীন একতলা বাড়ির ছাদে ওদরে আনন্দঘণ অবতরণআয়েস করে খাবার গ্রহণের আয়োজন যখন চলছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে ধাঁই ধাঁই করে সেখানে হাজির হয় একটা দাঁড় কাক- ক্বা-ক্বা ধ্বণী দিয়ে; যেন দশ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হচ্ছেচারটি পাতি কাকের আটটি ডানা ঝাপটানোর শব্দ বিকট হয়ে সামাদ সাহেবের কানে ফিরে এলাওরা প্রাণ রক্ষায় পালিয়ে যেতে যেতে ফিরে এলাএবার ওদের অবস্থান কিছুটা দূরেঅসহায়ের মত ওরা তাকিয়ে থাকে দাড় কাকের দিকেভিটে-মাটি হারা অসহায় মানুষের মত চারটি পাতি কাক তাকিয়ে থাকে ভূমিদস্যুর দিকে
দাঁড় কাক, গায়ে গতরে পাতি কাকের চেয়ে প্রায় দেড়গুন বড়মিচমিচে কালো ঠোঁটের আকারটাও বেশ বড়; যেন তীক্ষ্ণ ব্যায়োনেট কোষান্মুক্ত করে ঘুরে বেড়াচ্ছেভাগ্য ভাল দাঁড় কাকের, ওদের সমাজে র‍্যাপিড অ্যাকশন নেয়ার মত কোন সৈন্য-সামন্ত নেইদুর্ভাগ্য পাতি কাকদের, এমন অত্যাচার প্রতিনিয়ত ওদের সইতে হয়
অবাধে চলছে ওদের সমাজে দাঁড় কাকের রাম-রাজত্বপাতি কাকেরা একেবারেই অসহায় সেই সমাজে

ধানমন্ডি, ঢাকা

০৪১০০০ জুন ২০০৬ খৃষ্টাব্দ

সোমবার, ১০ জুন, ২০১৩

সৈকত নগরী

সৈকত নগরী

নুরুল্লাহ মাসুম


দৃশ্যকল্প-১
বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে ২০০ কিলোমিটার নান্দনিক সৌন্দর্য্যরে এক অপরূপ সুন্দরী কক্সবাজার সৈকতলক্ষ-কোটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুক্তা ছড়িয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে - সাগর কন্যা ভালবাসার প্রগাঢ় আবেগে আছড়ে পড়ছে সেথায়প্রেমের চিরন্তণী বাণী নিয়ে, কখনো সুবিশাল ঢেউ-তরঙ্গের আকারে; কখনোবা মৃদুমন্দ বাতাসে ক্ষুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি করেপ্যাসিফিকের মত ঘণ-নীল-স্বচ্ছ জলরাশী না থাকলেও বঙ্গোপসাগরের বিচিত্র রূপের আধো-ঘোলা জলরাশির সে ক্ষুদ্র তরঙ্গ বা বিশালাকার তরঙ্গের মাথায় যে রাজটীকা জ্বল জ্বল করছে, তা বিশ্বের সবচেয়ে দামী হীরক খে র থেকেও মহামূল্যবান

দৃশ্যকল্প-২
বিশ্বের প্রাকৃতিক সেরা সাতটি স্থানের আসন লাভের প্রতিযোগিতা থেকে ছিট্কে যাওয়ার পর সরকার বাহাদুর দেশের পর্যটন প্রিয় মানুষ, প্রকৃতি প্রেমী মানুষ আর অর্থনৈতিক বিষয়ে প্রকৃত জ্ঞানীদের নিয়ে এক মহাপরিকল্পনা তৈরীর জন্য আয়োজন করে এক দীর্ঘ সেমিনারমহাজ্ঞানীদের মহাদীর্ঘ আলোচনায় সরকার আশ্বস্ত হন, গৃহীত হয় এক মহা পরিকল্পনাদায়িত্ব দেয়া হয় দেশের প্রখ্যাত নগরবিদদেরখুব বেশী না হলেও একেবারে নাভিশ্বাস ওঠার মত কম সময় দেয়া হয়নিদায়িত্ব পেয়ে নগরবিদরা কোমর বেঁধে লেগে গেলেন দুকিলোমিটার দীর্ঘ এ সৈকতকে মনের মত করে সাজাতে

দৃশ্যকল্প-৩
মাত্র নয় মাসে নগরবিদরা জাতির সামনে উপস্থাপন করলেন এক মহাযজ্ঞ, উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিন-পূর্বে বিস্তৃত দুকিলোমিটার দীর্ঘ এবং সৈকত থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার প্রস্থ এক অভিনব আধুনিক পর্যটন নগরীর পরিকল্পনাসরকারের মহারথীরা দেখলেনজনগণের মতামত নেয়ার জন্য সবগুলো দৈনিক ও সাপ্তাহিকে প্রকাশ করা হল সে পরিল্পনার কথাসকল টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হতে লাগলো এ বিশাল পরিকল্পনার কথাপ্রতিটি চ্যানেল নিজ সাধ্যমত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে প্রচারের প্রতিযোগিতায় নেমে গেলবেঁধে দেয়া সময় পার করে দেশের পর্যটন মন্ত্রী দেশব্যাপী প্রচারের শেষ অংকে এক বক্তব্যে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত সকল বাঙালীকে জানালেন এ মহা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কথা; এর বাস্তবায়নে চাইলেন সকলের সহযোগিতা, বাস্তবায়নে সকলের প্রতি বিনিয়োগের আহ্বান জানালেন তিনি

দৃশ্যকল্প-৪
নির্ধারিত সময়ের আগেই পর্যটন দফতর তাদের প্রয়োজনীয় অর্থ পেয়ে গেল দেশের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের বিনিয়োগ থেকে১৫ কোটি জনতার দেশ বাংলাদেশদেশকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে হবেএগিয়ে এলো সারে চার কোটি বিনিয়োগকারীসবচেয়ে বেশী করে সহায়তার হাত এগিয়ে দিল দেশের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীগণপ্রবাসী বাঙালীরা রাখলেন দেশপ্রেমের জ্বলন্ত প্রমান
পর্যটন দফতর ঘোষণা দিল, সারে চার বছরের মধ্যে পরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবেতবে এক বছরের মধ্যে নবনির্মিত আধুনিক পর্যটন নগরী সৈকত নগরী”-র দুপ্রান্তের নির্মান কাজ সমাপ্ত হবে এবং পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হবেএক কথায় বহু আকাংখিত সৈকত নগরী প্রাথমিকভাবে আলোর মুখ দেখবে এক বছরের মধ্যে

দৃশ্যকল্প-৫
এক বছর পরের কথা:
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১৮০ ফুট চওড়া, মসৃন, কালো পিচের ঝকঝকে রাস্তার কাজ শেষপতেঙ্গা পয়েন্টে বাঙালীর ঐতিহ্য সমন্বিত করে তৈরী করা হয়েছে সৈকত নগরীর প্রবেশ দ্বারপাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত তৈরী হয়েছে থীম পার্ক, হোটেল-রোস্তোরা কত কি! অবাক করা বিষয় হলো, পর্যটকরা চট্টগ্রামের পতেঙ্গা পয়েন্ট থেকে যে কোন যানবাহনে ক·বাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেই সরাসরি চলে যাবেন সমুদ্রের তলদেশেনা, ভয় পাবার কোন কারণ নেই! আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরী কালো পিচের রাস্তাটি একটি টানেল’-এ পরিণত হয়ে কর্ণফুলি নদীর নিচ দিয়ে পথ অতিক্রম করেছেদেশে এ জাতীয় টানেল এটাই প্রথমপ্রথমে ভয় লাগলেও টানেল অতিক্রম করার পর পর্যটকদের যে আনন্দানুভতি আসবে, তা তাদের নিয়ে যাবে কমপক্ষে আরো ৫০ কিলোমিটার পথ
সৈকত নগরীর দীর্ঘ ২০০ কিলোমিটার পথের প্রতি ২০ কিলোমিটার অন্তর রয়েছে বাস-বেযাত্রীদের ফ্রেস হবার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে, রয়েছে হালকা খাবারের ব্যবস্থাযখন পুরো নগরী তৈরী হবে, তখন প্রতিটি স্থানেই থাকবে পর্যটনের সকল সুবিধাধি
আপাতত, পর্যটকদের দেখার জন্য রাস্তার ডান দিকে অবারিত বালুকাময় সৈকততো রইলোইসাগর অবগাহনের জন্য রাখা হয়েছে আধুনিক সুবিধাদিসহ সান-বাথ ও ওয়াটার রেইসিং এর ব্যবস্থালাল কাপড় পরিহিত উদ্ধারকর্মীদের দূর থেকেই পরিস্কার দেখতে পাওয়া যায়
দীর্ঘ এ পথ যাতে পর্যটকদের কাছে নিরানন্দ না হয়, সে জন্য বাস-বেগুলো আগেই তৈরী করা হয়েছে
একেবারে শেষ প্রান্তে সকল নির্মান কাজ শেষপর্যটকদের অভ্যর্থনা জানাতে টেকনাফ তৈরী পুরোপুরিভাবেসেখানে রাখা  হয়েছে বিনোদনের নানান আয়োজন

