মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
নতুন করে ভাবতে হবে : পর্ব -২৩
পর্ব-২৩
ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
সে দেশের ¯^রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সীমান্তে বাংলাদেশী
নাগরিক ফেলানীকে হত্যার অপরাধে ফেলানীর পরিবারকে পাঁচ লক্ষ রুপি প্রদানের সুপারিশ করেছে। পক্ষান্তরে ¯^রাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেলানীর মৃত্যুর জন্য তার বাবাকে
দায়ী করেছে। ঘটনার শেষ কোথায়, আমরা এখনও জানি না বা আন্দাজ
করতে পারছি না। ইতোপূর্বে দুই দুই বার ভারতীয়
সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর আদালতে ফেলানী হত্যা মামলা থেকে আসামী- স্বীয় বাহিনীর সদস্য হাবলিদার অমিয় ঘোষককে অব্যাহতি দেয়ার প্রেক্ষাপটে
বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের এক আবেদনের প্রেক্ষিতে সে দেশের
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বিএসএফ-এর নিয়ন্ত্রকারী ¯^রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এমন নির্দেশনা দিল। ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে ন্যায় বিচার
চেয়ে আবেদনরে জন্য বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে প্রশ্ন হলোÑ আমাদের দেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কি এমন সাহস দেখাবার সাহস রাখে? প্রসঙ্গত, ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা
মঞ্চ (মাসুম) নামে একটি সংগঠন এ বিষয়ে ভারতের সুপ্রীম কোর্টে একটি রিট আবেদন করে, যার শুনানীর দিন ধায় আছে অক্টোবরের
৬ তারিখ। এর আগেই ভারতীয় জাতীয় মানবাধিকার
সংস্থার এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবী রাখে। তাদের এমন সিদ্ধান্তে এটা প্রমাণিত হলো, আসামী অমিয় ঘোষ নিরাপরাধ নয়। এখন ভারতীয় সুপ্রীম কোর্টের শুনানী ও তাদের সিদ্ধান্তর জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে
হবে। পাশাপাশি ভারতের জাতীয় মানবাধিকার
সংস্থার সুপারিশকৃত পাঁচ লক্ষ রুপি ক্ষতিপূরণের বিষয়টি প্রত্যাখান করে ফেলানীর মা ন্যায়
বিচার চেয়ে অপরাধীর বিচার চেয়েছেন। আমরা ফেলানীর মায়ের
এই সৎসাহসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। একজন হতদরিদ্র মা
তার মেয়ের জীবনের বিনিময়ে পাঁচ লক্ষ রুপির ক্ষতিপূরণ প্রত্যাখান করে বীরত্বের পরিচয়
দিয়ে অপরাধীর উপযৃক্ত বিচার চাইছেনÑ এটাই হল তাঁর ব্যক্তিত্ব।
এবারে অন্য প্রসঙ্গ। গত সপ্তাহে শরত কালের অকাল ও অতি বর্ষণে রাজধানী ঢাকা প্রায় অচল হয়েছিল। রাজপথসহ নগরীর অলি-গলি জলাবদ্ধতায় নতুন রেকর্ড করে, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে নগরী
প্রত্যক্ষ করে সীমাহীন যানজট। নগর জীবনে দুর্ভোগের
নতুন মাত্রা যোগ হয়। নড়ে-চরে বসেন কর্তাব্যক্তিরা। মিডিয়ায় চলে ভ্যাপক প্রচারণা। মাথা ব্যাথা শুরু হয় সকলেরÑ তাহলে ঢাকা নগর কি পরিত্যক্ত
হতে চলেছে! ঢাকায় যানজট নতুন কিছু নয়, তবে দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় নিয়মিত খবর এটি। জলাবদ্ধতাও ঢাকায় একে-বারে নতুন নয়; তবে এবারে তা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। চারি-দিকে হৈ-হৈ রব উঠেছে। মনে হচ্ছে এবার এ
সমস্যা সমাধানে কিছু একটা হবে। হওয়া দরকার; হতে হবে। প্রশ্নÑ দেশের উত্তরা-ঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে চলমান বন্য পরিস্তিতি নিয়ে
কারো মাথা ব্যাথা নেই কেন? প্রায় দুই মাস হতে চললো দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা যুবে আছে প্রবল বর্ষার পানি ও সামুদ্রিক
জোয়ারের পানিতে। তাদের নিয়ে দু-একটা রিপোর্ট
হলেও কর্তব্যক্তি পর্যায়ে কোন উচ্চবাচ্য শোনা গেল না, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বা উর্ধতন
কাউকে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করতে দেখা গেল না। তাহলে কি ওই সব আম-জনতা দেশের কেউ নয়, নাগরিক নয়। কেবল ঢাকায় বসবাসরতরাই
দেশের নাগরিক! ওদের জন্য ভাববার কেউ নেই? অথবা ভাববর সময় নেই কারো?
