বুধবার, ১৩ মে, ২০১৫

নতুন করে ভাবতে হবে : পর্ব - একুশ

একুশতম পর্ব
 
দেশটাকে অকার্যকর প্রমানের জন্য সম্ভবত একটি গোষ্ঠী সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে আছেআমার ধারণা স্বাধীনতার পর সব কটি সরকারেরই এমন ঘাপটিওয়ালারা ছিলবঙ্গবন্ধু সরকারে যেমন ছিল মোশতাক গং তেমনি জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ও হাসিনা সরকারেও এরা ছিল এবং আছে বেশ সক্রিয়বঙ্গবন্ধু ও জিয়া হত্যাকান্ডের দায় কতিপয় বিপথগামী সামরিক অসিফারের ঘাড়ে চাপানো হলেও সকলেই মানবেন এর পেছনে রাজনৈতিক অপদেবতারা কাজ করেছিল সক্রিয় ও অতি গোপনীয়তার সাথেঅতীতের কথা বলে লেখার পরিধি না বাড়িয়ে সা¤প্রতিক ঘটনাবলীর দিকে নজর দেইহাসিনা সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ঝালকাঠীর কলেজ ছাত্র লিমনের ঘটনায় দায়ী র‌্যাব সদস্যদের শাস্তি দিলে বাহিনী হিসেবে র‌্যাবে সুনাম বাড়তো বই কমতো না, এ কথা তখনই  বলেছিঅতি সা¤প্রতিক বাংলা নববর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় নারী নির্যাতনের যে ঘটনা ঘটে গেল, আমার বিশ্বাস সরকার (বিশেষত সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনী) চাইলে দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে পারতোতা না করে কেউ কেউ দোষীদের রক্ষার কাজটিই করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়কেউবা বলেছেন- সে দিন এমন কোন ঘটনা ঘটে নিবিষয়টা শেষ পর্যন্ত হাস্যকর হয়ে গেছেএতে করে দায়ী ব্যক্তিদের সাহস আরো বেড়েছে এবং হয়তো এদরে এক সময়ে সামলানো অসম্ভব হয়ে পড়বেঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবী অনুসারে নির্দিষ্ট সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আজো প্রকাশ করা হয় নি, বরং অন্যান্য ক্যামেরার ফুটেজ থেকে পুরো দায় কথিত জঙ্গীবাদী বা মৌলবাদীদের কাজ বলে প্রচালনা চালানো হয়েছেআমি মনে করি এতে ক্ষতি হয়েছে সরকারেরইসেদিনে সেই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে একটি ছাত্র সংগঠন- বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ডিএমপি কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিতে গেলে পুলিশ যেভাবে অ্যাকশনে নেমেছে, তাতে মনে হয়েছে তারা কোন জঙ্গী সংগঠনের সাথে সংঘর্ষে লিপ্তঅথচ দেশের সকলেই জানে ছাত্র ইউনিয়ন দেশের সবগুলো ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সবচেয়ে সুশৃংখল এবং ভদ্রএক সময়ে এ সংগঠনকে বলা হতো লিপস্টিক পার্টিছাত্র ইউনিয়নকে ডিএমপি কমিশনার বরাবরে স্মারকলিপি দিতে দেয়া হলে কী ক্ষতি হতো পুলিশের? নিরস্ত্র ছাত্ররা পুলিশের সামনে এমন কি করতো যা পুলিশ বা দেশের জন্য ক্ষতিকর হতো? বরং যে ঘটনা ঘটানো হলো, তাতে গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা হলো এবং নারী নির্যাতনের প্রতিকার চাইতে গিয়ে প্রকাশ্যে পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হতে হলো নারীকেই; পুরুষরাও হয়েছে- সেটা অহরহ ঘটে বলে কেউ তেমন আমলে নেয় নাপ্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে প্রকাশ্যে  পুলিশের হাতে ভার্সিটির ছাত্রী নির্যাতন বা লাঞ্ছনার ছবি কী বার্তা দিচ্ছে আমাদের? মডারেট গণতান্ত্রিক বাংলাদশে সম্পর্কে কী বার্তা গেল বহির্বিশ্বে? তবে কি পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের সাথে বাংলাদেশের কোন তফাত নেই? যদিও এ ঘটনায় দায়ী এক পুলিশ বরখাস্ত হয়েছে; প্রশ্ন বরখাস্তকৃত ওই কনস্টবল বা ল্যান্স নায়েক কি একাই এ ঘটনার জন্য দায়ী? তার কমান্ডে থাকা উর্ধতন কর্মকর্তার কি কোন দায় নেই? খুশী হতে পারতাম যদি ওই স্কোয়াডে থাকা কমান্ডারের (পদ/পদবী জানা নেই বলে এমনটি বলছি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতোবাংলাদেশের পুলিশ কি কখনো গণতান্ত্রিক দেশের পুলিশ হবে না? বাংলা নববর্ষের নারী লাঞ্ছনার ঘটনা মানুষ ক্রমে ভুলে যাবে, ভুলে যাবে পুলিশের নারী নির্যাতনের ঘটনা