দৃশ্যকল্প-৬
৩ বছর পর:
সৈকত থেকে দেড় কিলোমিটার স্থলভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত নগরীর ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ সীমানা প্রাচীর করা হয়েছে পুরো দুকিলোমিটার জুড়েদশটি তোরণ নির্মান করা হয়েছে সে সীমান প্রাচীরের দিকেএতে করে পতেঙ্গা ছাড়াও অন্যান্য জায়গা থেকে স্থানীয় জনগণ এ নগরীতে প্রবেশ করতে পারবেন
কি আছে আমাদের এ আধুনিক সৈকত নগরীতে? বোধ করি প্রশ্নটা হওয়া উচিত, কি নেই এ নগরীতে? স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, সিনেমা হল, আধুনিক শপিং মল, খেলার মাঠ, থীম পার্ক, টয়-ট্রেন, রোপ-ওয়ে, কি নেই সেখানে বলুন তো? সারা দুনিয়ার মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে আমাদের এ আধুনিক নগরীতে
পুরো নগরটাই আধুনিক ফ্রি-পোর্ট এলাকাপর্যটকরা বিনাশুল্কে কেনাকাটা করতে পারবেইউরোপ- আমেরিকায় তারা যে ধরণের সুবিধাদি পেয়ে থাকে, তার সকল ব্যবস্থাই করা হয়েছে এখানেঅল্প খরচে কেনইবা তারা এখানে আসবে না?
চট্টগ্রাম বিমান বন্দর আগে থেকেই আন্তর্জাতিক মানের ছিল·বাজার বিমান বন্দরকেও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হয়েছে।  নগরীর মাঝামঝি তৈরী করা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের সিটি টার্মিনালযাত্রীরা যে কোন বিমান বন্দর থেকে নগরীতে আসতে এবং নগর কেন্দ্র থেকে যে কোন বিমান বন্দরে সহজে যাতায়াত করতে পারেন তাদের চাহিদা মত। কোথায় মেলে এমন সুযোগ!

দৃশ্যকল্প-৭
এ দৃশ্যকল্পটি সুখকর নয়:
চার বছরের বিশাল কর্মযজ্ঞে দেশের মানুষ প্রাণঢালা সমর্থন জানালেও সরকারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে এক শ্রেণীর মানুষের কুপমন্ডকতা - বাধা এসেছে হাজারোওরা বলেছে ব্যাপক পর্যটন আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য মুছে ফেলবেঘরের মেয়েরা নাস্তায় নেমে যাবে, হারাম পানীয় ব্যাপক ব্যবহারের ফলে দোজখের রাস্তা পরিস্কার হবে দেশের যুবসমাজের জন্য; ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে সমাজেকর্মক্ষেত্রে নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণ তথাকথিত সমাজপতিরা মেনে নিতে পারেনিফলে সরকারকে কৌশলী হতে হয়েছেঅন্যান্য মুসলিম দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশের ধারা তুলে ধরতে হয়েছে সকলের সামনেএগিয়ে এসছে দেশের মিডিয়াগুলোক্রমাগত ব্যাপক প্রচারের ফলে দেশের আপামর জনসাধারণকে বোঝানো গেছে, পর্যটন দেশের সংষ্কৃতি ধংস করে না বরং আধুনিতার পরশ এনে দেয়, বাড়ায় জ্ঞানের পরিধিমুক্ত বাজার অর্থনীতির যুগে বিশ্বে টিকে থাকার নতুন পথের সন্ধান দেবে এ নগরীআঞ্চলিকতার দোষে-দুষ্ট এক শ্রেনী চেয়েছিল এ বিশাল যজ্ঞে তারা প্রাধান্য বজায় রাখবেওরাও কাজের গতি কমিয়ে দেয়আর চাঁদাবাজী ও দস্যুতার কথা! ওগুলোতো আমাদের জীবনের স্বাভাবিক অংশ হয়ে ছিল দীর্ঘ দিন ধরেসকল সমস্যা কাটাতে সরকার যেমন কঠোর হয়েছে, মিডিয়াগুলো যেভাবে ধনাত্মক ভুমিকা নিয়েছে, তেমনি অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে দেশের সকল বিনিয়োগকারী, বিশেষত রিয়েল এস্টেট কোম্পানীগুলোসকলের অদম্য সাহস ও ইচ্ছেশক্তির কাছে দেশের কুপমন্ডুকতায় আচ্ছন্ন সমাজটাকে জয় করা গেছে শেষতক

দৃশ্যকল্প-৮
প্রকৃতি যখন শত্রুর ভুমিকায়:
কক্সবাজারকে নিয়ে বিশাল এ কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে সরকার ও উদ্যোক্তাদের কমপক্ষে তিনটে প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়েছেক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক হলেও সরকার তা কাটিয়ে উঠেছে বিনিয়োগকারীদের সহায়তা দিয়েঅর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শর্তগুলো শিথীল করেছেবাংলাদেশ ব্যাংক এক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থে অভিভাবকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলকিছু প্রচার মাধ্যমে এ উদ্যোগের বিরূপ সমালোচনা হলেও বেশীরভাগ প্রচারমাধ্যম বিনিয়োগকারীদের পক্ষাবলম্বন করে সৈকত নগরীর বাস্তবায়নে দারুনভাবে সহায়তা প্রদান করেএজাতীয় প্রাকৃতিক দূর্যোগ বারবার সামনে আসায় সরকার হতে পেরেছে সতর্কসৈকত নগরীকে ভবিষ্যত দূর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নগরবিদ ও আবহাওয়াবিদরা ব্যাপক প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম হাতে নিতে পেরেছেনবিভিন্ন্ পয়েন্টে গড়ে তোলা হয়েছে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসঠিকভাবে আগাম সতর্কবানী দেয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে উন্নতসৈকত নগরীর প্রধান সড়ক ছাড়াও প্রতিটি ফিডার রোডে বড় বড় ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছেচালু হয়েছে একাধিক এফ.এম. রেডিও - বিপদ ঘনিয়ে আসার আগেই পর্যটকদের সাবধানবানী জানিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুজে নিতে সহায়তা দিতেসমুদ্রে যারা অবগাহন করবেন তাদের জন্য অতিরিক্ত লাইফগার্ডের  ব্যবস্থা সুনিশ্চিচত করা হয়েছেএরপরও যে কোন ধরণের অনাকাংখিত ঘটনা মোকাবেলায় গঠন করা হয়েছে সৈকত নগরী বিধান সভা’-যেখানে রয়েছ সকল বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং তাদের তত্বাবধানে রাখা হয়েছে বিশেষ শৃংখলা রক্ষাকারী স্বেচ্ছাসেবক দল

দৃশ্যকল্প-৯
মেঘের আড়ালে সূর্য হাসে:
সকল বাধা অতিক্রম করে অবশেষে দেশের সরকার প্রধানআড়ম্বরের সাথে সৈকত নগরীর উদ্বোধন করলেন শীতের এক পড়ন্ত বিকেলেসেখানে আপামর জনগণের সাথে একই কাতারে হাজির হয়েছিলেন জ্ঞানীজন, বিদেশী হাজারো অতিথি, পর্যটক এবং অসংখ্য মিডিয়া কর্মীদেশের সকল টেলিভিশন চ্যানেল ও বেতার অর্ভতপূর্ব সে অনুষ্ঠান সরাসারি স¤প্রচার করেবিশ্বজুড়ে লাখো-কোটি দর্শক-শ্রোতা দেশের মাইল ফলক হিসেবে চিহ্নিত এ অনুষ্ঠান উপভোগ করেনসংক্ষিপ্ত আয়োজনটি হয়ে ওঠে ইতিহাস সৃষ্টিকারী একটি অনুষ্ঠানেউদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকার প্রধানআশা প্রকাশ করেন, ·বাজার দেশের প্রবেশদ্বার হিসেবে বিশ্ব-দরবারে খুব শীঘ্রই ব্যাপক পরিচিতি লাভ করবে এবং দেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে দ্রুত অবদান রাখতে সক্ষম হবেআয়োজনের শেষ পর্যায়ে তিনি সৈকত নগরীর প্রবেশদ্বারের সুইচ অনকরে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেনশুরু হয় সৈকত নগরীর আনুষ্ঠানিক যাত্রা

দৃশ্যকল্প-১০
সৈকত নগরীতে রংপুর, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, নোয়াখালী এবং যশোর থেকে আগত কয়েকজন স্থানীয় পর্যটকের আলোচনা শুনে আসি, চলুন-
- ও মনু, মুই কি এহন বাংলাদেশে না আমেরিকায়?
-  কিতা কন বা? আফ্নে বাংলাদশত-ই আছতয় ফ্রি ফোর্টতইতার লাগি আফনের কাছে আমরিকা লাগতাছে
- যাই-ই বলুন ভাই, এ সৈকত নগরী আমাদের গর্বের নগরীকি, ঠিক বলেছি না?
- তোমরা অত অঙ্গের (রঙের) কতা কইয়েন নামোর অহন মনে অয় মোরা কি হনুরে বাবা!
- ছাব্বাস সরকার বাহাদুরমামুর বেটা ছারে-চার বছরে কি খেইল দেখালুরে!
- আঁনহেরা যাই কইন না, আঁই ইহানে একখানা ফিলাট্ কিনতাম ছাইকোনাই যাওন লাগবো, কইন ছাই দেহি

এটা কোন দৃশ্য কল্প নয়
দৃশ্য - ১
এতক্ষণ যে দৃশ্য কল্পগুলো দেখলাম, সেগুলি বাস্তবে রূপ দেয়া সম্ভব, যদি আমাদের জনগণের কর্মচারীগণ সত্যিকার অর্থে অনুধাবন করতে সক্ষম হন যে, তারা জনগণের অর্থে বিলাশ বহুল ভবনে ততধিক বিলাশ বহুল জীবন যাপন করছেন এবং সে সকল সাধারণ পাবলিকের জন্য কিছু একটা করা দরকার, নইলে আয়টা হালাল হবে না; তবেই এমন কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব
এ জন্য সবার আগে দরকার জনপ্রশাসনের কর্মচারীদের মন-মানসিকতার পরিবর্তনজনগণের ট্যাক্সের টাকায় যারা দেশের জেলা প্রশাসকহয়ে বসে আছেন তারা যদি জেলার সেবকনা হতে পারেন তবে আমাদের মহা পরিকল্পনার পরিউড়ে যাবে, থাকবে কেবলি কল্পনাআমরা তা চাই না
আমরা সরকারের সাথে ব্যক্তি উদ্যোগের সমন্বয় ঘটিয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম অখন্ড বালুকাময় সৈতকসম্বৃদ্ধ নগরী  ক·বাজারকে বিশ্বখ্যাত পর্যটন নগরীহিসেবে গড়ে তুলতে চাইবিশ্বের বুকে দরিদ্রদেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম মুছে ফেলতে চাই