এরই মধ্যে জনৈক মন্ত্রী জাতিকে সুখবর দিয়ে বললেন, দুনিয়ার সর্বত্র তেলের দাম
কমলেও দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে এগিয়ে নেয়ার জন্য দেশের সার্থে তেল ও বিদ্যুতের
দাম বাড়ানো হয়েছে। হায়রে কপাল!
একটা গল্প দিয়ে শেষ করছিÑ জমিদার নিজে অবাধ্য(!) প্রজাকে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার
করে লাঠি ভেঙ্গে ফেললেন। এরপরও রক্তাক্ত প্রজা
বলছে: হুজুর আমাকে স্নেহ করেন বলে মেরেছেন, আমি ধন্য। আমি সুস্থ হয়ে যাব, তবে দুঃখ একটাই আমার মত পামরকে
মেরে হুজুর তার এত্ত(!) দামী লাঠিটা ভেঙ্গে ফেললেন! তার মত দয়ালু জমিদার আর হয় না।
১১-০৯-২০১৫
বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
নতুন করে ভাবতে হবে: পর্ব-২২
পর্ব-২২
শেষ হলো শারদীয়ার ১৯ বছরের পথচলা। চলতি সংখ্যাই শারদীয়ার ১৯ বছরের শেষ সংখ্যা। পরবর্তী সংখ্যা হবে ২০ বছরের প্রথম সংখ্যা। কেমন ছিল আমাদের এই দীর্ঘ পথচলা? হিসাবের খাতা মিলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে অবিরত। বিগত শতকের নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি শুরু হয় শারদীয়ার যাত্রা। যাত্রাপথ যে মসৃন ছিল না, তা অকপটে স্বীকার করে নিচ্ছি। সদ্যজাত শিশুর পথচলা যেমনটি হয়, আমাদের অবস্থাও ছিল তেমনি। শারদীয়ার যাত্রার সময়টাতেই শুরু হয় অন্তর্জালের (ইন্টারনেট) দিগ্বিজয়ী অভিযাত্রা। সেই সাথে মুদ্রণ জগতের ক্রমবর্ধমান অগ্রযাত্রাও
ঘটে। সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে কম্পিউটার
হয়ে ওঠে প্রত্যেকের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শুরু হয় অনলাইন মিডিয়ার দিগ্বিজয়। বেসরকারী
টেলিভিশন চ্যানেলের অভিযাত্রার শুরুটাও সে সময়ে। ফলত জনমানুষের কাছে সাপ্তাহিক পত্রিকা হয়ে ওঠে নিরানন্দের একটি উপকরণ। একটা সময় ছিল মানুষ কেবলই দৈনিক পত্রিকা নির্ভর ছিল; সাপ্তাহিক পত্রিকা ছিল সহযোগী- অবসর সময়ের সঙ্গী। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কারণে বিশ্বের বহু দেশের মত এদেশেও বেশ
কয়েকটি দৈনিক বন্ধ হয়ে যায়। অনেকেই মুদ্রিত পত্রিকার
পরিবর্তে অন্তর্জালের পত্রিকার (ওয়েব বেজড নিউজ পোর্টাল) ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠেন। তখন আমরা দেখতে পাই এক সময়ের জনপ্রিয় বাংলা সাপ্তাহিকগুলো একে
একে বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানকালে যে সকল দৈনিক টিকে আছে দোর্দন্ড
প্রতাপের সাথে,
সবগুলোই কর্পোরেট
ব্যবসার অংশ হিসেবে। এমনি বিশ্ব পরিস্থিতিতে একান্ত পেশাজীবীদের
নিয়ে সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ অব্যাহত রাখা নিদারুন এক কষ্টের বিষয় হয়ে উঠেছে। তবু আমরা টিকে আছি-
গতানুগতিক বংশ পরিচয়
ধরে রাখার মত করে।
পত্রিকা প্রকাশের মূল চালিকাশক্তি বিজ্ঞাপন, যা আমরা কখনোই ন্যূনতম চাহিদা মোতাবেক পাই
নি। সঙ্গত কারণে শারদীয়ার অবয়ব বলিষ্ঠ হয় নি। এরপরেও শারদীয়ার পাঠক-লেখকদের অব্যাহত ভালবাসায় আমরা অতিক্রম
করেছি ১৯টি বছর। আগামী দিনগুলোতেও হয়তো এভাবেই পথ চলতে হবে। আশার কথা শারদীয়ার নিয়মিত পাঠক সংখ্যায় নগন্য হলেও দিনে দিনে
বাড়ছে; বিশেষত সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গণে শারদীয়ার
পদচারণা আগের থেকে অনেক বলিষ্ঠ নিঃসন্দেহে। সাহিত্য পরিসেবায় কাব্যলোক নিয়ে শারদীয়া এখন বেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে। আমরা এখন গর্ব করে বলতে পারি, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং ওয়েব বেজড পোর্টালের এই দারুন প্রতাপের
মাঝেও পাঠক এখনও শারদীয়ার মত একরঙা পত্রিকা ‘গ্রাহক চাঁদা’
দিয়ে পড়ছেন। আমরা সাধুবাদ জানাই শারদীয়ার পাঠকদের। তাদের অকুণ্ঠ ভালবাসার জন্যই শারদীয়া এমন বৈরী পরিবশে টিকে আছে; থাকবে।
দলচর্চা এবং দলবাজীর যুগে থেকেও শারদীয়া এখনও নিরপেক্ষতা বজায়
রাখতে পেরেছে- এটাও তো কম কথা নয়। শারদীয়া এখনও জনতার কথা বলে, সাধারণ মানুষের কথা
বলে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। সরকার বা বিরোধী দল-
কারোর লেজুরবৃত্তি
না করে সকলের ভাল কাজের প্রশংসা করে এবং তাদের যে কোন মন্দ কাজের সমালোচনা করে। এখানেই শারদীয়ার পথচলা সার্থক।
শারদীয়া আরেকটি কাজ করে যাচ্ছে নীরবে- নতুন লেখক তৈরীর কাজ। আজ আমরা গর্বভরে বলতে পারি, শারদীয়ায় সাংবাদিকতার হাতেখড়ি নিয়ে অনেক মফস্বল সংবাদদাতা নিজ নিজ এলাকায় এখন সাংবাদিক নেতা। অনেকে নিজ এলাকায় প্রেসক্লাব বা সাংবাদিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। কেউবা নিজেই এখন মাসিক বা সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশক সম্পাদক। এটাই শারদীয়ার সব থেকে বড় প্রাপ্তি। সকলের ভালবাসা সাথে নিয়ে শারদীয়া আগামী দিনের পথচলা অব্যাহত থাকবে, এমনটা আশা আমরা করতেই পারি।
২৪-০৭-২০১৫
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)