আমি মনে করি, সরকারের ভেতরে হয়তো বা কোন মহল সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য আগ-বাড়িয়ে এমন সব ঘটনার প্রেক্ষাপট তৈরী করছে, যা হবে সরকারের জন্য বুমেরাংতাই বলতে চাই সময় থাকতে সাধু সাবধান- সময় গেলে সাধন হবে না
১৩-০৫-২০১৫

নতুন করে ভাবতে হবে- পর্ব কুড়ি

কুড়িতম পর্ব

বর্ষবরণে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় এলাকায় ঘটে যাওয়া ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ফলাফল আসবে না, তবে সচেতনতা বাড়েবদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী হওয়া সত্তে¡ও এর আগে আমরা দেখেছি জাহাঙ্গীরনগরে সেঞ্চুরিয়ানদের১৯৭৩ সালের ঘটনা এ প্রজন্মের জানার কথা নয়নব্বই দশকের ডাকসু নির্বাচন শেষে বিজয় মিছিলের ঘটনা অনেকেরই মনে আছে বা থাকার কথাসকলের কাছে বাধন ঘটনা এখনো উজ্জ্বল·বাজার সৈকতে বিদেশী পর্যটকের স্ত্রীর ওপর হামলার ঘটনা কারো কারো হয়ত মনে আছেলক্ষ্য করুন, সব জায়গায় ক্ষমতাসীন দলের লোকজন এহেন অপকর্ম ঘটায়...এবারেও কি ব্যতিক্রম? না, তা বলার সুযাগ নেই১৯৭৩ সালের ঘটনাটা বাদ দিলে দেখবো সবগুলো ঘটনার সময় দেশের প্রধান ব্যক্তি নারীএসকল অঘটনপটয়সীদের পরিচয় ও শক্তি একটাই... ক্ষমতা....এদের রাজনৈতিক অভিভাবকরা কখনও কি এদের নিবৃত করেছে বা করতে চেয়েছে? সেঞ্চুরিয়ানদের কি বিচার হয়েছিল? যদি হত, তাহলে পরের ঘটনাগুলা ঘটত নাএকুশে বই মেলার ঘটনারও কোন বিচার হয় নি বা হতে দেয়া হয় নিকারণ হিসেবে ভাবা যায়, লাঠিয়ালদের লালন-পালনে তাদের রেহাই দেয়া হয় বা দিতে হয়আগের দিনের জমিদার বা সামন্ত প্রভুরা যেমন করে লাঠিয়াল পালন করতসমস্যা হলো, কেউ যদি এদের কথা সহস করে বলতে যায়, নন্দীর মত তার হাত ভাঙ্গবে, না ভাঙ্গলেও ভেঙ্গে দেয়া হবেকোটি টাকা খরচ করে সিসি ক্যামেরা বসাবেন, কাজের সময় সকলে ছি ছি করবে, কাজের কোন কাজ হবে না, এটাইতো বাস্তবতাপ্রক্টর পিসিতে গেম খেলবেন এমন একটা বড় আয়োজনের সময়, ভাগ্যিস তিনি নিরোর মত বাঁশি বাজাচ্ছিলেন নাঅবশ্য বাঁশি বাজালেও শোনা যেত না ভুভুজোলার কারণে
কথা বাড়িয়ে লাভ নেই, দাবী করছি:
- প্রক্টরের দায়িত্বে অবহেলার কারণে পদত্যাগ, না করলে বরখাস্ত
- কর্তব্যরত পুলিশদের কর্তব্যে অবহেরার কারণে শাস্তি প্রদান
- সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অপরধী সনাক্ত করে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা
সবশেষে: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কি কেবল সোনার ছেলেদের ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে আবারো ছাত্রলীগের অভিভাবক হিসেবে পদত্যাগ করবেন, না ওদের নিবৃত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন? ওদের লাগাম টেনে ধরুন না একটিবার, যাতে আরকেবার ওরা সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটাতে না পারে! আজ ক্ষমতায় বিএনপি থাকলেও আমি একথাই বলতাম তাদের নেতাকে

দেশটা সকলের, কারো একার নয়, কোন দলেরও নয়একথাটা মনে রাখলে গণতন্ত্র থাকবে, থাকবে সুন্দর বাংলাদেশ
১৭-০৪-২০১৫