আজকের কামনা

আজকের কামনা

নুরুল্লাহ মাসুম


তৎসম তৎভব বা দেশী-বিদেশী যাই হোক
            আলোর নাচন দেখিয়ে তুমি
কথামালায় নৃত্য কর অবলিলায়- এটাই জানি;
            লীলাময়ের এই দুনিয়ায় সকাল সাঝে
আসরে তোমায় দেখতে যে পাই- একই ধাঁচে
            মুখটি তোমার সদাহাস্য- এটাও জানি
লিখতে তুমি পারঙ্গম, হোক না তা বেশ বিলম্বে
            হাত দুটি তোমার পাকা অতি
দম্ভ তোমায় ছুঁতে পারেনি, জানি - এটাই সত্যি
            মননশীল  সপ্তরথে রঙ মাখিয়ে
মনটা তোমার আজও উদার; যেন নীলিমায় সাত স্তম্ভ
            মরুর মাঝে অশ্রুবিন্দু এটাও মানি
মনের মত কথা বলায় অতীব দৃঢ় তুমি
            দক্ষ হাতে লিখে চলেছ, আর
হাসতেও তুমি জান খোলা মনে- এটাইতো গর্ব
            লিখবে তুমি অনাদিকাল
মুক্ত মনে মুক্ত হাওয়া বিলিয়ে যাবে
            আসমুদ্র হিমাচলে- এটাইতো সত্য
লীলাময়ের নীলাম্বরে দেখবো তোমায় 
            করছো কত কাব্য গঠন
আরো, আরো, আরো লিখবে তুমি- এটাইতা কাম্য
            তথাস্তু বন্ধু, চিরসবুজ রও মোদের মাঝে

ধানমন্ডি, ঢাকা
১৫২৩৫৫ জানুয়ারি ২০১৩
১৮১৩৪৮ জানুয়ারি ২০১৩

বাদ্যযন্ত্রে নতুন ছন্দ

বাদ্যযন্ত্রে নতুন ছন্দ

নুরুল্লাহ মাসুম


মনের কথা মনেই থাকে, যায় না কভু বলা
মনের মানুষ যদি না বোঝে কোনটা ছলা কোনটা কলা
তাবৎ জগত গোমরা রয়, বোঝে না কোন জ্বালা
জগত জুড়ে কে আছে বল, হবে মোর প্রাণ-কালা?

নুতন দিবসে নতুন বারতা কে আনিছে বল
রক্তে আমার নৃত্য ছন্দ, যাবে তুমি?- তবে চলো

মানব জনম সুখী হয়, কোথায় রয়েছে মন্ত্র
ধুসর ধুলা জগত জুড়িয়া, নাই কি ষড়যন্ত্র!

রিক্ত হস্তে তিক্ত-বিরক্ত; তবু হাতে রবে বাদ্যযন্ত্র

নব পর্যায়

নব পর্যায়

নুরুল্লাহ মাসুম


মমতায় ভরা মনটা তাহার দেখেনি কেউ
মন ভরে; হেলায় ফেলায় দেখেছে সকলে
তাই বলে হারায়নি উদ্যম, চলেছে পথ নিরবধি
জলে-স্থলে, কখনোবা আন্তরীক্ষে- সমান তালে

আগামীর ভাবনা ভাবেনি কখনো, মান্য করেছে
কঠিন বাস্তবতা, হার মানেনি কভু- চলেছে অবিরাম
তাল-লয়-ছন্দ নাইবা ছিল; তাতে কিবা আসে যায়
রপ্ত করেছে মন্ত্র যত বাঁচার মত বাঁচতে চাওয়ার

আচমকা ঝড় বয়ে যাওয়ার পর শান্ত ধরণী
দুর্বার প্রকৃতি যেমনি নিস্তব্ধ; সুশ্রী ও কমনী
রীতিমত কমনীয়তায় ভরে মন অজানা নতুন ভাবনায়

ধানমন্ডি, ঢাকা
০৪০১৫৮ জানুয়ারি ২০১৩

রবিবার, ২ জুন, ২০১৩

অগোছালো বাক্যালাপ



একদিন তুমি হাসতে হাসতে জানতে চেয়েছিলে:
- আমায় একটা প্রেমপত্র লিখবে?
অবাক বিষ্ময়ে ক্ষাণিক সময় বিমূঢ়; ততধিক বিষ্ময় নিয়ে আমি পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম:
- আমি, তোমাকে?
আরও ক্ষাণিকটা সময় কাটলো- হয়তোবা বিষ্ময়ের ঘোর কাটাবার ব্যর্থ চেষ্টার সময় ক্ষেপণ; আবারো প্রশ্ন রেখেছিলাম:
- আমি তোমাকে প্রেমপত্র লিখবো?
শেষ হেমন্তের সোনলী ধানের ক্ষেতে বয়ে যাওয়া মৃদুমন্দ হাওয়ার তালে যেমন করে ধানের শীষ দোলে, ঠিক তেমনি করে দুলে উঠলে তুমি; খিল্খিল করে হাসির নহর বইয়ে দিয়ে মৃদু স্বরে তোমার উত্তর- ছোট্ট, সুন্দর ও মিষ্টি উত্তর:
- হ্যা
বিমোহিত আমি; বিশ্বাস করো নন্দিনী- আমি সত্যিই বিমোহিত, পুলকিত, চমৎকৃত হয়েছিলাম সেদিনআমার মনের প্রতিটি কোনায়; নাহ্, সঠিক শব্দ ব্যবহার করা হলো না, প্রতিটি অনু-পরমানু সেদিন আনন্দে ভেসেছিল কেতম তরো! সেই অনুভূতির ব্যাখা তোমায় আমি দিতে পারবো না
ক্ষাণিকটা সময় সেদিন তুমি আমার পাশে ছিলেঘোর বর্ষাকালগাঁয়ের মেঠোপথ তখন ভিজে একাকার- ক্রমাগত তিন দিনের মুষল ধারায়মাসটা ছিল আষাঢ়- তবু বর্ষাধারা মনে করিয়ে দিচ্ছিল শ্রাবণের আগমণী বার্তাকাঠর বাঁটের সেই-ই পুরানা দিনের মোটা কালো কাপড়ের একটিমাত্র ছাতা; তোমাকে-আমাকে, কাউকেই সেই অঝোর ধারা থেকে রক্ষা করতে পারছিল নাতবু শক্ত হাতে ধরেছিলাম ছাতার বাঁটঝড়ো হাওয়া যদিবা ছিলনা, তবু দুই ফার্লং পথ তোমায় এগিয়ে দিয়েছিলামতোমার ফেরার তাগিদ ছিলআকাশে সূর্য নেই, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার চিহ্ন ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট হচ্ছিলভেজা-কর্দমাক্ত মেঠো পথে দ্রুত পা চালাবার মত অবস্থাও ছিল নানন্দিনী, তোমার কি মনে আছে- সেই বৃষ্টি ভেজা বিকেল বা সন্ধ্যায় তোমার পড়নে ছিল গাঢ় সবুজ রঙের সুতি শাড়ি? ব্লাউজটা ছিল গাঢ় হলুদ বা সোনলী।  আমাদের বাড়িতে তোমার আগমনের সাথে সাথেই বলেছিলাম:
-হেমন্ত আসতে এখনও বাকী অনেকটা- প্রকৃতির মাঝেঅথচ তোমায় দেখে মনে হয় হেমন্ত এসে গেছে
-কি করে?
বিষ্ময়ভরা চোখে জানতে চাইলে তুমি
হেসে আমি বলেছিলাম:
- সবুজ জমিনে সোনলী ফসলএতো হেমন্তের আগমনী বার্তাতোমার শরীরে সবুজ জমিন আর.........
তুমি সেই সময়ে কী সাবলিল ভঙ্গিমায় হেসেছিলে; তোমার সেই হাসি আজো আমার চোখে ভাসেনিভৃতে শুনতে পাই তোমার কণ্ঠের কলধ্বণী
আজ আমি বড্ড আনমনাকোন কাজে মন বসছে নাপ্রথাগতভাবে সবচেয়ে কঠিন অথচ বিখ্যাত, অবশ্যই বিশ্ববিখ্যাত নাট্যকার শেক্শপিয়ারের ওথেলো নিয়ে বসলামছেলেবেলা থেকেই জেনে এসেছি, কঠিন ভাষায় লেখা বই নিয়ে বসলে সহসাই ঘুম পায়বিশ্বাস করো, ওথেলো আমায় ঘুমের রাজ্যে নিয়ে যেতে পারেনিবরং কেবলি সেই বৃষ্টিস্নাত বিকেল বা সন্ধ্যার কথা বারবার মনে হতে থাকেঅবশেষে-
কতকাল আগের সেই কথাতোমার সেই-ই ছোট্ট অথচ সুন্দর একটা অনুরোধ রক্ষার কাজে বসে গেলামহাতের কাছে কাগজ কলম ছিল না; একটু সময় করে সংগ্রহ করতে হলোফাঁকে এককাপ চা তৈরী করে নিলামতুমি তো জান, জানি না এখন আর তোমার মনে আছে কি না; আমি নিজের হাতে চা তৈরী করতে পছন্দ করি সে-ই কবে থেকেসে দিন বিকেলেও তোমায় নিজ হাতে চা করে খাইয়েছিলামনা, এখন আর কাঠের জ্বালানি দিয়ে চা করতে হয় না; গ্যাসের চুলা তো আছেইরয়েছে ওভেন- মুহুতেই পানি গরমসহজেই হাতের মুঠোয় তৈরী চা
কি লিখবো তোমায় নন্দিনী? প্রেমপত্র লেখে কি করে? আমরা কি কখনো প্রেম করেছি? সত্যি করে বলো তো, তুমি কি কখনো আমার প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছে? অথবা আমি তোমার......?
এক সাথে পথ চলেছি কতদিন? আমরা কি আদৌ কোন কালে খোলা ময়দানে গোল্লাছুট বা বৌ-চি খেলেছি? আমার একটা বিষয় পরিস্কার মনে আছে, আমরা বর্ষা কালে ভরা যৌবনা নদীতে একত্রে অনেকে মিলে সাঁতার কেটেছিমনে আছে তোমার? সাতারে তুমি আমার চেয়ে অনেক ভাল ছিলেএ নিয়ে মাঝে মাঝে হারু আর মম কতই না খেপাতো আমায়বেটা ছেলে হয়েও আমি একটা মেয়ের সাথে সঁতারের পাল্লায় হেরে যেতাম! তবে আমার সুখ ছিল অন্যত্রদীর্ঘক্ষণ পানিতে ডুবে থাকার রেকর্ডটা ছিল আমারই; অন্যদের সেখানে কোন ঠাঁই ছিল না
ছেলেবেলার সেই দুষ্টু রেকর্ডটাই আমার জীবনের সাথী হয়ে রইলতাইতো তোমার সেই ছোট্ট অথচ সুন্দর একটা আব্দার রাখতে আমি ব্যর্থ হয়েছিবলতে পার- আমি পানির নিচেই ডুব দিয়ে লুকিয়ে ছিলাম দীর্ঘ দিনআজ যখন পানির ওপর ভেসে উঠলাম; মনে হলো হেমন্তের সেই সবুজ মাঠে সোনালী ধানের ওপর বয়ে যাওয়া মৃদুমন্দ হাওয়ায় দোল খাওয়া তোমার মুখখানিতাইতো কাগজ-কলম নিয়ে বসলাম
হয়তো তুমি হাসবেএকবিংশ শতকের আধুনিকতায় যখন চার বছরের শিশুর লেখা-পড়ার হাতেখড়ি হয় ল্যাপটপ বা পিসিট্যাব দিয়ে, সে সময়ে আমি প্রাচীনপন্থী কাগজ-কলম নিয়ে তোমায় প্রেমপত্র লিখছিকি করবো বল? আমারতো মনে হয়, কাগজ-কলম না হয়ে এ লেখাটা যদি তালপতায় কয়লার কালি ও বাঁশের কঞ্চির কলম দিয়ে লিখতে পারতাম- আমার আনন্দ হতো আরো মধুর, আরো আবেগঘন
ঝিনুকের খোল পাকা শান-বাঁধানো ঘাটে ঘসে ঘসে কাঁচা আম কেটে আচার খাওয়ার কথা কি তোমার মনে আছে? সে সময়ে গাছের আম চুরি করে, বাগানের কাঁচা লঙ্কা চুরি করে, নদীর ধারে নল-খাগড়ার বনে তুমি, আমি, লুকিয়ে আমের আচার খেতাম; মাধবী, ললিতা, হাসু, কাকন, মতি, রুদ্র- আরো কতজনাই থাকতো সাথেসকলে সব সময় না থাকলেও তুমি আর আমি থাকতাম সব সময়েবলা যায় ওটা ছিল আমাদের দলআজকের দিনে দেখ, প্রাকৃতিক ঝিনুকের সেই জায়গাটা দখল করেছে পিলারনামের ছোট্ট যন্ত্র; যা সব ধরণের সবজি ও ফলের বাঁকল তোলার কাজে ব্যবহৃত হয়; তোমার আমার বাঁকলও তুলতে পারে এই পিলার
প্রেম কি নন্দিনী? তুমি কি আমার কথা ভাব? আমি কি তোমার কথা ভাবি? একে অপরের দুঃখের সাথী কি আমরা হতে পেরেছি? আজ তুমি কোথায়, আর আমি? কতদিন আমাদের দেখা হয় না, মনে পড়ে? তবু তোমায় নিয়ে আজ লিখছি? শরতের মুক্ত আকাশ যেন আমার বাড়ির ছাদে নেমে এসেছেসেখানে ইচ্ছে করলেই হাত বাড়িয়ে পূর্ণিমার চাঁদ ছোঁয়া যায়
তর্জন-গর্জনে ভরা সেই ভয়ঙ্কর নদীর পাড়ের ছোট্ট সুন্দর গাওখানি ছেড়ে একে একে সকলেই শহরে পাড়ি জমালসত্যি কথা বললে বলতে হয়, শহরমূখী হতে বাধ্য করলো প্রকৃতি আমাদেরবাস্তবস্থা আমাদের বিচ্ছিন্ন করে দিল একে অপরকে- সকলকেউত্তর-দক্ষিণে বয়ে যাওয়া সেই নদীর ধারে কত রাত আমরা পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় স্নাত হয়েছি; মনে পড়ে কি? দল বেধে সেই রাতগুলোয় হেড়ে গরায় কত গান আমরা গেয়েছি- তা কি হিসেবের খাতায় লেখা যাবে?
শীতের রাতে খেজুর রস চুরি করে পাতার উনানে পায়েস খাওয়ার কথা, মনে পড়ে তোমার? আজো আমি সেই পায়েসের স্বাদ পাই নির্ভতে- একান্তেতুমি কি পাও?
কতকাল হলো, পূর্ণিমার আলোয় স্নাত হচ্ছি না; বা বলতে পার হওয়ার সুযোগ নেই- যান্ত্রিক এই শহরেতুমি আমি কত কাছাকাছি এই শহরে; অথচ সপ্তাহান্তে আমাদের দেখা হয় না বললেই চলেভাবতো একবার- পল্লীর সেই সব দিনের কথাদুই ফার্লং পথ পাড়ি দিয়ে কতদিন, কত রাত তুমি আমাদের বাড়ি চলে আসতে হেঁটেআমার কথা না হয় বাদই দিলামগাঁয়ের বেশীর ভাগ ছেলে-মেয়ে ভুতের ভয়ে সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বেড় হতো না; ব্যতিক্রম ছিলে তুমিআর আমি, আজও পর্যন্ত কোন ভুত বা পেত্নীর সাক্ষাৎ পেলাম না- দুঃখটা থেকেই যাবে
কি লিখবো নন্দিনী? তোমার ডাগর চোখ দুটির কথা? ঐ মায়াবি চোখ আমায় আজও ভাবায়; আজও আমি ডুবে যেতে পারি ঐ কাজল কালো চোখের গহীনেঅথবা তোমার সেই নেচে যাওয়া শস্য ক্ষেতের মত মিষ্টি হাসি আর মুক্তোর মত দাঁতকোনটা রেখে কোনটা নিয়ে লিখবো? তোমার দেখা মিলতেই আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যেতাম- তোমার একই অঙ্গের কোন্ অনু-পরমানু আগে উপলব্ধি করবো; সত্যি নন্দিনী আমি ভেবে পাই না, চোখ আগে না মুখ আগে; না কি তোমার তীক্ষ্ণ নাসিকা! তোমার চুলের কথা নাইবা বললাম
আমার ভাল লাগে তোমার ছন্দময় হাঁটার গতি- যেন কূকূল ধ্বনীতে বয়ে চলা নদী; ক্রমাগত তাকিয়ে থাকার মত, ক্লান্তিহীন; নেশাগ্রস্তের মতনাহ্, এ কথাগুলো বলা হয়নি তোমায়কখনও কখনও মনে হয়, তুমি এলে- তোমায় কাছে পেলেই তোমার অস্তিত্ব অনুভবে এতটা কাছাকাছি হব; যেখান থেকে তুমি পালাতে পারবে নাবিশ্বাস করো, তুমি কাছে এলে আমার সেই সুপ্ত বাসনা একেবারেই হাওয়ায় মিলিয়ে যায়, মনে হয় গাছের গোলাপ ছিড়ে হাতে নিলেই  ওর সৌন্দর্যহানি ঘটবে; শুকিয়ে যাবে, মরে যাবেগাছেই ও চিরযৌবনা- থাক না ওখানেই! বলতে পার, এটা আমার দুর্বলতা বা ভীরুতাগোলাপের সৌন্দর্য প্রকৃতির মাঝেই যথার্থহেমন্তে খাদ্যের প্রয়োজনে ধান কাটা হয়ে গেলে মাঠ হারায় সৌন্দর্য; পেট ভরে গৃহস্থেরআমি অনাহারী থাকতেই বেশী পছন্দ করিবলতে পার- এটাও আমার ভীরুতাঅভুক্ত থেকেও মনের আনন্দ; এটাই বা কম কিসের?
নারে নন্দিনী, প্রেমপত্র লেখা আমার কম্ম নয়প্রেমই করতে পারিনি আজও- কি করে প্রেমপত্র লিখবো বলো?
কবে থেকে তোমায় ভাললাগে, বলতে পারবো নাছোট্ট বেলাটা বেশ অনেকগুলো বছর একসাথে খুব কাছাকাছি ছিলাম; তারপর অনেকগুলো বছর কেটে গেল ভীষণ একাকীত্বে! কখনও-সখনও, একাকীত্বের মাঝে তোমার স্মৃতি নিয়ে সময় কেটেছে আমারতোমারও কি তেমনটি ঘটেছে কখনও? আবার যখন ইট-পাথরের এই প্রাণহীন নগরীতে আমরা মিলিত হলাম- আমরা সমব্যাথী, সহযাত্রীউভয়েই হারানোর বেদনাসিক্ত; তবু জীবন বহমানকেউ কারো সাথে নয় অথচ কত কাছে- ঠিক যেন রেল সড়কের মতসমান্তরালে পথ চলছি নিরন্তর, শুনছি-জানছি একে অপরের সুখ-দুঃখের গল্পকথা, চোখর জল ফেলছি, কখনওবা হেসেই লুটোপুটি খাচ্ছি; আবার শান্তনাও দিচ্ছি, মিলতে পারার ইচ্ছেটা পূরণ হচ্ছে না; পূরণ হবারও নয় কোন দিন

নাহ্, আমার দ্বার প্রেমপত্র লেখা হবে না নন্দিনীক্ষমা করো আমায়তোমার ধ্রুব না হয় আরেক দিন চেষ্টা করবে তোমার উদ্দেশ্যে সুন্দর একটা প্রেমপত্র লিখতেঅপেক্ষায় থাক ততদিন এবং ভাল থেকো নিরন্তর


ধানমন্ডি, ঢাকা

১৯০১৪৩ মে ২০১৩