চতুর্দশ
পর্ব
বাংলা
নববর্ষের শুভ কামনা দিয়েই শুরু করেই বলতে
চাই,
বাংলা নতুন বছরের শুরুটা হয়
নতুন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে। গ্রেগরিয়ান
ক্যালেন্ডারের নতুন বর্ষ গণনা করা হয় মধ্যরাতের অব্যবহিত পরেই অর্থাৎ রাত ১২টা ১ মিনিটে। আরবী নববর্ষ বা হিজরী গণনা করা হয় আকাশে নতুন
চাঁদ দেখা দেয়ার মধ্য দিয়ে। বিশ্বায়নের
যুগে কেউ কেউ বাংলা নববর্ষ মধ্যরাতের পর থেকে শুরু করার কথা বলছেন। বাংলা একাডেমিতো আনুষ্ঠানিকভাবে মধ্যরাতে
বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করে দিয়েছে ১৪০২ সাল থেকে। স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বিশ্বব্যাপি প্রচলিত টাইম সেইভের পদ্ধতি
বাংলাদেশেও চালু করা হয়েছিল আড়ম্বরে ঘড়ির কাটা এক ঘন্টা পিছিয়ে দিয়ে, তা কি ফলপ্রসু হয়েছে? বিশ্বায়নের এ যুগে সকলের সাথে তাল মেলাতে
গিয়ে কি আমরা সাপ্তাহিক ছুটি শনিবার বা শনি ও রবিবার করতে পেরেছি? বিশ্বায়ন যতই হোক না কেন, নিজস্ব ¯স্বকীয়তা
কি একেবারে মুছে ফেলতে হবে? আমাদের
দৈনন্দিন প্রয়োজনে নিয়ত আমারা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে চলেছি। বার্ষিক
রাষ্ট্রীয় বাজেট প্রণয়ন করছি জুলাই-জুন বছর ধরে। আমরা কি জানি পার্শবর্তী দেশ ভারতের পশ্চিম
বঙ্গে এখনও বাজেট হয় এপ্রল মাসে। ইরানসহ
মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে (পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশেও) নওরোজ পালিত হয় এই
গ্রীষ্মে অর্থাৎ মার্চ মাসে।
বাংলা
নববর্ষ বিশ্বের ২৫ কোটিরও বেশী বাঙালীর প্রাণের উৎসব। যদিও ভারতে একদিন পরে ১৫ এপ্রিল এটি পালিত হয়; তবু আচার-আচরণ প্রায় একই ধরণের। নতুন বছরে ব্যবসা-য়ীদের হালখাতা খোলা, চৈত্র সংক্রান্তি থেকে গ্রাম্য মেলা
অনুষ্ঠান ইত্যাকার অনুষ্ঠানাদিসহ নববর্ষ পালনের ধারা সর্বত্রই এক। বিশেষত বাংলাদেশে একমাত্র বাংলা নববর্ষের
অনুষ্ঠানই সার্বজনীন। সকল ধর্মের ও
জাতিগোষ্ঠীর মানুষ দিনটি উদযাপন করে থাকে। দেশের
পাহাড়ী এলাকায়ও পালিত হয় নববর্ষ কিছুটা ভিন্ন নামে। বৈশুক, সাংগ্রাই
ও বিজু- মিলিতবাবে বৈশাবী উৎসব আর বাংলা নববর্ষ উদযাপন তেম কোন ভিন্ন বিষয় নয়। এবারের ঢাকা মহানগরীতে প্রচন্ড গরম উপেক্ষা
করে রাস্তায় মানুষের ঢল আবারো প্রমান করেছে পহেলা বৈশাখ প্রকৃতার্থেই বাঙালীর
প্রাণের উৎসব। ঢাকার বাইরেও
নববর্ষ উদযাপিত হচ্ছে আবহমানকাল ধরে। স্বাধীনতার
পরে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এ উৎসবের ব্যপকতা লাভ করেছে নিঃসন্দেহে। তবে জাতীয়তা-বাদের উগ্রতায় ঐক্যবদ্ধ নববর্ষ
পালন যাতে বিঘ্নিত না হয় সেদিকে নজর
দিতে হবে। রমনা বটমূলে বাংলা
বর্ষ বরণ শুরু হয়েছিল পাকিস্তান আমলে তৎকালীন সরকারের বৈরী আচরণের মধ্য দিয়ে। আজ সেই অনুষ্ঠান এমনি এক প্রতীকে পরিণত হয়েছে
যে,
নতুন বছর মানেই রমনা বটমূল। সেই অনুষ্ঠানের বিকল্প যদি কেউ অন্য কিছু
ভাবতে চায়, তা হয়ত কালের
আবর্তনে হারিয়ে যাবে। পৃষ্টপোষকতা না হোক
(দরকার আছে কি?) ভিন্নতা আনার
প্রচেষ্টা যেন না হয়। চারুকলার মঙ্গল
শোভাযাত্রা শুরু হয়েছে এইতো সেদিন-১৯৮৯ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময়ে। আজ সেই শোভাযাত্র দেখে মনে হয় এটি যেন
চিরকালের চেনা কোন উৎসব। মোদ্দাকথা হলো, যেকোন উৎসব যদি সাধারণ মানুষের মন কেড়ে নিতে
পারে,
মানুষের মনের ভেতরে জায়গা করে
নিতে পারে, সেটিই হয়ে ওঠে
সার্বজনীন। সেটিকে মানুষের মন
থেকে মুছে ফেলা যায় না। বাংলাদেশ ও পশ্চিম
বঙ্গে পহেলা বৈশাখ সরকারী ছুটির দিন। সরকার দিনটি
পালনে সহায়তাও করে থাকে। কিছু কিছু
প্রতিষ্ঠান এখনও সরকারী সিদ্ধান্ত অমান্য করে দিনটি পালন তো করেই না, ছুটিও পালন করে না। সরকারকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। সরকারের সিদ্ধান্ত অমান্য করার অধিকার কি
তাদের আছে? সরকার কি এ বিষয়ে
ব্যবস্থা নেবে না? (চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন