পর্ব-২২
শেষ হলো শারদীয়ার ১৯ বছরের পথচলা। চলতি সংখ্যাই শারদীয়ার ১৯ বছরের শেষ সংখ্যা। পরবর্তী সংখ্যা হবে ২০ বছরের প্রথম সংখ্যা। কেমন ছিল আমাদের এই দীর্ঘ পথচলা? হিসাবের খাতা মিলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে অবিরত। বিগত শতকের নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি শুরু হয় শারদীয়ার যাত্রা। যাত্রাপথ যে মসৃন ছিল না, তা অকপটে স্বীকার করে নিচ্ছি। সদ্যজাত শিশুর পথচলা যেমনটি হয়, আমাদের অবস্থাও ছিল তেমনি। শারদীয়ার যাত্রার সময়টাতেই শুরু হয় অন্তর্জালের (ইন্টারনেট) দিগ্বিজয়ী অভিযাত্রা। সেই সাথে মুদ্রণ জগতের ক্রমবর্ধমান অগ্রযাত্রাও
ঘটে। সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে কম্পিউটার
হয়ে ওঠে প্রত্যেকের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শুরু হয় অনলাইন মিডিয়ার দিগ্বিজয়। বেসরকারী
টেলিভিশন চ্যানেলের অভিযাত্রার শুরুটাও সে সময়ে। ফলত জনমানুষের কাছে সাপ্তাহিক পত্রিকা হয়ে ওঠে নিরানন্দের একটি উপকরণ। একটা সময় ছিল মানুষ কেবলই দৈনিক পত্রিকা নির্ভর ছিল; সাপ্তাহিক পত্রিকা ছিল সহযোগী- অবসর সময়ের সঙ্গী। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কারণে বিশ্বের বহু দেশের মত এদেশেও বেশ
কয়েকটি দৈনিক বন্ধ হয়ে যায়। অনেকেই মুদ্রিত পত্রিকার
পরিবর্তে অন্তর্জালের পত্রিকার (ওয়েব বেজড নিউজ পোর্টাল) ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠেন। তখন আমরা দেখতে পাই এক সময়ের জনপ্রিয় বাংলা সাপ্তাহিকগুলো একে
একে বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানকালে যে সকল দৈনিক টিকে আছে দোর্দন্ড
প্রতাপের সাথে,
সবগুলোই কর্পোরেট
ব্যবসার অংশ হিসেবে। এমনি বিশ্ব পরিস্থিতিতে একান্ত পেশাজীবীদের
নিয়ে সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ অব্যাহত রাখা নিদারুন এক কষ্টের বিষয় হয়ে উঠেছে। তবু আমরা টিকে আছি-
গতানুগতিক বংশ পরিচয়
ধরে রাখার মত করে।
পত্রিকা প্রকাশের মূল চালিকাশক্তি বিজ্ঞাপন, যা আমরা কখনোই ন্যূনতম চাহিদা মোতাবেক পাই
নি। সঙ্গত কারণে শারদীয়ার অবয়ব বলিষ্ঠ হয় নি। এরপরেও শারদীয়ার পাঠক-লেখকদের অব্যাহত ভালবাসায় আমরা অতিক্রম
করেছি ১৯টি বছর। আগামী দিনগুলোতেও হয়তো এভাবেই পথ চলতে হবে। আশার কথা শারদীয়ার নিয়মিত পাঠক সংখ্যায় নগন্য হলেও দিনে দিনে
বাড়ছে; বিশেষত সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গণে শারদীয়ার
পদচারণা আগের থেকে অনেক বলিষ্ঠ নিঃসন্দেহে। সাহিত্য পরিসেবায় কাব্যলোক নিয়ে শারদীয়া এখন বেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে। আমরা এখন গর্ব করে বলতে পারি, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং ওয়েব বেজড পোর্টালের এই দারুন প্রতাপের
মাঝেও পাঠক এখনও শারদীয়ার মত একরঙা পত্রিকা ‘গ্রাহক চাঁদা’
দিয়ে পড়ছেন। আমরা সাধুবাদ জানাই শারদীয়ার পাঠকদের। তাদের অকুণ্ঠ ভালবাসার জন্যই শারদীয়া এমন বৈরী পরিবশে টিকে আছে; থাকবে।
দলচর্চা এবং দলবাজীর যুগে থেকেও শারদীয়া এখনও নিরপেক্ষতা বজায়
রাখতে পেরেছে- এটাও তো কম কথা নয়। শারদীয়া এখনও জনতার কথা বলে, সাধারণ মানুষের কথা
বলে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। সরকার বা বিরোধী দল-
কারোর লেজুরবৃত্তি
না করে সকলের ভাল কাজের প্রশংসা করে এবং তাদের যে কোন মন্দ কাজের সমালোচনা করে। এখানেই শারদীয়ার পথচলা সার্থক।
শারদীয়া আরেকটি কাজ করে যাচ্ছে নীরবে- নতুন লেখক তৈরীর কাজ। আজ আমরা গর্বভরে বলতে পারি, শারদীয়ায় সাংবাদিকতার হাতেখড়ি নিয়ে অনেক মফস্বল সংবাদদাতা নিজ নিজ এলাকায় এখন সাংবাদিক নেতা। অনেকে নিজ এলাকায় প্রেসক্লাব বা সাংবাদিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। কেউবা নিজেই এখন মাসিক বা সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশক সম্পাদক। এটাই শারদীয়ার সব থেকে বড় প্রাপ্তি। সকলের ভালবাসা সাথে নিয়ে শারদীয়া আগামী দিনের পথচলা অব্যাহত থাকবে, এমনটা আশা আমরা করতেই পারি।
২৪-০৭-২০১৫