অষ্টাদশ পর্ব
গত
সোমবার এলিট ফোর্স অধিনায়ক জানিয়েছেন এখন থেকে র্যাব নিয়মিত টহল দেবে না,
কোন ধরণের তল্লাশী
কাজে অংশ নেবে না। এমনকি
দরপত্র বা· পাহারা,
জমিজমা ও টাকা লেনদেন
সংক্রান্ত সমস্যা এবং পারিবারিক বিরোধ নিয়েও এখন থেকে ধরণের কর্মকান্ডে অংশ নেবে
না র্যাব। ইতোমধ্যে
র্যাবের প্রত্যেক ব্যাটালিয়নকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। র্যাব নির্ধারিত সাত মৌলিক কাজের
বাইরে বা অন্য কোনো ধরণের বাড়তি কর্মকান্ডে অংশ নেবে না। র্যাবের সাত দায়িত্বের মধ্যে আছে
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত, সশস্ত্র জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের আটক করা,
অবৈধ অস্ত্র ও
গোলাবারুদ-বিস্ফোরক দ্রব্যসহ সব ধরণের অবৈধ দ্রব্য উদ্ধার করা,
অন্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করা,
গোয়েন্দা তথ্য সংগহ
করা, সরকারী
নির্দেশে যে কোনো অপরাধের তদন্ত করা এবং যে কোনো ধরণের দায়িত্ব পালন করা। স্মরণ করা যেতে পারে,
কিছুদিন ধরেই র্যাবের
বিরুদ্ধে গুম-অপহরণসহ নানা ধরণের অভিযোগ আসছিল। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত
সাত খুনের ঘটনায় র্যাবের কয়কজন কর্মকর্তা গ্রেপ্তগ্রহণ। এ নিয়ে র্যাবের মূল কাজের বাইরে
অন্যান্য কর্মকান্ড ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখী হয়। এর মধ্যেই র্যাবের পক্ষ থেকে সাতটি মৌলিক
কাজের বাইরে অন্যান্য বাড়তি কাজে অংশ নেবে না বলে জানিয়ে দেয়া হল। হঠাৎ করেই র্যাবের এমন সিদ্ধান্ত
জনমনে আতংক সৃষ্টি করতে পারে। র্যাবের কেউ কেউ দুঃষ্কর্মে যুক্ত থাকলেও ফোর্স হিসেবে র্যাব নিয়ে কেউ মেতন একটা নেতিবাচক কথা ঢালাও
ভাবে বলেনি। র্যাবের
কেউ যদি অপরাধের সাথে যুক্ত হয়, তার বিচার হবে নিয়ম মেনে; তবে কোন আইনে র্যাব সদস্যদের
বিচার হবে সে বিষয়ে পরিষ্কার নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে র্যাবে সামরিক ও
আধা ও বেসামরিক সদস্য রয়েছে। আগেই আমরা দাবী করেছি এ বিষয়ে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়,
বিডিআর বিদ্রোহের
কারণে ঐ বাহিনীর নাম বদলে বিজিবি করা হয়েছে, এখানে যেন র্যাব বাদ দিয়ে ভিন্ন নামে এমন খিচুরী বাহিনী
তৈরী করার ভাবনা মাথায় না আসে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সেনা বাহিনীর কয়েকটি ইউনিট জাতির জনক ও তার
পরিবারের হত্যার সাথে যুক্ত থাকায় ঐ সকল ইউনিট বিলুপ্ত করা হয়েছিল;
বিডিআর এর ক্ষেত্রেও
এমনটি হলে ভাল হত। র্যাবের অপরাধী সদস্যদের বিচার
সুষ্ঠু ভাবে করা হলে এবং সরকার আন্তরিক হলে র্যাব বিলুপ্ত করার প্রসঙ্গ আসতে পারে
না। তবে
র্যাবের গঠন প্রণালী ও কার্যাবলী নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে নিসন্দেহে। র্যাব যেহেতু পুলিশের একটি অংশ,
নতুন ভাবনার সময় সেই
বিষয়টি মনে রাখলেই হবে। র্যাব
যেন কোনভাবেই মূল প্রতিষ্ঠান পুলিশের ওপর স্থান না পায়। বিশেষ বাহিনী হিসেবে র্যাবের
কর্মযজ্ঞ হবে দ্রুত ও আধুনিক; তাই বলে পুলিশের প্যারালাল সংস্তায় যেন আত্মপ্রকাশের অবস্থানে
না যায়, সেদিকে
লক্ষ রাখতে হবে।
নারায়ণগঞ্জের
সাত খুনের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র
প্রতিমন্ত্রীর যে অসহায়ত্ব ভাব জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে,
সেই অভিজ্ঞতার আলোকে
বলতে চাই, সংসদীয়
গণতন্ত্র মেনে দেশটাকে পুরো মন্ত্রি-পরিষদ শাসিত দেশে পরিণত করতে হবে। সকল কাজে প্রধানমন্ত্রীর একক
নেতৃত্ব বা প্রাধান্য সরকারকে নির্বাচিত স্বৈরশাসকে পরিণত করতে বাধ্য। সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই
ইতিহাসের জঘন্যতম একনায়ক জার্মানীর হিটলার এবং ইতালীর মুনলিনিও ছিলেন জনগণের বিপুল
ভোটে নির্বাচিত। ক্ষমতার
একক কেন্দ্র বিন্দু পরিণত হয়ে তারা কাল-ক্রমে একনায়ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং
ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। অতএব
এক কথায় বলতে চাই, সাধু
সাবধান!