রবিবার, ৪ মে, ২০১৪

নতুন করে ভাবতে হবে

পঞ্চদশ পর্ব

কী লিখবো? দেশ নিয়ে না মানুষের জীবন নিয়ে? আমরা জাতি হিসেবে কি হতাশ না ব্যর্থ? না কি আমরা মানুষের গোত্রচ্যুত হয়েছি? গত বছর থেকেই আমরা চরমভাবে নিরাপত্তহীনতায় ভুগছিলাম৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বটেঅন্তত কিছুটা হলেও নিরাপদে রাস্তায় বের হওয়া যাচ্ছেবাসে অগ্নিসংযোগের বয়টা কেটেছে, কেটেছে হঠাৎ কোন বিপদের মুখোমুথী হওয়ার শংকাবিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গুম হওয়ার একটা আতংক ছিল; সেটা ভয়ংকর হয়ে ওঠে প্রদান বিরোধী দলের নেতা ইলিয়াস আলীর গুম হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়েতারও আগে চৌধুরী আলমের মত নেতাদেরও গুম হতে দেখা গেছেএমন ঘটনা কেবল রাজধানীতে নয় দেশের অন্যত্রও দেখা গেছেবেশীরভাগই গুম হওয়া ব্যক্তির আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নিএইতো সেদিন পরিবেশ আইনবিদ রেজওয়ানার  স্বামী গুম হলেন এবং সকলকে অবাক করে দিয়ে তিনি উদ্ধারও পেলেন, তবে অবস্থাদৃষ্টে কেউ তাকে উদ্দার করেনি; গুমকারীরাই তাকে ছেড়ে দিয়েছেআরো অবাক করা বিষয়, তারা তাকে বাড়ী ফেরার জন্য গাড়ী ভাড়াও দিয়েছেবলতে ইচ্ছে করছে- চোর হলেও ওরা লোক ভালগেল সপ্তাহে নারয়ণগঞ্জে একসাথে তিন জন অপহৃত হলেন দিন-দুপুরেসপ্তাহের শেষ দিকে তাদের লাশ পাওয়া গেল মীতলক্ষ্য নদীতেএখানেও পরিবর্তন লক্ষণীয়- লাশগুলো পাওয়া গেছে
একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে নিরাপদে বসবাস করা ও পথচলার অধিকার সকলের রয়েছেসরকারের দায়িত্ব সকলের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করাসেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যখন বলেন, গুম আগেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে- এতে ঘাবরাবার কিছু নেই; তখন ভাবতে মন চায় আমরা কি তাহলে ব্যর্থ রাষ্ট্রে বসবাস করছি, না কি মধ্যযুগীয় কোন রাজার রাজ্যে? বেশীরভাগ অপহরণ ও গুমের পেছনে বিশেষ একটা বাহিনীর দিকে অদৃশ্য অঙ্গুলী হেলন রয়েছেনারায়ণগঞ্জের ৭ অপহরণ ঘটনার পর শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সাদা পোশাকে অভিযান বন্ধ রয়েছে বলে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানিয়েছেনশৃংখলা রক্ষা বাহিনী সাদা পোশাকে অপরাধী ধরার জন্য অভিযান চালাতেই পারে, তবে সেক্ষেত্রে নিয়মানুসারে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে হাজির করার কথা চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেবাহিনী গুলো কি তা করছে? যদি করতো তাহলে অপহরণ বা গুমের ঘটনায় তাদের দিকে অঙ্গুলী হেলন হতো নানারাণগঞ্জে ৭ অপহরণ ও হত্যার পরে প্রধানমন্ত্রী অপরাধীদের যে কোন মূল্যে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেনপত্রিকান্তেরে দেখেছি, একই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পুলিশ ও র‍্যাবের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে কোন ফল পান নিসব কাজেই কি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ লাগবে? তবে সংসদীয় গণতন্ত্র কেন? একনায়কতন্ত্র চললেই তো ভাল, অন্তন দলীয় ঝামেলা থাকবে না প্রশাসন ও সাধারন মানুষের মাথার ওপরে!
সংশয় জাগে, কে বা কারা এমন কাজ করছে! সরকার কি তাদের খুঁজে বের করতে পারে না? কেন রয়েছে ডজনখানেক গোয়েন্দা সংস্থা, কি করেন তারা? না কি তারাও কোন না কোন ভাবে সীমাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করেন? না কি ভাবতে হবে, সরকারের ভেতরে বাইরে অন্য কোন শক্তি দেশ চালনায় ভূমিকা রাখছে- যারা দেশটাকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে সহজেই বিশ্ব দরবারে কুখ্যাতি এনে দিতে সহায়তা করছে? সরকার প্রধান এক নন, সমষ্টিগতভাবে মন্ত্রিপরিষদকেই  বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবেসংসদীয় গণতন্ত্রে সকল কাজের সমান ভাগীদার আপনারা সকলেইমনে রাখবেন, কেবল দলীয় প্রধানের সন্তুষ্টি দিয়ে সরকারে থাকা গেলেও দেশসেবা করা যায় না। (চলবে)

কোন মন্তব্য নেই: