সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৩

বরেন্দ্র ও প্রাগজ্যোতিষপুরের তেতুলিয়া - পঞ্চম পর্ব

 নুরুল্লাহ মাসুম


পঞ্চম পর্ব

ঠাকুরগাঁ ভ্রমণ পরিকল্পনা যখন চূড়ান্ত হয়েছিলো, তখন বাংলাদেশ এক্স-ক্যাডেটস এসোসিয়েশন- বেকার কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচির ও কেন্দ্রীয় মুখপাত্র মাহাবুব আলম এবং সচিব (সদস্য) এ. কে. এম. আনোয়ারুল ইসলাম উত্তমকে বিষয়টা জানিয়ে বলেছিলাম, সুযোগ ও সম্ভব হলে ঠাকুরগাঁ ইউনিটের বেকা সদস্যদের সাথে দেখা করতে চাই। তারা দুজনেই আমায় আশ্বস্ত করে এবং সেমতেই বেকা ঠাকুরগাঁ ইউনিটের সেক্রাটারি স্বপন আমার সাথে যোগাযোগ করে শহরের একটা রেস্টুরেন্টের ঠিকানা দেয়। সন্ধ্যা ৭টায় সময় থাকলেও একটি অনকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জেরে ২০/২৫ মিনিট পরে সেখা উপস্থিত হয়ে ‍বিষ্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়ি। আমার ধারণা ছিলো ২/৪ জন এক্স-ক্যাডেটের সাথে বসে কথা-বার্তা বলবো। কিন্ত সেখানে দেখলাম ২৫ জন বেকা সদস্য মিলিত হয়েছেন আমাকে সম্ভাষণ জানানোর জন্য! আমার উপস্থিতির কারণে তারা সেখানে স্বল্প নোটিশে রীতিমতো একটি মিলন মেলার আয়োজন করে ফেলেছে- ফরমাল সভা বলা যায়।

দীর্ঘ সময় ধরে নানাবিধ বিষয়ে আলোচনা হলো তাদের সাথে। এর মধ্যে সীমিত সামর্থের মধ্যে তারা কিভাবে প্রতিকুল অবস্থায় করোনাকালে সেবা প্রদান করেছে, তাও জানলাম। এটাই তো বেকার সফলতা! বেশ সুন্দর একটা সন্ধ্যা কাটালাম বেকার সদস্যদের সাথে- প্রাণবন্ত আলোচনার মধ্য দিয়ে। পরে চমৎকার আপ্যায়নের ব্যবস্থাও রেখেছিলো তারা। আমার মতো একজন সাধারণ বেকা সদস্যের সম্মানে এমন একটা বড় আয়োজনের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ ঠাকুরগাঁ বেকা কমিটির সকল সদস্যকে এবং মিলন মেলায় উপস্থিত সকল সদস্যকে। সম্মিলিত কর্মকান্ডের মধ্য দিয়েই বেকা আরো সামনে এগিয়ে যাবে স্বীয় সেবামূলক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে-এটাই প্রত্যাশা।  ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই বেকা কেন্দ্রী যুগ্ম মহাসচিব মাহাবুব ও সচিব (সদস্য) আনোয়ার উত্তমকে- এমন একটা মিলনমেলা আয়োজনের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য।

রাতে দলের সকল সদস্যকে জানিয়ে দেয়া হলো পরদিন সকালের ভ্রমণ পরিকল্পনার কথা। সে মতে সকলকে রাত সাড়ে তিনটার মধ্যে প্রস্তুত থাকতে বলা হলো। ২৫ অক্টোবর সকাল চারটায় আমাদের যাত্রা শুরু হলো পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে। সাড়ে তিনটার মধ্যর সকলে যেমন তৈরি হয়েছিলেন, তেমনি আমাদের চালক সবুজও যথাসময়ে উপস্থিত হয়েছিল। ঠাকুরগাঁ শহর ছেড়ে আমাদের বাহন ছুটে চলেছে পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে। ফাঁকা রাস্তা। বাইরে হেমন্তের হিমেল হাওয়া শীতের আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে। মনে হচ্ছিল আমাদের গাড়িটা দৈত্যের মতো ছুটে চলেছে ঠাকুরগাঁ পঞ্চগড় হাইওয়ে ধরে। তখনো অন্ধকার কাটে নি। তাই বাইরের সবুজ প্রকৃতি তখনো নিকষ-কালোয় আবৃত। ধীরে ধীরে আকাশ পরিস্কার হচ্ছে, সবুজের প্রকৃতি স্বীয় বর্ণে ফিরে আসছে; কারো চোখে ঘুম নেই- সকলের চিন্তায় তখন সূর্যোদয়ের সময়ে দূরের হিমালয় পর্বতশ্রেণীর দ্বিতীয় উচ্চতম ও সবচেয়ে সুন্দর চূড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা অবলোকন করার সুযোগ নেয়া। এটাও সকলে জানে, আকাশ যদি আমাদের পক্ষে না থাকে তবে এত পরিশ্রম করে এত দূরে এসেও সে সুযোগটা হারাতে হবে। তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, প্রকৃতি আমাদের সাথে বৈরীতা করবে না, যদিও কুয়াশা থাকলেও আমাদের সুযোগ-হারা হতে পারে।

ঠাকুরগাঁ থেকে পঞ্চগড় সদর হয়ে তেতুলিয়া পৌঁছতে প্রায় দুই ঘন্টা লাগার কথা থাকলেও, প্রথমত রাস্তা একেবারে ফাঁকা থাকায় এবং আমাদের চালক দক্ষ ও অভিজ্ঞ হওয়ায় আমরা দেড় ঘন্টায় পৌঁছে যাই গন্তব্যে, অর্থাৎ তেতুলিয়া ডাক বাংলোয়- ঘড়িতে তখন সময় সকাল ৫টা ৩৭ মিনিট। 


পথিমধ্যে পঞ্চগড় থেকে তেতুলিয়া মহাসড়কটিকে বলা হয় এশিয়ান হাইওয়ে- ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটি দেশের অন্যান্য সড়ক থেকে দেখতে একটু ভিন্ন রকমের, এর নান্দনিক সৌন্দের্য্যের কারণে। বেশ পরিচ্ছন্ন সড়কটি। তেতুলিয়া ডাক বাংলো এলাকায় পৌঁছানোর পর, তখনো সূর্য ওঠার কিছু সময় বাকী। ইতোমধ্যে সেখানে বেশ কিছু মানুষ জড়ো হয়েছেন- উদ্দেশ্য আমাদের মতোই। এর বাইরেও কয়েকজনকে পেলাম, যারা প্রতিদিন এই এলাকায় মর্নিং ওয়াক করে থাকেন। মহিউদ্দীন ভাই পেয়ে গেলেন তার চাকুরীকালীন একজনকে যিনি এখনো অবসর নেন নাই। তার সাথেও আলাপ হলো।

চলবে