রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৪

আশার ভুবনে

আশার ভুবনে

নুরুল্লাহ মাসুম


যন্ত্রণার শেষ দেখনিদেখতে চাও
চলে এসো হিমালয়ের পাদদেশে- একাকী;
দেখবেরিক্ত হস্তে ধ্যানমগ্ন ঋষি বসে হেথায়
নিরস্ত্র-নিরন্ন তবু হতাশা বিহীন এক তান্ত্রিক
নিরবধি কালোত্তীর্ণ মহাপুরুষ- মুক্ত বিহঙ্গে
অবারিত পদচারণায়- কি প্রশান্তি তার মনে!

অবগাহন করবুঝতে পারবে মুক্তি স্বাদ কত মধুর
না পাওয়ার কি যে প্রশান্তি- বুঝতে চেষ্টা কর

হারাবার মাঝেও প্রশান্তির বারতাকত মধুর
বুঝতে পারছউত্তর যদি না বোধক হয়
ফিরে যাও লোকালয়েবিরক্ত করো না তাকে

প্রবল বর্ষণে-কর্ষণে প্রশান্তি যদিবা আছে
প্রচন্ড খরার শান্তির রূপ ভিন্নবুঝতে হবে
ব্যর্থতা তোমারশুধরে নাও। দেখপ্রকৃতির নবরূপ;
এখনও কি বোঝ নিতবে ফিরে যাও লোকালয়ে

বিরক্ত করোনা ধ্যানমগ্ন ঋষিকে ক্ষণিকের তরে
স্বল্পবসনা নিরন্ন ঋষিকে থাকতে দাও বিব্রতহীন
অনাহুত কামনায় তাকে ডেক নাভেঙ্গোনা তার ধ্যান
অনাদিকাল থাকতে দাও তাকেপ্রকৃতির মাঝে
ফেরাবে যদিভাঙ্গবে ঈশ্বরের মনগড়বে কে নতুন ভূবন?

সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪

নতুন করে ভাবতে হবে - উনিশতম পর্ব

উনিশতম পর্ব

গত সপ্তাহে সুন্দরবনের ভেতরে শ্যালা নদীতে একটি তেলবাহী জাহাজ দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে ডুবে গেছেনৌ-পথে নৌযান ডুবে যাওয়া নতুন কিছু নয়এবারের ঘটনাটা একটু ব্যতিক্রমধর্মীউপকূলবর্তী নোনা পানির পরিবেশে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং অখন্ড ম্যানগ্রোভ বনভমি হিসেবে পরিচিত এই সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নৌ-চলাচল নিষিদ্ধি১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের ইউনেস্কো এ বনটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করেএর ভেতর দিয়ে নৌ-চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় বিশেষ ও জরুরী প্রয়োজনে নৌ-যান চলাচলের অনুমতি দিয়েছিল, যদিবা পরিবেশ মন্ত্রণালয় বহুবার সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌ-চলাচল বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।  কে শোনে কার কথা!  অবস্থা দৃষ্টে মনে হতে পারে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় একই বাড়ির দুই সতিনপরিবেশ মন্ত্রণালয় পরিবেশ রক্ষার কথা বলছে, অন্যদিকে নৌ মন্ত্রণালয় মানুষের প্রয়োজনের কথা বলছেশ্যালা নদীতে তেলবাহী জাহাজ ডুবে যাবার পর সম্প্রতি নৌ পরিবহন মন্ত্রী এমনটাই বলেছেন
ঘটনার বর্ণনার কোন প্রয়োজন নেই, কেননা দেশবাসী, তথা বিশ্ববাসী ইতোমধ্যে পুরো ঘটনা জেনে গেছেন; তারা আরো জেনেছেন, সরকারী সংস্থাগুলো পানি থেকে তেল অপসারণে ব্যর্থ হয়ে স্থানীয় অধিবাসীদের সহায়তায় গতানুগতিক পন্থায় তেল অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছেডিজিটাল যুগে আদী পন্থায় কাজ করাটা তেমন সুখের হবার কথা নয়পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশবাদীদের ক্রমাগত আবেদন নিবেদন সত্তে¡ও কেন এবং কার স্বার্থে নিষিদ্ধ নৌপথে নৌ চলাচলের অনুমতি দিল, সেটা একটা বিরাট প্রশ্ন  এবং বিস্ময়ও বটে! যেখানে সাধারণ নৌ চলাচল করার কথা নয়, সেখানে তেলবাহী জাহাজ কেন চলবেবিকল্প পথ হিসেবে যে কোন সময়ে এ পথ ব্যবহৃত হতে পারে; এর অর্থ এই নয় যে, নিয়মিত রুট সংস্কারের কাজ না হওয়ায় বিকল্প পথ’-ই হয়ে উঠবে নিয়মিত পথউপরন্ত জানা গেছে, ডুবে যাওয়া জাহাজটি মূলত তেলবাহী জাহাজ নয়, ওটা ছিল মোডিফাইড জাহাজআরো বিস্ময়ের বিষয় হলো- পরিবেশের জন্য মারাত্মক এই দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কোন কর্তাব্যক্তি ঘটনাস্থাল পরিদর্শন করনে নিপরিবেশ মন্ত্রী ঘটনার সয়ম পেরুতে পরিবেশ সম্মেলন নিয়ে ব্যস্তএমন একটা ঘটনা উন্নত বিশ্বের কথা বাদ দিয়েও বলা যায়, প্রতিবেশী ভারতে ঘটলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী সফর বাতিল করে দেশে ফিরে আসতেনআমাদের দেশে এমনটি হওয়ার কোন সুযোগ (!) নেইনৌ পরিবহন মন্ত্রী তো  বলেই দিলেন বিশেষজ্ঞের মতো করে- ফার্নেস অয়েলে সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হবে না!
ঘটনার পর থেকে টেলিভিশন টক শো গুলোয় কথার ঝড় বইছেনানান মুনির নানান মতকেউ তীব্র ভাষায় সরকারের সমালোচনা করছেন, কেউ বা একটু নরম সুরেতবে সকলেই ঘটনার দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কথা মেনে নিচ্ছেনসরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নিজেদের গা বাঁচিয়ে কথা বলছেনকথায় কথায় প্রধান-মন্ত্রীর তরি সিদ্ধান্তে কথার রেফারেন্স দিয়ে নিজের চেয়ার ঠিক রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেনপ্রধানমন্ত্রী অবশ্য নিয়মিত নৌপথ দ্রুত চালু করার তাগিদ দিয়েছেন, তবে সুন্দবনের ভেতর দিয়ে নৌ চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন নি; এমন কি এটি ব্যবহারে কৃচ্ছতা অবলম্বনের কথাও তারা বলছেন না
সুন্দরবন- বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতে এর অংশ রয়েছে, সেখানে নৌ চলাচলের অনুমতি নেই; আমাদের এখানে থাকবে কেন? একশত নটিক্যাল মাইল ঘুরে যেতে হলে যে ক্ষতি হবেএ পথটি অবিলম্বে বন্ধ করে দেয়া না হলে দেশের ক্ষতির পরিমান আরো বেশী হবে; তাই এ পথে অবিলম্বে নৌ চলাচল বন্ধ করা একান্ত জরুরী
১৯-১২-২০১৪

বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর, ২০১৪

মেদিনীপুত্রের দুঃখগাঁথা

মেদিনীপুত্রের দুঃখগাঁথা
নুরুল্লাহ মাসুম


ঘণ বরষার পরে মেদেনীপুত্র
ভাদরের ভরা জলে ভেসে
আশিনের শিশির ভেজা ঘাসে পা
আনন্দে আত্মহারা-
খোলা আকাশে মেঘের ভেলায়
দিগ্বিদিক ছুঁটে চলে দিনমান

যত প্রেম নীলের সাথে সাথী মেঘবালিকা
শুভ্র কাশফুল বাড়ায় সখ্যতা আরো
পাখির কলতান আর ফুরফুরে হাওয়া
গানের তাল করে মধুরতর
শরতের প্রেমকাহিনী

মেঘবালিকার লুকোচুরি মন কাড়ে
গোধূলীর রক্তিম আভা গাঢ় করে প্রেম
ছুঁটে চলে অসীমের পানে ক্লান্তিহীন
একাকার হয় ছাড়িয়ে সীমানা
আদিগন্তে- নাচে ক্রমাগত মনময়ূরী

সহসা লুকোচুরিহয়ে যায় গুম
রক্তিম আভাহয় ভয়ঙ্কর খুন
থমকে যায় শরতের রথ;
ঝড় ওঠে বুকে শীতল হয় মন-
ঘনিয়ে আসে বিদায়ের পালা
বাংলামায়ের মায়াবি আঁচল ছেড়ে

ইস্টার্ন প্লাজা, ঢাকা
০৫ ১৪৪৬/ ১৯০০ সেপ্টেম্বর ২০১৪
২২ ভাদ্র ১৪২১

বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট, ২০১৪

ফিলস্তিনীদের কাছের বন্ধু বাংলাদেশের মানুষ

ফিলস্তিনীদের কাছের বন্ধু বাংলাদেশের মানুষ
 নুরুল্লাহ মাসুম
      
বাংলাদেশের আপামর জনতা ফিলিস্তিনীদের খুব কাছের বন্ধুপ্রায় চার হাজার মাইল দূরে অবস্থান করেও জায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলের হাতে নির্মমভাবে নির্যাতিত ফিলিস্তিনী জনগণের পাশেই রয়েছে তারা সবসময়; এমনটি ফিলিস্তিনের প্রতিবেশীদের কাছেও পাওয়া যায় না- এমনি কথা বলছিলেন ঢাকাস্থ ফিলিস্তিন দূতাবাসের উপ-মিশন প্রধান ইউসুফ রমাদান৫ আগস্ট মঙ্গলবার সকালে ফিলিস্তিন দূতাবাসে তাঁর সাথে সাপ্তাহিক শারদীয়ার কথা হচ্ছিলআলাপকালে গাজায় ইসরায়েলী হামলার কারণে নিহত ও আহতদের প্রতি সমবেদনা জানাতে দূতাবাসে আগত সকল বাঙালির প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ইউসুফ রমাদান বলেন, বাংলাদেশের জনগণের সাথে ফিলিস্তিনী জনগণের রয়েছে আত্মার সম্পর্কপ্রসঙ্গক্রমে তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন ফিলিস্তিনরে প্রথম প্রেসিডেন্ট ও পিএলওর প্রতষ্ঠিাতা প্রয়াত ইয়াসির আরাফাতকেতিনি বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ সফর করেনবাংলাদেশের স্থপতি ও বাঙালির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ইয়াসির আরাফাতের যেমন গভীর সম্পর্ক ছিল, তেমনি ছিল প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথেইউসুফ রমাদান স্মৃতিচারণ করে বলেন, ইয়াসির আরাফাত প্রায়শই শেখ হাসিনাকে নিজের কন্যা পরিচয় দিতেন, যেমনটি দিতেন বেনজীর ভুট্টোকেতিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলেই বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের বর্তমান জায়গাটি বিনামূল্যে বরাদ্দ দিয়েছিলেন
গাজা, ফিলিস্তিন স্বশাসিত কর্তৃপক্ষের অধীন একটি এলাকা, যেখানে ফিলিস্তিনীদের বসবাসঅন্য একটি অঞ্চল রয়েছে পশ্চিম তীর- সেখানেই রয়েছে মুসলমান, খৃষ্টান ও ইহুদী- তিন ধর্মের পবিত্রস্থান- জেরুজালেমশুরু থেকেই পশ্চিম তীরে শাসন করছে পিএলওর সবচেয়ে বড় সংগঠন আল ফাত্তাহঅন্যদিকে গাজায় প্রাধান্য রয়েছে হামাসের। সম্প্রতি আল ফাত্তাহ ও হামাসের মধ্যে সমঝোতার মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কোয়ালিশন সরকারএতেই ইসরায়েল নাখোশসম্মিলিত ফিলিস্তিনকে মোকাবেলার জন্য নানা অজুহাতে ইসরায়েলসহ পশ্চিমা বিশ্ব হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করতে সচেষ্টইসরায়েল হামাসকে দমনসহ অন্যান্য নানা অজুহাতে গাজায় হামলা চালাচ্ছে; যদিও এই হামলায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গাজার শিশু ও নারীসহ সাধারণ মানুষইউসুফ রমাদান মনে করেন, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ যে কারণেই হামলা করুক না কেন, তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ফিলিস্তিনী অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় ইহুদী বসতি বাড়ানোপ্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, বাইবেলে ২৫০ বারেরও বেশী উল্লেখ করা ফিলিস্তিননামটির মূল হিব্রæ উচ্চারণ হচ্ছে ফিলিসিট’- যেটি ইংরেজীতে ফিলিস্তিয়াহিসেবে অনূদিত হয়েছেতবে ল্যাটিন উচ্চারণ প্যালেস্টাইনখুব বেশী সমাদৃত হয়ে আসছেআরবীতেও ফিলিস্তিনউচ্চারিত হয়এই ফিলিস্তিনএলাকার রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস, সে ভিন্ন প্রসঙ্গ
  
   
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে জাতিসংঘের ছত্রচ্ছায়ায় বৃটিশরা সারা বিশ্বের ইহুদীদের একত্রিত করে ইসরায়েলনামে এক অদ্ভুত রাষ্ট্রের পত্তন ঘটায় ১৯৪৮ সালেমূলত খৃষ্টান ও মুসলমান অধ্যুষিত ফিলিস্তিন এলাকায় গড়ে ওঠে এক ইহুদী রাষ্ট্র, যা কিনা আজো বহু মুসলিম দেশ কর্তৃক স্বীকৃতি পায়নিইউসুফ রমাদান এর ভাষায় ১৯৪৮ সালের আগে ফিলিস্তিন ভূ-খন্ডে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১৫ শতাংশ ছিল খৃষ্টান, ৭ শতাংশ ছিল ইহুদী এবং ৭৮ শতাংশ ছিল মুসলমানবৃটেন ও পশ্চিমা বিশ্বের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভের পর প্রায় সাত লক্ষ মুসলমান দেশত্যাগে বাধ্য হয় এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে আরব ও ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে বহু মুসলমান মৃত্যুবরণ করে এবং তার চেয়েও বেশী মুসলমান দেশত্যাগে বাধ্য হয়ফলে মূল ফিলিস্তিন ভূ-খন্ডে মুসলমান জনসংখ্যা ক্রমাগত কমে আসতে থাকেজাতিসংঘের দেয়া সীমা অতিক্রম করে ইসরায়েল তাদের জনবসতি বাড়ানোর প্রক্রিয়া অব্যহত রাখে এবং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইহুদীদের নিয়ে এসে পুনর্বাসিত করে মুসলমানদের নিজভূমি ফিলিস্তিনে
সর্বশেষ ২০১৪ সালে মুসলমানদের পবিত্র সিয়াম সাধনার মাসে ইসরায়েল আবারো হামলা চালায় গাজায়, হামাসকে শিক্ষা দেবার নামে; ফলাফল সহস্রাধিক নিরীহ নারী ও শিশুর নির্মম মৃত্যুপুরো বিশ্বকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে, মানবতাবদীদের অবাক করা নীরবতার মধ্য দিয়ে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ক্রমাগত মানবতা বিরোধী অপরাধ করে চলেছে ফিলিস্তিনেবিশ্বব্যাপী শান্তিপ্রিয় মানুষ প্রতিবাদ করে চলেছে নিজ নিজ অবস্থানে থেকেবাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়ইউসুফ রমাদান জানান, তাদের এমন দুর্দিনে বহু বাংলাদেশী দূতাবাসে উপস্থিত হয়ে সমবেদনা জানানোসহ তাদের সাধ্যমত নানান রকম সহায়তা প্রদান করেছেনবাংলাদেশ সরকারও ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছেসাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নিজে দূতাবাসে উপস্থিত হয়ে সমবেদনা জানিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে গেছেন এবং অর্থসহয়তাও দিয়েছেনইউসুফ রমাদান বাংলাদেশ সরকার ও সকল বাঙালির প্রতি এই সহমর্মিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানপ্রসঙ্গত তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে দলই সরকারে থাকুক না কেন, ফিলিস্তিনিরা বাংলাদেশের সহমর্মিতা পেয়েছে সবমসময়। 
ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানো যাক, মধ্যসাগর বিধৌত ফিলিস্তিনের প্রায় ২৭ হাজার বর্গকিলোমিটার ভূমির ৭৬ শতাংশ দখল করে প্রতিষ্ঠা করা হয় ইসরায়েল রাষ্ট্র১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের ১৯৪ নম্বর সিদ্ধান্ত মোকাবেক ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল নামক দুটি রাষ্ট্র ঘোষণার ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, we agreed to establish the State of Palestine on only 22%  of the territory of historical Palestine- on all the Palestinian Territory occupied by Israel in 1967.  পশ্চিম তীর ও গাজা নিয়ে গঠিত ফিলিস্তিনের  সেই ২২ শতাংশ জায়গাও ইহুদী বসতি স্থাপনের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের সংখ্যা সংকুচিত করার প্রয়াস চলছেফিলিস্তিনীদের দাবী, স্বাধীন ফিলিস্তিন হবে ইহুদী, খৃষ্টান ও মুসলমানদের সম্মিলিত নিরপেক্ষ এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রপক্ষান্তরে ইসরয়েল চাইছে দেশটি হবে একটি ইহুদী রাষ্ট্র।  তারা জাতিসংঘের দেয়া সীমানা চুক্তিও মানতে চাইছে নাএমনি সময়ে দুর্ভাগ্যজনক হলেও ফিলিস্তিনীদের পাশে নেই আরব রাষ্ট্রগুলোমুসলিম বিশ্বের বৃহ সংস্থা ওআইসি কেন সরব নয় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে? জাতিসংঘ এমন অবস্থায় বরাবরের মত বিবৃতি দিয়ে ক্ষান্ত রয়েছেবিশ্বের সকল শান্তিপ্রিয় মানুষেরমত বাংলাদেশর জনগণও চায় ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক, ফিলিস্তিনের মুসলমানরা নিজ দেশে শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ পাক

০৭-০৮-২০১৪

বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০১৪

স্বপ্নের ভগ্নাংশ

স্বপ্নের ভগ্নাংশ

নুরুল্লাহ মাসুম

কাঠ-ফাঁটা রোদের তীব্রতা নিয়ে পুরো দিনটা কাটে ফাহিমের। দহন যন্ত্রণা কেবল প্রকৃতির মাঝে নয় তার মনেও রয়েছে ভীষণ তৃষ্ণা। দিনভর মতিঝিল পাড়ায় ঘুরে মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে রয়েছে তার। সাধারণত সন্ধ্যার পর শাহবাগে ক্ষাণিকটা আড্ডা দিয়ে ঘরে ফেরার অভ্যেস বহুদিনের; ব্যতিক্রম হয়নি আজও। তবে দহনের তীব্রতা আড্ডার সীমানা খাটো করে দেয়। আড্ডার সাথীরা বেশীক্ষণ থাকতে চায়নি বলেই ফাহিমকে কিছু জলদি ফিরতে হয় নীড়ে। নীড়ে ফেরার আনন্দ যেমন আছে, রয়েছে তেমনি দুর্দশাও। রীতিমত কুস্তি লড়ে চার-চাকার বাহনে নীড়ে ফিরতে গিয়ে নিয়ত গলদঘর্ম হতে হয় ফাহিমসহ বাহনের সকলকেই। তবু ফিরতে তো হবেই।

লিফটের ‘তিন’ বাটনে ‘পুশ’ করে একটু ঝিমিয়ে নেয় ফাহিম। হ্যা, ওর নতুন নীড়ের রশিটানা ‘লিফট’ এতটাই ভদ্র যে, কখনো দৌড়ায় না, হাঁটেও না; মনে হয় হামাগুড়ি দিয়ে চলে। হামাগুড়ি দিয়ে কি ওপরে ওঠা যায়? তবু এক সময়ে উঠে যায় চার তলায় ওর নিজের নীড়ে।
বৈদ্যুতিক পাখাটা পুরো দমে ছেড়ে দিয়ে কাপড় পরিবর্তন করতে গিয়ে বোঝে, ক্লান্তি কাকে বলে! খুব দ্রুততার সাথে গোসলপর্ব সম্পন্ন করতে এক রকম দৌড়ে গোসলখানায় প্রবেশ করে সে। প্রায় আধা ঘন্টা সেথায় কাটিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত শীতল করে ফিরে আসে শোবার ঘরে। তখনই মনে হয় পেটে সাইক্লোন বয়ে যাচ্ছে। হাভাতের মত রান্না ঘরে গিয়ে ফ্রিজ খোলে খাবার খোঁজে। যা পায় তাই নিয়ে ওভেনে গরম করে খাবার টেবিলে। ফাহিমের একজন অতিথি কাজের বুয়া আছে, যে কিনা সপ্তাহে দুই এসে রান্না করে দিয়ে যায়, বাকী পাঁচ দিন ওভেনে গরম করে খায়। এটা অবশ্য কেবল রাতের বেলায় প্রযোজ্য- দিনে খাবার পর্ব সারে পথে-ঘাটে। না, তার খাবারের কোন বাছ-বিচার নেই, সবখানেই সে খেয়ে অভ্যস্থ। 
গোগ্রাসে খাবার শেষ করে বুঝতে পারে তার অবস্থা সাইক্লোন শেষে প্রকৃতির মত বিব্ধস্ত। তাই বিলম্ব করার সময় তার মেলে না। আট শ’ মিটার দৌড় শেষে দৌড়বিদ যেমন করে গন্তব্যে পৌঁছে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, ঠিক তেমনি করে সিডরের গতিতে খাওয়া পর্ব শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় ফাহিম।
তখনি চোখের সামনে, মনের সেলুলয়েডে ভেসে ওঠে করবী আর মঞ্জুরী। অনেকের মাঝে হঠাৎ ওদের কথা কেন মনে হল, তা অবশ্য ফাহিম জানে না। দু’জন দুই প্রান্তের- ভিন্ন মেরুর মানুষ; তবু ওরা দু’জনেই তার কাছে খুব প্রিয়। খেয়ালের বসে হাতে তুলে নেয় মোবাইল ফোনটা, লিখতে থাকে শর্ট মেসেজ যা এসএমএস নামে বহুল পরিচিত। সে লেখে:
“দিগন্ত ছেয়ে যায় কালো মেঘে
আঁধার নেমে আসে মনে
বাদলা দিনতো নয় আজ
তবু কেন চোখে বাদল নামে?”
লেখা হয়ে গেলে করবী আর মঞ্জুরীর নম্বরে পাঠিয়ে দেয়। এরপর আর কিছু মনে নেই; ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায় ফাহিম ক্লান্ত দেহ-মন নিয়ে।
*** *** *** ***
শান্ত গাঁয়ের শান্ত নদী, নদী না বলে খাল বলাই ভাল। সেই খালে তীর ঘেঁসে ছোট্ট একখানি গাও। গাঁয়ের মাঝামাঝি একটি বাড়ী, গ্রামের বাড়ী যেমনটি হয়। উঁচু মাটির ভিটেয় কাঠের খুটিতে দাড়িয়ে আছে চার-চালা ঘর। মূল ভিত্তিতে মূল ঘরের ওপরে টিনের ছাউনি, চারদিকে চার-চারটি বারান্দা; ওগুলোর ছাউনি গোল পাতার। নাম ‘গোলপাতা’ হলেও পাতাগুলো মোটেও ‘গোল’ নয়। সুন্দরবনের অন্যতম অর্থ উপার্জনকারী এই গোলপাতা হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। গোলপাতার আড়ালে থেকেই টাইগার বাহাদুর শিকার খোঁজে এবং শিকার করে থাকে। সেই গোলপাতা মনুষ্যালয়ে এসে মানুষের আশ্রয়ের অন্যতম উপাদান হয়ে ওঠে- কি অদ্ভুত এই দেশ! 
মূল আবাসনের একটু দূরে আরেকটি দো-চালা ঘর, এটির ছাউনি শুধুই গোলপাতার; এখানে রান্নার কাজটি হয়। মা-বোনেরা একরকম দিনভর এখানেই পড়ে থাকেন। রান্নাঘরের পাশ দিয়ে হালকা সুরকী বিছানো সরু রাস্তা সোজা চলে গেছে খালের ধারে। এখানে রয়েছে শান বাঁধানো ঘাট। ঘাটটিকে ঘিরে খালে মাঝে বাঁশের খুটি দিয়ে তৈরী করা হয়েছে প্রাইভেট এরিয়া; যাতে করে বৌ-ঝিরা ঘাটে গেলে নদীপথের অন্য কারো চোখে না পড়ে। দেয়াল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে সুপারী গাছের বাঁকলসহ পাতা। প্রতি বছর অবশ্য এটি নতুন করে দিতে হয়, বদলাতে হয়। এ ঘাটেই মা-বোনেরা, অন্য বাড়ীর বৌ-ঝিরা পর্যন্ত গোসল করে থাকে, কেউ কেউ ঘাটকে কেন্দ্র করে সাঁতারও কাটে।
ফাহিম যখন ঘাটের কাছে পৌঁছায়, হাতে ছোট্ট একটি ট্যাভেল ব্যাগ নিয়ে; মা তখন ঘাটে বাসন-কোস ধোঁয়ার কাজ করছেন। কত্ত বছর পরে ফাহিম সেখানে, মনে করতে চেষ্টা করে- বছর তিরিশ বছর তো হবেই। মা এখনো নিজ হাতে ঘাটে কাজ করছে দেখে কষ্ট লাগে তার। ফাহিমকে দেখে মা বলেন:
- ঘরে লবন নেইরে, বাজার থেকে লবন এনে দিবি বাবা?
ফাহিমের মাথায় বাজ পড়ে। এতকিছু থাকতে মা লবন সংকটের কথা বললেন কেন? সে আরো অবাক হয় যখন মা আবারো বলেন:
- বেশী লাগবে না, একপোয়া আনলেই হবে। লবনের যা দাম বেড়েছে!
- কত হয়েছে মা?
- বলিস না, একসের লবন এখন ৬৪০ টাকায় বিক্রি হয়, তাইতো এত অভাব। লবন ছাড়া কি একবেলা খাবার চলে?
মায়ের কথা শেষ হলে ফাহিম ঘরের দিকে পা বাড়ায়, ঘরে ফেরা হয় না তার। বড় বোনটা সামনে এগিয়ে আসে; ওর থেকে দু’ বছরের বড় সে। দেখতে এখনো তেমনি আছে। শুধু চোখের নিচে একটু কালো দাগ- এই যা। বোনটি তার হাতের ব্যাগটা নিয়ে ঘরে যায়, ফাহিম বাজারের দিকে পা বাড়ায়।
*** *** *** ***
শিপইয়ার্ডের বিশাল এলাকার সামনে দিয়ে যেতে যেতে ফাহিমের মনে পড়ে পঁচিশ বছর আগের কথা। একসময়ে সে এখানে কাজ করতো। সাথী ছিল অনেকে, আজ আর তেমন কারো সাথে যোগাযোগ নেই। মাঝে মধ্যে মোবাইলে কথা হয় মাজহারের সাথে। মাহজার এখন এখানকার সবচেয়ে বড় কর্তা। একবার ভাবে মাজহারের সাথে দেখা করবে সে। তবে তার আগে সে যে কাজে এসেছে সেটা শেষ করতে চায় ফাহিম। তাই মাজহারের অফিস ডান দিনে জানা সত্তে¡ও বাম দিকে রিক্সা ঘোরাতে বলে, চলে যায় নদীর ধারে- সেদিনের সেই ছোট্ট রেস্টুরেন্টের কাছে।
সেখানে গিয়ে তাকে অবাক হতে হয়; কোথায় সেই রেস্টুরেন্ট, কোথায় তার মালিক কাম ম্যানেজার গোবিন্দ! ফাহিমের আজো মনে আছে, গোবিন্দের হাতে বানানো ছোট্ট ছোট্ট সিংগারা খেতে কত দূর থেকে মানুষ আসতো! প্রতিদিন বিকেলে ফাহিমরা দলবেধে সিংগারা খেতে বসতো। সেখানে আজ ডিপার্টমেন্ট স্টোর। সেটির সামনে দাঁড়িয়ে চোখে জল আসে তার। খুঁজে বেড়ায় সেই তিরিশ বছর আগের স্মৃতি। হঠাৎ করেই নজরে আসে দূরে একটি লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন পাটওয়ারী ও শহীদুল্লাহ সাহেব। দ্রুত কাছে যায় সে; এগিয়ে আসেন পাটওয়ারী সাহেব; বুকে টেনে নেন ফাহিমকে। কতদিন পরে দেখা তাদের। বড্ড ভাল মানুষ ছিলেন তিনি, একসাথে কাজ করতে গিয়ে ফাহিমকে তিনি বহুবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন; ফাহিম তা ভোলেনি। ফাহিম অবাক হলো যখন জানতে পারলো- পাটওয়ারী সাহেব এখনও এখানে কাজ করছেন! এই বয়সে তিনি কাজ করছেন, শরীরটাও ঠিক আছে দেখে ফাহিমের মনে হলো কেবল ও নিজেই বুড়িয়ে গেছে- পাটওয়ারী সাহেব নন। কথা হলো শহীদুল্লাহ সাহেবের সাথেও, তিনি পাটওয়ারী সাহেবের মত অতটা আন্তরিক হতে পারলেন না; কেবলি ভদ্রতা বজায় রাখার মত কিছু কথা হলো। ফাহিম ভেবে পায় না, কেন এমনটি হলো। অথচ, ফাহিম যখন এখানে কাজে যোগদান করেছিল, সে সময়ে এই শহীদুল্লাহ সাহেবের সাথেই তার এটাচমেন্ট ছিল, এক কথায় ফাহিমের ডাইরেক্ট ‘বস’ ছিলেন শহীদুল্লাহ সাহেব। সেই ‘বস’ তাকে সহজভাবে নিতে পারলো না কেন এতদিন পরে? শহীদুল্লাহ সাহেবও তেমন একটা বুড়িয়ে যাননি- বেশ শক্ত-সামর্থ বলেই মনে হলো তাকে।
এমনি সময় বিউগলের সুর ভেসে এলো কানে; সকলে যে যেখানে ছিল, সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল- ফাহিমও। ফাহিমের মনে আছে, প্রতিদিন সকাল আটটায় বিউগলের মুর্চ্ছনায় অফিসের কাজ শুরু হতো। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হতো কেন্দ্রীয়ভাবে। সে সময়ে সকলকে দাঁড়িয়ে যেতে হতো নিজ নিজ অবস্থানে- ঠিক যেন সামরিক বাহিনীর দৈনন্দিন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
বিউগলের মুর্চ্ছনা থেমে যাবার পর দ্রুততার সাথে পাটওয়ারী ও শহীদুল্লাহ সাহেব চলে গেলেন বিশাল গেট পেড়িয়ে ভেতরে নিজ কাজে। বিদায় জানালেন হাত নেড়ে; ফাহিম ঠাঁয় দাড়িয়ে রইল ক্ষাণিক্ষণ বিমর্ষ বদনে।
*** *** *** ***
গ্যারিসন অডিটোরিয়াম; সাধারণত সেনাদের বিনোদনের জন্য তৈরী হয়ে থাকে সেনাদের কর্মস্থল বা আবসস্থলের কাছাকাছি। তেমনি এক গ্যারিসন অডিটোরিয়ামের সামনে অসংখ্য মানুষের ভীড়। এত ভীরের মাঝে কাউকে খুঁজতেই ফাহিমের এখানটায় আগমন। তবে সাধারণ ভীড়ের চেয়ে একটু বেশী জনসমাগম দেখে তার কাছে অবকা লাগে। এদিক ওদিক তাকিয়ে বেশী জনসমাগমের কারণ বুঝতে চেষ্টা করে। তখনি মাসুদের ডাকে থমকে দাড়ায় সে। মাসুদ; এক সময়ে তাদের অফিসের বহুতল ভবনের নিরপত্তা কর্মী ছিল সে। মাসুম সামনে এসে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে বেশ ভদ্রতার সাথে। বেশ অমায়িক ছেলে মাসুদ। ফাহিমও তাকে বেশ পছন্দ করতো। হঠাৎ করেই একদিন জানলো, মাসুদ চাকরী ছেড়ে দিয়েছে। কোথায় গেছে তা খোঁজার সময় যেমন হয়নি, দরকারও মনে করেনি। শরতের এই স্নিগ্ধ বিকেলে গ্যারিসন অডিটোরিয়ামের সামনে মাসুদকে দেখতে পাবে তা সে ভাবেনি। 
জানলো, মাসুদ চাকরী ছেড়ে দিয়ে নৌ-বাহিনীতে নাবিক হিসেবে যোগ দিয়েছিল; এখন এই বেইজেই তার পোস্টিং। সাথে একটি মেয়ে- নাম ফিরোজা; তার মনটা বিমর্ষ। মনে হলো মাসুদ তাকে সান্তনা দিচ্ছে। জানা গেল- ফিরোজা নাবিক হিসেবে যোগদানের জন্য রাইনে দাড়িয়েছিল, নির্বাচিত হয়নি; তাই মনটা খারাপ- কষ্টও আছে। অভাবের সংসারে তার একটা চাকরী অতীব প্রয়োজন। দেখতে বেশ সুন্দর, না গায়ের রঙ নয়, শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য হতে যেমনটি দরকার, তেমন শারীরিক গঠন তার। গায়ের রঙটা বাদ দিলে যে কোন পুরুষের মনের নারী হবার যোগ্য সে। লেখা-পড়া তেমন নেই বলেই নাবিক হবার জন্য তার এই আকুতি। নিয়মিত বেতন আর সমাজের চোখে ভাল একটা অবস্থান- ফিরোজা চাইতেই পারে। হয়নি, তার আশার প‚রণ হয়নি বলেই মনের দুঃখটা তাতেিয় উঠেছে। মাসুদের সাথে ফহিমও ফিরোজাকে বোঝাতে চায়, এবার হয়নি তাতে কি? আবারো চেষ্টা করো; হয়ে যেতে পারে। সাধ মেটে না যার, তাকে শান্তা দিয়ে কুব বেশী একটা লাভ হয় না, ফাহিম তা জানে; তাই বেশী কথা বলে না। মাসুম ভালই আছে মনে হলো নতুন চাকুরীতে। ফিরোজা তার কে- তা জানতে চায় না ফাহিম।
মাসুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজ কাজে এগােয় ফাহিম। পেছন থেকে কেউ একজন দৌড়ে তার কাছে আসছে বুঝতে পেরে দাড়ায় ফাহিম। একটি মেয়ে ফিরোজার থেকে কিছুটা পরিস্কার গায়ের রঙ, তবে ততটা লম্বাা নয়। এসে সালাম দেয় ফাহিমকে। নিজের পরিচয় দিয়ে বলে, আমি তুলি, ফিরোজার ছোট বোন। আজকে তার চাকরী হয়েছে নাবিক হিসেবে। উচ্চমাদ্যমিক পাশ করেছে সে; চাকরীটা হওয়ায় সে বেজায় খুশী; তবে মনটা খারাপ ফিরোজার চাকরী না হওয়ায়। বয়সের কারণে আগামীতে নাবিক হওয়ার আর কোন সুযোগ থাকবে না ফিরোজার। তুলি নিজের অনেক কথা বলে ফাহিমের কাছে দোয়া চাইলো এবং দ্রুততার সাথে বিদায় নিয়ে চলে গেল। ফাহিম অবাক হয়, তুলি কেন দৌড়ে এসে পরিচয় দিল আবার কেনইবা দ্রুত চলে গেল। সব বিষয়ে কারণ খোঁজার অভ্যাস নেই ফাহিমের, তাই মিনিট খানেকের মধ্যে ফাহিমের হিসাবের খাতা থেকে তুলিও বিদায় নিল। আবারো বীড়ের মধ্যে হারিয়ে যায় ফাহিম; তাকে সামনে এগুতে হবে। খঁজতে হবে হাবিবকে।
*** *** *** ***
ভাইয়ের চির বিদায়ের পর দাফন সম্পন্ন করে ফিরে আসছে সকলে; সকলের মন বিষন্ন। ফাহিমের মনটা একটু বেশীই বিষন্ন! পরকালের ওপর বিশ্বাস থাকা বা না থাকা নিয়ে অনেকের বিশ্বাসের সাথে তার বিশ্বাসের ব্যবধান রয়েছে। ফলত মৃত ব্যক্তির শেষকৃত্যে ফাহিমের উপস্থিতি অনেকেই ভাল চোখে দেখেনি। ফাহিম সে বিষয় নিয়ে না ভাবলেও ওর মনটা খারাপ অন্য কারণে। আজকে যে অবস্থানে ফাহিম, সেখানে আসার জন্য প্রয়াত ভাইটির অবদান রয়েছে বলেই ফাহিমের খুব খারাপ লাগছে। আর কোনদির দেখা হবে না তাঁর সাথে। কেবলি স্মৃতি হাতরে বেড়াতে হবে; মনের পর্দায় তাঁকে নানানভাবে আবিস্কার করা গেলেও বাস্তবে তাঁর কণ্ঠস্বর আর কোন দিন শোনা যাবে না। ধমকের সুরে আর বলবেন না ‘ফেলে দাও বলছি’। অথবা আদরের সুরে এ কথাও আর শোনা যাবে না তাঁর কণ্ঠে ‘কবিতা লিখে কি হবে, ছোট গল্প লেখ, তোমার গল্পের হাত বড্ড ভাল’। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে সিডরের গতিতে ফাহিমের নাসিকা থেকে। অবাক হয় সে, কতদিন সে তার ভাইয়ে সাক্ষাৎ পায়নি। হাসপাতালের বিছানায় যখন আবারো দেখা হলো, ভাইটি তার রাগ বা অভিমান করেন নি; কেবলি জানতে চেয়েছিলেন- লেখালেখি কেমন চলছে তোমার। কত্ত আদর মাখা কণ্ঠে সেই কথাগুলো উচ্চারিত হয়েছিল ভাইয়ের কণ্ঠে, ফাহিম পরিমাপ করতে পারে না। 
সেই ভাইকে মাটির নিজে শুইয়ে দিয়ে, চিরবিদায় জানিয়ে যখন সকলে ফিরে আসছে; ইচ্ছে করেই অন্যদের থেকে ফাহিম কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে পথ চলে। সকলে ফিরে যেতে থাকে নিজ নিজ গন্তব্যে। রাত তখন নয়টার কাছাকাছি; অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে অন্ধকার রাস্তার ওপর। আকাশে চাঁদ নেই, নেই কোন মেঘের চিহ্ন। স্তব্ধ হয়ে গেছে বাতাসের গতি; ঠিক যেন ফাহিমের মত। দ্রুত একটা সিগারেট মুখে তুলে আগুন ধরায়। নাহ্, সিগারেটটাও তেতো লাগে তার কাছে; দু’টান দিয়ে ফেলে দেয় সে। একটা অপরাধবোধ জাগে তার মনে। সে কি তার ভাইয়ের সাথে অন্যায় করেছে? তার কি কোন দায়িত্ববোধ ছিল না ভাইয়ের প্রতি? সবাই যখন চলে যায়, ফাহিম ভাবে, ভাবীর সাথে দেখা করবে; কি বলে সান্তনা দেবে ভাবীকে? পুরো শরীর ঘেমে একাকার হয় তার। রাস্তার ধারে অন্য কোন বাড়ীর পুকুরে গাছ ফেলে বানানো ঘাটে বসে মুখে পানি ছিটিয়ে শান্ত হবার ব্যর্থ চেষ্টা করে সে; শরীরও ঠান্ডা হয় না- মনতো নয়ই।
*** *** *** ***
নদীর ধারে গিয়ে মাজহারের সাথে তার ঘটে যাওয়া বহু ঘটনার কথা মনে হয়। প্রায় তিন যুগ হতে চললো ওদের বিচ্ছেদ; এরপর কত কিছু ঘটে গেল। মাজহার জানে অনেক কিছুই, কথাও হয়- তবু সাক্ষাৎ হয় না। জীবন এমন কেন? প্রশ্নটা বারংবার নিজেকেই করেছে ফাহিম। একসাথে রাত জেগে ভিসিআর-এ নানান ধরণের ছবি দেখার একমাত্র স্বাক্ষী এই মাজহার। এককালের প্রমত্তা ভৈরব নদীর তীরে কতদিন একসাথে কাটিয়েছে ফাহিম আর মাজহার। বয়সে ওরা কাছাকাছিই হবে। কেউ কারো বয়স জানতে চায়নি ওরা। মাজহারের সাইকেলে চড়ে চিত্রা তীরেও ওরা বেড়িয়েছে কতদিন। চিত্রাবক্ষে পানসিতে করে ভেসে বেড়ানোর স্মৃতি ফাহিম আজো ভুলতে পারেনি। নদীর ধারে এসে গোবিন্দের দেখা পায় সে। গোবিন্দ ফাহিমকে চিনতে পারে না। অনেক স্মৃতি সামনে নিয়ে এলেও গোবিন্দ কিছুই মনে করতে পারে না। গোবিন্দের বয়স বেড়েছে। গোবিন্দদের বয়স বাড়ে, পাটওয়ারী বা শহীদুল্লাদের বয়স বাড়েনা। হতাশ হলেও হাল ছাড়ে না ফাহিম; মাজহারের কথা বলে, মাজহারকে গোবিন্দ আজও চেনে, সে এখানকার মস্ত অফিসার। তাকে না চিনলে চলে কি করে! বিদায় বেলা গোবিন্দ দুঃখ করে বলে:
- আপনাকে চিনতে বা মনে করতে পারছি না, মাফ করে দেবেন বাবু। ক’দিন আর বাঁচবো বলুন!
হাসিমুখে বিদায় নিয়ে একটা রিক্সা ডাকে ফাহিম, গন্তব্য দেয়ালের চারিধার ঘুরে মাজহারের অফিস। গোবিন্দের ভাষায় সেখানেই এখানকার বড় বাবুর অফিস।
*** *** *** ***
ঘুম ভেঙ্গে যায় ফাহিমের। বিছানার পাশেই ছোট্ট টেবিলে চায়ের মগে পিঁপড়ার সারি। সময় দেখে - রাত ৪টা বেজে ১৭ মিনিট। ভীষণ তৃষ্ণা জাগে। উঠে গিয়ে গলায় পানি ঢালে। পিঁপড়ের দখলে থাকা চায়ের মগটা সিঙ্কে নিয়ে ধুয়ে ফেলতে গিয়ে মনে পড়ে, ঘুমাতে যাবার আগে নিজ হাতে চা তৈরী করেছিল, ক্লান্তিতে ঘুমপরী একটু জলদী এসে যাওয়ায় মগের চা মগেই থেকে যায়; খাওয়া হয়নি। আবারো পানি গরম করতে দিয়ে বিছানায় ফিরে যায় সে, অভ্যাসবশত মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে দু’ দুটো মেসেজ জমে আছে ইনবক্সে। চশমাটা চোখে লাগিয়ে মেসে দু’টো পড়তে থাকে।
মঞ্জুরী লিখেছে:
“যখন প্রচন্ড খরতাপে তেঁতে ওঠে
বাতাস বাষ্প ধরে রাখার ক্ষমতা হারায়
তখন তো বাদল নেমে আসবেই”
করবীর পাঠানো মেসেজটা এরকম:
“অয়ময়ের চোখ বাদল
বদলে কি গেল ধরণীতল?”
দু’জনের দু’রকম মেসেজ- একই মেসেজের উত্তরে। ওদের ভাবনার ধরণ এবং চিন্তার ক্ষেত্র নিয়ে ভাবতে চায় ফাহিম। হঠাৎ মনে হয়, উনানে চায়ের পানি ফুটছে। 
ক্ষাণিকবাদে চায়ের মগ নিয়ে আবারো বিছানায়। এবার ভাবে, পিঁপড়েদের খোরাক হতে দেয়া যাবে না। তাই চায়ের মগ হাতে নিয়ে ব্যালকুনীতে গিয়ে বসে সে। কৃষ্ণপক্ষের একদশী, শেষ রাতে খন্ডিত বাঁকা চাঁদ আকাশে- যাকে লাল রঙে রঞ্জিত করে দেশের কর্তারা বলছেন ‘রেড ক্রিসেন্ট’। চাঁদের বুড়ি নিশ্চয়ই ক্ষেপে আছেন- রূপালী চাঁদকে যখন ‘রক্তে রঞ্জিত’ করা হয়, তখন চাঁদের বুড়ি ক্ষেপবেনইবা না কেন? মাসের অন্তত পনেরটা দিন অমন স্নিগ্ধ রূপালী চাঁদ ততধিক স্নিগ্ধ আলোয় ভাসিয়ে রাখে পুরো পৃথিবী; অথচ ক্ষমতার দাপটে সেই চাঁদের স্নিগ্ধতা উপেক্ষা করে তাকে ‘রেড ক্রিসেন্ট’ মানে কি না ‘রক্তিম চাঁদ’ বলে! এনিয়ে ফাহিম আর বেশী ভাবতে চায় না। শেষ গ্রীষ্মের দহনের মাঝে নতুন আরেকটি দিনের ঊষালগ্নে প্রকৃতিকে তার কাছে বেশ ভাল লাগে। তার মনে হয়, প্রকৃতি উদার হস্তে তাকে আহ্বান জানাচ্ছে:
“আয় চলে আয় আমার মাঝে
তোকেই কেবল চাই রে বন্ধু
সকাল দুপুর বিকেল সাঁঝে
কেন তবে মাঝে এত বড় সিন্ধু!”
পূর্বাকাশ ক্রমশ পরিস্কার হয়ে আসছে। মৃদুমন্দ হাওয়ায় প্রকৃতি নাচতে শুরু করেছে। ফাহিমের মনটাও অজানা এক আনন্দে নেচে উঠতে চাইছে। আর ঘন্টা কয়েক পরেই শুরু হবে দাবদাহের মাঝে আরো একটি দিনের পথচলা...... এ যেন নিরন্তর পথচলা, যা কোন শেষ নেই। ফাহিমের মনে হয়, এর চেয়ে বরং জীবনটা যদি হতো টুকরো টুকরো স্বপ্নে এক মহাসম্মিলন হত, যা কেবলি আনন্দ দেবে; কষ্ট দেবে না।

মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০১৪

বাতাসে আগুন






বাতাসে আগুন
নুরুল্লাহ মাসুম

ফিলিস্তিনের বাতাসে বারুদের গন্ধ
মরুপ্রকৃতি আগুনের হল্কায় পুড়ে ছাই
ভিটেহারা মানুষ দিগ্বিদিক ছুঁটছে
শিশুর কান্নায় ভেজে না মানবতাবাদীর মন

সন্তানহারা মা কাঁদেন অশ্রুহীন নয়নে
বিশ্ববাসী অবাক তাকিয়ে রয়
শিশুর এমন মৃত্যু কবে দেখেছে বিশ্ব!

গোল্ডামায়ার, রবিন, বেগিন, শামির,
পেরেজ, এহুদ বারাক, ওলমার্ট
নেতানিয়াহু- ওরা অনেক
কেবল আরাফাত আর আব্বাস-
নিজেদের সামলাতে পারে না; বিশ্ব নেই সাথে

অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে ফাত্তাহ আর হামাস
একপথে চলতে চায়- ফিরে দেখে না ইতিহাস
ভুলে যায় সংগ্রামের কথা- ওরা মধ্যপন্থী
কেউ বা অতিশয় গোঁড়া; শিশুদের বানায় বর্ম
খুঁটির জোর মেপে দেখে না; এটা বোকামী না
অন্য কিছু বলবো- ভেবে সাহস পাই না!

একদল বলে আমার জনগণ আমার সম্পদ
অন্যদল বলে আমরা জনগণের সম্পদ
জনতার আত্মত্যাগ হবে ভবিষ্যতের জন্য;
অন্যরা ওদের মারে নিজ জনতার স্বার্থে
বিশ্ব দেখে তামাসা, ব্যবসায়ী লাভবান অস্ত্র বেঁচে
নেতাদের চোখে ঘুম- সেখানে সব তমাসাচ্ছন্ন

বাতাসের আগুন উত্তাপ বাড়ায় প্রকৃতির
কেউ পুড়ে যায়, কেউ বা উত্তাপ নেয়


ইস্টার্ন প্লাজা, ঢাকা
১৫ ২০৩০ জুলাই ২০১৪

বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০১৪

নতুন করে ভাবতে হবে –অষ্টাদশ পর্ব

অষ্টাদশ পর্ব

গত সোমবার এলিট ফোর্স অধিনায়ক জানিয়েছেন এখন থেকে র‌্যাব নিয়মিত টহল দেবে না, কোন ধরণের তল্লাশী কাজে অংশ নেবে নাএমনকি দরপত্র বা· পাহারা, জমিজমা ও টাকা লেনদেন সংক্রান্ত সমস্যা এবং পারিবারিক বিরোধ নিয়েও এখন থেকে ধরণের কর্মকান্ডে অংশ নেবে না র‌্যাবইতোমধ্যে র‌্যাবের প্রত্যেক ব্যাটালিয়নকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেনর‌্যাব নির্ধারিত সাত মৌলিক কাজের বাইরে বা অন্য কোনো ধরণের বাড়তি কর্মকান্ডে অংশ নেবে নার‌্যাবের সাত দায়িত্বের মধ্যে আছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত, সশস্ত্র জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের আটক করা, অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ-বিস্ফোরক দ্রব্যসহ সব ধরণের অবৈধ দ্রব্য উদ্ধার করা, অন্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করা, গোয়েন্দা তথ্য সংগহ করা, সরকারী নির্দেশে যে কোনো অপরাধের তদন্ত করা এবং যে কোনো ধরণের দায়িত্ব পালন করাস্মরণ করা যেতে পারে, কিছুদিন ধরেই র‌্যাবের বিরুদ্ধে গুম-অপহরণসহ নানা ধরণের অভিযোগ আসছিলসর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাবের কয়কজন কর্মকর্তা গ্রেপ্তগ্রহণএ নিয়ে র‌্যাবের মূল কাজের বাইরে অন্যান্য কর্মকান্ড ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখী হয়এর মধ্যেই র‌্যাবের পক্ষ থেকে সাতটি মৌলিক কাজের বাইরে অন্যান্য বাড়তি কাজে অংশ নেবে না বলে জানিয়ে দেয়া হলহঠাৎ করেই র‌্যাবের এমন সিদ্ধান্ত জনমনে আতংক সৃষ্টি করতে পারের‌্যাবের কেউ কেউ দুঃষ্কর্মে যুক্ত থাকলেও ফোর্স হিসেবে  র‌্যাব নিয়ে কেউ মেতন একটা নেতিবাচক কথা ঢালাও ভাবে বলেনির‌্যাবের কেউ যদি অপরাধের সাথে যুক্ত হয়, তার বিচার হবে নিয়ম মেনে; তবে কোন আইনে র‌্যাব সদস্যদের বিচার হবে সে বিষয়ে পরিষ্কার নীতিমালা থাকা প্রয়োজনমনে রাখতে হবে র‌্যাবে সামরিক ও আধা ও বেসামরিক সদস্য রয়েছেআগেই আমরা দাবী করেছি এ বিষয়ে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতেপ্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, বিডিআর বিদ্রোহের কারণে ঐ বাহিনীর নাম বদলে বিজিবি করা হয়েছে, এখানে যেন র‌্যাব বাদ দিয়ে ভিন্ন নামে এমন খিচুরী বাহিনী তৈরী করার ভাবনা মাথায় না আসেপঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সেনা বাহিনীর কয়েকটি ইউনিট জাতির জনক ও তার পরিবারের হত্যার সাথে যুক্ত থাকায় ঐ সকল ইউনিট বিলুপ্ত করা হয়েছিল; বিডিআর এর ক্ষেত্রেও এমনটি হলে ভাল হত।  র‌্যাবের অপরাধী সদস্যদের বিচার সুষ্ঠু ভাবে করা হলে এবং সরকার আন্তরিক হলে র‌্যাব বিলুপ্ত করার প্রসঙ্গ আসতে পারে নাতবে র‌্যাবের গঠন প্রণালী ও কার্যাবলী নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে নিসন্দেহের‌্যাব যেহেতু পুলিশের একটি অংশ, নতুন ভাবনার সময় সেই বিষয়টি মনে রাখলেই হবের‌্যাব যেন কোনভাবেই মূল প্রতিষ্ঠান পুলিশের ওপর স্থান না পায়বিশেষ বাহিনী হিসেবে র‌্যাবের কর্মযজ্ঞ হবে দ্রুত ও আধুনিক; তাই বলে পুলিশের প্যারালাল সংস্তায় যেন আত্মপ্রকাশের অবস্থানে না যায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে
নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর যে অসহায়ত্ব ভাব জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে, সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে চাই, সংসদীয় গণতন্ত্র মেনে দেশটাকে পুরো মন্ত্রি-পরিষদ শাসিত দেশে পরিণত করতে হবেসকল কাজে প্রধানমন্ত্রীর একক নেতৃত্ব বা প্রাধান্য সরকারকে নির্বাচিত স্বৈরশাসকে পরিণত করতে বাধ্যসরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ইতিহাসের জঘন্যতম একনায়ক জার্মানীর হিটলার এবং ইতালীর মুনলিনিও ছিলেন জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিতক্ষমতার একক কেন্দ্র বিন্দু পরিণত হয়ে তারা কাল-ক্রমে একনায়ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেনঅতএব এক কথায় বলতে চাই, সাধু সাবধান!