রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৪

নতুন করে ভাবতে হবে – দ্বাদশ পর্ব

দ্বাদশ পর্ব

বছরটা শুরু হলো হাঙ্গামার মধ্য দিয়েগত বছরের শেষ দু'মাস বিরোধী দলের টানা হরতাল-অবরোধে স্থবির হয়েছিল দেশবছরের একেবারে শেষে এসে বিরোধী দলের মার্চ ফর ডেমোক্রেসি ঠেকাতে গিয়ে সরকারী অবরোধে দেশের অবস্থা আরো বেহাল হয়ে গেলদুর্মুখেরা অবশ্য বলছে, বিরোধী দলের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে সরকারদৃশ্যত না হলেও বলা যেতে পারে, এটা সরকার এবং বিরোধী দলের একধরণের ঐকমত্য; বা সহমর্মিতাঅথবা বলা যেতে পারে, কেবল বিরোধী দল টানা কর্মসূচী দেবে, সরকার পিছিয়ে থাকবে, এমনটা হতে পারে না বলেই সরকার এমন "অবরোধ" এর গ্যারাকলে ফেলে দিয়েছে দেশকেজনপ্রিয় অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় এ নিয়ে নানান মত ও কার্টুন এবং কোলাজ চিত্র প্রকাশিত হচ্ছে নিয়তদেশের বড় দু'টি দলের (যারা কিনা পালাক্রমে দেশের ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করে আসছে দু'যুগ ধরে) বিশালকার দুই রোলারের মাঝে দেশে আম-জনতার অবস্থা এখন একেবারে চিরে চ্যাপটাবিরোধী দলের ডাক দেয়া আন্দোলনে মাঠে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা; বেশ মজাদার বটে! বিরোধী দলের প্রায় সব নেতা আত্ম গোপনে, যারাই বাইরে বেরুচ্ছেন, তাদেরই আটক করা হচ্ছেগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় এটা কতটা সমর্থনযোগ্য তা বিবেচনায় আনতে হবেসুপ্রীম কোর্টের ভেতরে দলীয় কর্মীদের হামলা চালানো এবং বেধরক মার-ধরের ঘটনাও সহজে ইতিহাস থেকে মুছে যাবার নয়পুলিশি হামলা থেকে এবারে সুপ্রীম কোর্ট চত্তরও রেহাই পেল না; ইতিহাসে এটা উজ্জ্বল হয়ে থাকবে
কাকে কি বলবো?  বলছেন তো সকলেইসরকার অবশ্য দেশের মান্যগণ্য লোকেদেরও ছেড়ে কথা বলছে না, দেশের বিবেক বলে পরিচিতজনরাও সরকারের কটুবাক্য থেকে রেহাই পাচ্ছেন নামার খাচ্ছে সাধারণ মানুষসহ পেশাজীবীরাওছাত্ররা পিটাচ্ছে শিক্ষকদের- এই না হলে উন্নতি! বিরোধী দলের ভাগ্য ভাল ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বদৌলতে দেশের জনগণতো বটেই, বিদেশেও সকলে দেখছেন দেশের বর্তমান হালচালকোথায় যাচ্ছি আমরা?
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে প্রধান বিরোধী দল নীতিগতভাবে আপাতত হেরে গেলক্রমাগত হরতাল-অবরোধের কর্মসূচী দিয়েও সরকারকে টলাতে পারলো না, যেমনি তারা চেয়েছিলবিএপি নেতা, বর্তমানে কারারুদ্ধ মওদুদ আহমেদ একবার বলেছিলেন, বিএপির হাতে রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রেসক্রিপসনঅর্থাৎ এর আগে আওয়ামী লীগ যেভাবে আন্দোলন করে বিএনপিকে কাবু করেছিল, তারাও সেই পথ ধরবেনবাস্তবে সেই পরীক্ষায় বিএনপি উত্তীর্ণ হতে পারলো নাকারণ হিসেবে বলতে হয়, সময় বদলেছে, আম-জনতার অভিজ্ঞতাও হয়েছে অনেকতাই গুটিকয়েক কর্মী ছাড়া কাউকে মাঠে-ময়দানে আন্দোলনে সামনে পাওয়া যায় না আগের মত; যেমনটা দলগুলো পেয়েছিল এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেউপরন্তু, আমার মনে হয় বিএনপি যদি জামায়াত ছেড়ে হাসিনা সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিন- ভোট প্রক্রিয়ায় একটা নীরব বিপ্লব হওয়ার সম্ভাবনা ছিলআগের মত করে এখন আর মিডিয়া ক্যু করার সুযোগ নেইজামায়াত ছেড়ে দিলে বিএনপিরর দেমন কোন ক্ষতি হতো না বলেই মনে করি; কারণ জামায়াতের ভোট ব্যাংক কতটা, তা বিএনপিসহ সকলেরই জানা আছেআপাতদৃষ্টে বিএনপির এই ভুলের মাশুল গুনতে হবে কিছুটা সময়
সরকারের তরফ থেকে একাদশ সংসদ নিয়ে আলোচনার একটা কথা উঠেছেআশা করবো বিএনপি সেই সুযোগটা হারাবে নাদশম সংসদ হতে যাচ্ছে আপোসরফার সংসদ- খোদ প্রধানমন্ত্রীই তা বলেছেনএকাদশ সংসদ যাতে তেমন না হয়, বিএনপিকে এখনই সে বিষয়ে ভাবতে হবে।                                                              (চলবে)