রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫
বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৫
মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
নতুন করে ভাবতে হবে : পর্ব -২৩
পর্ব-২৩
ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
সে দেশের ¯^রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সীমান্তে বাংলাদেশী
নাগরিক ফেলানীকে হত্যার অপরাধে ফেলানীর পরিবারকে পাঁচ লক্ষ রুপি প্রদানের সুপারিশ করেছে। পক্ষান্তরে ¯^রাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেলানীর মৃত্যুর জন্য তার বাবাকে
দায়ী করেছে। ঘটনার শেষ কোথায়, আমরা এখনও জানি না বা আন্দাজ
করতে পারছি না। ইতোপূর্বে দুই দুই বার ভারতীয়
সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর আদালতে ফেলানী হত্যা মামলা থেকে আসামী- স্বীয় বাহিনীর সদস্য হাবলিদার অমিয় ঘোষককে অব্যাহতি দেয়ার প্রেক্ষাপটে
বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের এক আবেদনের প্রেক্ষিতে সে দেশের
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বিএসএফ-এর নিয়ন্ত্রকারী ¯^রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এমন নির্দেশনা দিল। ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে ন্যায় বিচার
চেয়ে আবেদনরে জন্য বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে প্রশ্ন হলোÑ আমাদের দেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কি এমন সাহস দেখাবার সাহস রাখে? প্রসঙ্গত, ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা
মঞ্চ (মাসুম) নামে একটি সংগঠন এ বিষয়ে ভারতের সুপ্রীম কোর্টে একটি রিট আবেদন করে, যার শুনানীর দিন ধায় আছে অক্টোবরের
৬ তারিখ। এর আগেই ভারতীয় জাতীয় মানবাধিকার
সংস্থার এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবী রাখে। তাদের এমন সিদ্ধান্তে এটা প্রমাণিত হলো, আসামী অমিয় ঘোষ নিরাপরাধ নয়। এখন ভারতীয় সুপ্রীম কোর্টের শুনানী ও তাদের সিদ্ধান্তর জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে
হবে। পাশাপাশি ভারতের জাতীয় মানবাধিকার
সংস্থার সুপারিশকৃত পাঁচ লক্ষ রুপি ক্ষতিপূরণের বিষয়টি প্রত্যাখান করে ফেলানীর মা ন্যায়
বিচার চেয়ে অপরাধীর বিচার চেয়েছেন। আমরা ফেলানীর মায়ের
এই সৎসাহসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। একজন হতদরিদ্র মা
তার মেয়ের জীবনের বিনিময়ে পাঁচ লক্ষ রুপির ক্ষতিপূরণ প্রত্যাখান করে বীরত্বের পরিচয়
দিয়ে অপরাধীর উপযৃক্ত বিচার চাইছেনÑ এটাই হল তাঁর ব্যক্তিত্ব।
এবারে অন্য প্রসঙ্গ। গত সপ্তাহে শরত কালের অকাল ও অতি বর্ষণে রাজধানী ঢাকা প্রায় অচল হয়েছিল। রাজপথসহ নগরীর অলি-গলি জলাবদ্ধতায় নতুন রেকর্ড করে, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে নগরী
প্রত্যক্ষ করে সীমাহীন যানজট। নগর জীবনে দুর্ভোগের
নতুন মাত্রা যোগ হয়। নড়ে-চরে বসেন কর্তাব্যক্তিরা। মিডিয়ায় চলে ভ্যাপক প্রচারণা। মাথা ব্যাথা শুরু হয় সকলেরÑ তাহলে ঢাকা নগর কি পরিত্যক্ত
হতে চলেছে! ঢাকায় যানজট নতুন কিছু নয়, তবে দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় নিয়মিত খবর এটি। জলাবদ্ধতাও ঢাকায় একে-বারে নতুন নয়; তবে এবারে তা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। চারি-দিকে হৈ-হৈ রব উঠেছে। মনে হচ্ছে এবার এ
সমস্যা সমাধানে কিছু একটা হবে। হওয়া দরকার; হতে হবে। প্রশ্নÑ দেশের উত্তরা-ঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে চলমান বন্য পরিস্তিতি নিয়ে
কারো মাথা ব্যাথা নেই কেন? প্রায় দুই মাস হতে চললো দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা যুবে আছে প্রবল বর্ষার পানি ও সামুদ্রিক
জোয়ারের পানিতে। তাদের নিয়ে দু-একটা রিপোর্ট
হলেও কর্তব্যক্তি পর্যায়ে কোন উচ্চবাচ্য শোনা গেল না, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বা উর্ধতন
কাউকে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করতে দেখা গেল না। তাহলে কি ওই সব আম-জনতা দেশের কেউ নয়, নাগরিক নয়। কেবল ঢাকায় বসবাসরতরাই
দেশের নাগরিক! ওদের জন্য ভাববার কেউ নেই? অথবা ভাববর সময় নেই কারো?
এরই মধ্যে জনৈক মন্ত্রী জাতিকে সুখবর দিয়ে বললেন, দুনিয়ার সর্বত্র তেলের দাম
কমলেও দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে এগিয়ে নেয়ার জন্য দেশের সার্থে তেল ও বিদ্যুতের
দাম বাড়ানো হয়েছে। হায়রে কপাল!
একটা গল্প দিয়ে শেষ করছিÑ জমিদার নিজে অবাধ্য(!) প্রজাকে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার
করে লাঠি ভেঙ্গে ফেললেন। এরপরও রক্তাক্ত প্রজা
বলছে: হুজুর আমাকে স্নেহ করেন বলে মেরেছেন, আমি ধন্য। আমি সুস্থ হয়ে যাব, তবে দুঃখ একটাই আমার মত পামরকে
মেরে হুজুর তার এত্ত(!) দামী লাঠিটা ভেঙ্গে ফেললেন! তার মত দয়ালু জমিদার আর হয় না।
১১-০৯-২০১৫
বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
নতুন করে ভাবতে হবে: পর্ব-২২
পর্ব-২২
শেষ হলো শারদীয়ার ১৯ বছরের পথচলা। চলতি সংখ্যাই শারদীয়ার ১৯ বছরের শেষ সংখ্যা। পরবর্তী সংখ্যা হবে ২০ বছরের প্রথম সংখ্যা। কেমন ছিল আমাদের এই দীর্ঘ পথচলা? হিসাবের খাতা মিলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে অবিরত। বিগত শতকের নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি শুরু হয় শারদীয়ার যাত্রা। যাত্রাপথ যে মসৃন ছিল না, তা অকপটে স্বীকার করে নিচ্ছি। সদ্যজাত শিশুর পথচলা যেমনটি হয়, আমাদের অবস্থাও ছিল তেমনি। শারদীয়ার যাত্রার সময়টাতেই শুরু হয় অন্তর্জালের (ইন্টারনেট) দিগ্বিজয়ী অভিযাত্রা। সেই সাথে মুদ্রণ জগতের ক্রমবর্ধমান অগ্রযাত্রাও
ঘটে। সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে কম্পিউটার
হয়ে ওঠে প্রত্যেকের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শুরু হয় অনলাইন মিডিয়ার দিগ্বিজয়। বেসরকারী
টেলিভিশন চ্যানেলের অভিযাত্রার শুরুটাও সে সময়ে। ফলত জনমানুষের কাছে সাপ্তাহিক পত্রিকা হয়ে ওঠে নিরানন্দের একটি উপকরণ। একটা সময় ছিল মানুষ কেবলই দৈনিক পত্রিকা নির্ভর ছিল; সাপ্তাহিক পত্রিকা ছিল সহযোগী- অবসর সময়ের সঙ্গী। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কারণে বিশ্বের বহু দেশের মত এদেশেও বেশ
কয়েকটি দৈনিক বন্ধ হয়ে যায়। অনেকেই মুদ্রিত পত্রিকার
পরিবর্তে অন্তর্জালের পত্রিকার (ওয়েব বেজড নিউজ পোর্টাল) ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠেন। তখন আমরা দেখতে পাই এক সময়ের জনপ্রিয় বাংলা সাপ্তাহিকগুলো একে
একে বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানকালে যে সকল দৈনিক টিকে আছে দোর্দন্ড
প্রতাপের সাথে,
সবগুলোই কর্পোরেট
ব্যবসার অংশ হিসেবে। এমনি বিশ্ব পরিস্থিতিতে একান্ত পেশাজীবীদের
নিয়ে সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ অব্যাহত রাখা নিদারুন এক কষ্টের বিষয় হয়ে উঠেছে। তবু আমরা টিকে আছি-
গতানুগতিক বংশ পরিচয়
ধরে রাখার মত করে।
পত্রিকা প্রকাশের মূল চালিকাশক্তি বিজ্ঞাপন, যা আমরা কখনোই ন্যূনতম চাহিদা মোতাবেক পাই
নি। সঙ্গত কারণে শারদীয়ার অবয়ব বলিষ্ঠ হয় নি। এরপরেও শারদীয়ার পাঠক-লেখকদের অব্যাহত ভালবাসায় আমরা অতিক্রম
করেছি ১৯টি বছর। আগামী দিনগুলোতেও হয়তো এভাবেই পথ চলতে হবে। আশার কথা শারদীয়ার নিয়মিত পাঠক সংখ্যায় নগন্য হলেও দিনে দিনে
বাড়ছে; বিশেষত সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গণে শারদীয়ার
পদচারণা আগের থেকে অনেক বলিষ্ঠ নিঃসন্দেহে। সাহিত্য পরিসেবায় কাব্যলোক নিয়ে শারদীয়া এখন বেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে। আমরা এখন গর্ব করে বলতে পারি, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং ওয়েব বেজড পোর্টালের এই দারুন প্রতাপের
মাঝেও পাঠক এখনও শারদীয়ার মত একরঙা পত্রিকা ‘গ্রাহক চাঁদা’
দিয়ে পড়ছেন। আমরা সাধুবাদ জানাই শারদীয়ার পাঠকদের। তাদের অকুণ্ঠ ভালবাসার জন্যই শারদীয়া এমন বৈরী পরিবশে টিকে আছে; থাকবে।
দলচর্চা এবং দলবাজীর যুগে থেকেও শারদীয়া এখনও নিরপেক্ষতা বজায়
রাখতে পেরেছে- এটাও তো কম কথা নয়। শারদীয়া এখনও জনতার কথা বলে, সাধারণ মানুষের কথা
বলে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। সরকার বা বিরোধী দল-
কারোর লেজুরবৃত্তি
না করে সকলের ভাল কাজের প্রশংসা করে এবং তাদের যে কোন মন্দ কাজের সমালোচনা করে। এখানেই শারদীয়ার পথচলা সার্থক।
শারদীয়া আরেকটি কাজ করে যাচ্ছে নীরবে- নতুন লেখক তৈরীর কাজ। আজ আমরা গর্বভরে বলতে পারি, শারদীয়ায় সাংবাদিকতার হাতেখড়ি নিয়ে অনেক মফস্বল সংবাদদাতা নিজ নিজ এলাকায় এখন সাংবাদিক নেতা। অনেকে নিজ এলাকায় প্রেসক্লাব বা সাংবাদিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। কেউবা নিজেই এখন মাসিক বা সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশক সম্পাদক। এটাই শারদীয়ার সব থেকে বড় প্রাপ্তি। সকলের ভালবাসা সাথে নিয়ে শারদীয়া আগামী দিনের পথচলা অব্যাহত থাকবে, এমনটা আশা আমরা করতেই পারি।
২৪-০৭-২০১৫
শনিবার, ২৭ জুন, ২০১৫
মিয়ানমারে ভারতের রক্তক্ষয়ী ঝটিকা সামরিক অভিযান!
মিয়ানমারে
ভারতের রক্তক্ষয়ী ঝটিকা সামরিক অভিযান!
নুরুল্লাহ
মাসুম
ভারতের
সেনাবাহিনী মঙ্গলবার মিয়ানমারের ভেতরে ঢুকে যে বিশেষ অপারেশন চালিয়ে উত্তরপূর্বাঞ্চলের
বেশ কিছু জঙ্গিকে মেরে ফেলেছে এবং অন্তত দুটি শিবির ধ্বংস করেছে, তা নিয়ে সেদেশে শুরু হয়েছে বিশ্লেষণ। ক্ষমতাসীন বিজেপি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের একাংশ দাবী করছে এই বিশেষ
অপারেশনের মাধ্যমে একটা কড়া বার্তা দেয়া হয়েছে সব দেশকেই যে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসীদের
রুখতে সীমান্ত পেরতেও ভারতীয় সেনারা পিছপা হবে না। এই অংশের ইঙ্গিত পাকিস্তানের
দিকেই। বিশ্লেষকদের অন্য অংশের মতে এর আগেও বিদেশে অপারেশন চালিয়েছে
ভারতীয় বাহিনী। সর্বশেষ এই অপারেশন কখনই সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ রোখার জন্য এটা
নতুন শক্তিশালী নীতির ফল নয়।
ভারতের
সেনাবাহিনী দাবী করেছে, তাদের প্যারাকমান্ডো আর ইনফ্যান্ট্রির সদস্যরা মঙ্গলবার ভোর
রাত থেকে মিয়ানমারের ভেতরে ঢুকে একটা বিশেষ অপারেশন চালিয়ে নাগা জঙ্গি গোষ্ঠী এনএসসিএন
খাপলাং এবং তাদের সহযোগী আরও কিছু জঙ্গিগোষ্ঠীর শিবির ধ্বংস করেছে; অনেককে মেরেও ফেলেছে। ঠিক কতজন জঙ্গি নিহত হয়েছেন, সেটা এখনও পরিষ্কার
নয়।
ভারতের
প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরী বলছিলেন, ভারত সরকারের সর্বোচ্চ স্তর থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে বলেই এত বড়
অপারেশন চালাতে পেরেছে সেনা বাহিনী। তারা নিজে থেকে কখনই এই অপারেশন চালাতে পারে না। তাঁর মতে, এই অপারেশনের মাধ্যমে নিশ্চিতভাবেই বিভিন্ন দেশকে একটা বার্তা
দেয়া গেছে, প্রয়োজন পড়লে বিদেশে গিয়েও ভারতীয় সেনা বাহিনী জঙ্গি বা সন্ত্রাসীদের
বিরুদ্ধে অপারেশন চালাতে পারে। যে সব দেশের এই বার্তাটা বোঝা উচিত, আশা করা যায় তারা বুঝতে পারবে। তবে তার মানে এই নয়
যে আবারও নিশ্চিতভাবেই এরকম অপারেশন চালানো হবে ভবিষ্যতে।
এটা পরিষ্কার
যে, এই অপারেশন চালানোর সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক এবং নিশ্চিতভাবেই পাকিস্তানের
দিকেও একটা বার্তা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে রাজনৈতিক মহল থেকে। যদিও ভারতীয় সেনা বাহিনী
বলছে, মনিপুরে গত চার তারিখে যেভাবে তাদের ২০ জন সদস্যকে হত্যা করেছে
নাগা জঙ্গিরা, তারপরে এরকম প্রতিহিংসামূলক অপারেশন চালানো কিছুটা বাধ্যবাধকতার
প্রশ্ন হয়ে উঠেছিল। বিশ্লেষকদের একাংশ আবার এই অপারেশনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তটাকেই
বড় করে দেখছেন।
ভারতের
নিরাপত্তা বিষয়ক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইন্সটিটিউট অফ কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্টের কার্যনির্বাহী
পরিচালক অজয় সাহনী বলেছেন,
এই অপারেশনের পরে সামরিক কৌশল নিয়ে আলোচনার
থেকে বেশী দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক আষ্ফালন। কেন্দ্রীয় সরকার বা বিজেপি-র সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এই অপারেশনকে
ভারতের একটা নতুন সামরিক নীতি হিসেবে দেখাতে চাইছেন। বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে, সরকারের একটা শক্তিশালী নীতি, পেশীশক্তির প্রদর্শন
হচ্ছে।
কিন্তু
এধরণের অপারেশন আগেও চোরাগোপ্তা হয়েছে। মঙ্গলবারের অপারেশনটার প্রয়োজনীয়তা ছিল একটা স্থানীয় হামলার
ঘটনার প্রেক্ষিতে। এই অপারেশন থেকে কোন বড়সড় কৌশলগত পরিবর্তন না হওয়ারই সম্ভাবনা। সাহনী আরও বলেছেন,
একটা অপারেশনে সেনা বাহিনী বিজয়ী হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মিয়ানমারে অবস্থিত জঙ্গি শিবিরগুলো ধ্বংসের জন্য লাগাতার প্রচেষ্টা না থাকলে এই অপারেশনের
কোন গুরুত্বই থাকবে না।
প্রায়
একই কথা বলেছেন উত্তরপূর্ব ভারতের নিরাপত্তা ও জঙ্গিতৎপরতার বিশ্লেষক রাজীব ভট্টাচার্যি। তিনি বলেন, জঙ্গি শিবিরগুলি আদৌ ধ্বংস করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তিরিশ বছরেরও বেশী
সময় ধরে এই শিবিরগুলি গড়ে উঠেছে। সেগুলোর সংখ্যা নিয়মিত বেড়েই চলেছে।
ভারতের
সেনা বাহিনী নিশ্চয়ই এই শিবিরগুলো ধ্বংস করতে চাইবে। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই সুযোগ মিয়ানমার তাদের বারবার দেবে কি না। কারণ মিয়ানমার সরকার
বা তাদের সেনা বাহিনী একটা নতুন ফ্রন্ট খুলে উত্তরপূর্বের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে
নামতে চাইবে না।
এমাসের
চার তারিখ মনিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে ৬ ডোগরা রেজিমেন্টের
সদস্যদের ওপরে হামলা হয়। রোজকার মতোই রোড ওপেনিং পেট্রল বা রাস্তার নিরাপত্তা খতিয়ে দেখার
জন্য সেনা বাহিনীর চারটি গাড়ি পারালং আর চারোং গ্রামের কাছে পৌঁছলে প্রথমে ভূমি মাইন
ফাটানো হয়। তারপরেই রকেট ছোঁড়া হয়; চলতে থাকে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে
গুলির বৃষ্টি। স্থানটি ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে। এই হামলার প্রেক্ষিতেই মঙ্গলবারের সেনা
অপারেশন।
এই অপারেশনের
পরিকল্পনা তৈরি করার জন্যই ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল নরেন্দ্র মোদীর
সঙ্গে বাংলাদেশ সফরে যান নি। বাহিনীর ওপরে জঙ্গি হামলার পরেই মনিপুরের রাজধানী ইম্ফলে সেনাপ্রধান
দলবীর সিং সুহাগ মঙ্গলবারের অপারেশনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন বলে জানা গেছে। সূত্র: বিবিস বাংলা
লক্ষ্যণীয়
এই প্রথম বারের মত কোন প্রতিবেশি রাষ্ট্রে ঢুকে গোপন অভিযান চালিয়ে অন্তত ২০ জন জঙ্গিকে
খতম করেছে ভারতীয় সেনা স্পেশাল ফোর্সের সৈন্যরা। এমআই-১৭ভি-৫ কপ্টারে
চেপে অত্যন্ত গোপনে তাঁরা মায়ানমার সীমান্তের মধ্যে কয়েক কিলোমিটার ঢুকে জঙ্গিদের দুটি
ঘাঁটিতে অতর্কিত হামলা চালায়। ভারত দাবি করেছে এই অভিযানে মায়ানমার তাদের সহযোগীতা করেছে কিন্তু
এই অভিযান সম্পর্কে মায়ানমারের কোন সেনা কর্মকর্তার বিবৃতি এখনো পাওয়া যাইনি। এই অভিযানের পর ভারত
সাফ জানিয়ে দিয়েছে পাশ্ববর্তী দেশে যদি জঙ্গিরা অবস্থান নেয় তাহলে তারা বসে থাকবে না।
ভারতের
এই হামলা পর মায়ানমারের সার্বভৌমত্ত লংঘন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভারতের এই আধিপত্য
বিস্তারের মনোভাব পাশ্ববর্তী সামরিকভাবে দুর্বল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্তের জন্য হুমকি
হিসাবে দেখা দিয়েছে। আমাদের সরকার তো নিজেদের জঙ্গি প্রমাণে উঠে পড়ে লেগেছে।
নরেন্দ্র
মোদির সফরের আগে কুমিল্লায় পেট্রল বোমা হামলায় নিরীহ মনুষ দগ্ধ হলেও লাভ কার হয়েছে
তা মানুষ সহজেই বুঝতে পারেছে। আমাদের এখানে জঙ্গি রয়েছে এ প্রচার করতে সব চেয়ে বেশি আগ্রহী
আমাদের সরকার। ভারত ব্যাপক জঙ্গি হামলার শিকার হলেও তাদের দেশে যে জঙ্গিদের
বিশাল ঘাটি রয়েছে তা স্বীকার করতে নারাজ। তাই নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশ যদি ভারতীয় সেনাবাহিনীর হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় তাহলে
অবাক হওয়ার কিছু থাকবে কি?
১২ জুন ২০১৫
শনিবার, ২৩ মে, ২০১৫
সাগরবক্ষে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়
সাগরবক্ষে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়
নুরুল্লাহ মাসুম
বিদেশে কর্মী পাঠাতে হলে গমনেচ্ছুদের প্রথমে প্রশিক্ষণ দিয়ে
দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে; তারপরই কেবল তাদের
বিদেশে পাঠাতে হবে। এ দায়িত্ব দেশের সরকারের। কেবল অর্থ উপার্জনের পথ হিসেবে যাকে-তাকে যেন-তেন প্রকারে বিমানে
তুলে দিলেই সরকারের দায়িত্ব পালন হয় না। অর্থলিপ্সু কতিপয় দালাল যখন এমনতরো কাজ করে, তাদের দমন করা সরকারেরই দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে দেশের বিরাট অংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গঠনে অভিবাসীদের অবদান
সবচেয়ে বেশী এবং তাদের রেমিটেন্সের ওপর ভরসা করেই মধ্যআয়ের দেশ হবার স্বপ্ন দেখছে সরকার।
অথচ দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে বাংলাদেশী দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিকদের
জন্য বাজার বন্ধ রয়েছে। ফলে একটু ভাল থাকার আশায়, বেশী আয়ের লক্ষ্য দিয়ে দেশের নিরিহ মানুষগুলো
আদম পাচারকারীদের ফাঁদে পা দিচ্ছে। কেউবা মাথা গোঁজার
ঠাঁইটুকু বিক্রি করে অধিক আয়ের লক্ষ্যে পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে- অজানা গন্তব্যে। এদের অনেকেই হয়তো আর ফিরে আসে না মাতৃভূমিতে। পথিমধ্যেই দালালদের চাপে অনেকেই সর্বস্ব
খুইয়ে পথে বসছে।
বিষয়টি নতুন নয়, বহুদিন ধরে চলে আসছে। তবে স¤প্রতি বিষয়টি এতটা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে
যে, বিশ্ব বিষয়টি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। হাজার হাজার বাঙালী ও রোহিঙ্গা অভিবাসী মালাক্কা প্রণালী ও আন্দামান
সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে দুই মাস ধরে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া কোনো দেশই তাদের আশ্রয় দিচ্ছে না। আন্তর্জাতিক অনুরোধও তারা গ্রাহ্য করছে না; এমনকি জাতিসংঘের অনুরোধও তারা রাখছে না। এসব অসহায় মানুষদের আশ্রয় দেয়ার জন্য মালয়েশিয়ার বিরোধী দলও
সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছে- কে শোনে কার কথা। ১৪ মে মালয়েশিয়া ৮ শতাধিক বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা
অভিবাসী বোঝাই দুটি নৌকি ফিরিয়ে দিয়েছে। খাদ্যের অভাব,
পানির অভাব সাগরে ভাসমান অনেকেই নিজের মূত্রপান করতে
বাধ্য হচ্ছে। কোথায় মানবতা, কোথায় মানুষের অধিকার, কোথায় ধর্ম, কোথায় গণতন্ত্র আর কোথায় মানুষের জন্য রাজনীতি? যদিও মালয়েশিয়ার নৌবাহিনী হেলিকপ্টার থেকে
সামান্য খাবার ফেলছে সমুদ্রের পানিতে, তা একদিকে যেমন পর্যাপ্ত নয় অন্য দিকে সাগরে পরে যাওয়া খাবার
সাঁতরে আনতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে অনেকে।
এসব অসহায় অভিবাসী বহনকারী নৌযানগুলো সাগরে ফিরিয়ে দেয়া বন্ধে
থাইল্যান্ড,
মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার
প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার
সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তিনটি দেশই লোক দেখানো
খাবার সরবরাহ ও নৌকাগুলোর ইঞ্জিন মেরামত করে দিয়ে ফের সমুদ্রে ঠেলে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী কোনো বাণিজ্যিক জাহাজ ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর
সরকার এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে বাধ্য।
মালয়েশিয়া বলছে, লংকাবি দ্বীপে প্রায় দেড় হাজার অবৈধ অভিবাসী উদ্ধারের পর পেনাংয়ের
উত্তরাঞ্চলনীয় উপক‚লে পাঁচশত অভিবাসী
বহনকারী একটি বোট পাওয়া যায়। আমরা কি করতে পারি? যাঁরা আমাদের সীমান্ত ভেঙে ঢুকতে চাইছে তাদের
সঙ্গে আমরা এখনো ভালো আচরণ করছি, এখনো তাদের সঙ্গে মানবতাবোধ
দেখিয়ে আসছি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এভাবে অবৈধ অভিবাসীর ঢল সামলাতে হবে। কথাটা সত্য; তবে এখন প্রয়োজন এই অসহায় মানুষগুলোকে নিষ্ঠুর মৃত্যুর হাত থেকে
বাঁচানো- তাদের উদ্ধার করা। এখানে রাজনীতি করা উচিত নয়। আগামীতে এ ধরনের অবৈধ
অভিবাসন যাতে না ঘটে সে চেষ্টা করা, আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করা, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার
করা।
মানব পাচারকারীরা গ্রেপ্তার এড়াতে বহু আগেই নৌকা ছেড়ে চলে গেছে; ফলে নাবিকবিহীন অবস্থায় ঘুরপাক খাচ্ছে অনেক
নৌকা। কোনো কোন নৌকা দুই মাস বা তারওবেশী সময় ধরে
ধরে সাগরে ভাসছে। রাজনীতিকরা, কোথায় বিশ্ব মানবতা? আমরা অস্ত্র কেনার জন্য, অস্ত্র উৎপাদন করার জন্য কত লাখ লাখ ডলার
ব্যয় করি অথচ অসহায় মানুষগুলোর জন্য কিছুই কি করতে পারি না?
সাগরে ভাসমান এ অমানবিক ঘটনার গোড়ার দিকে তাকালে দেখা যাবে, অধূনা মায়ানমার, যেটি আগে বার্মা বা বর্মা নামে পরিচিত ছিল, সেখানে সংখ্যালঘু মুসলমানদের, যারা রোহিঙ্গা নামে পরিচিত এবং ভেশীরভাগই
সাবেক আরাকান অঞ্চলের বাসিন্দা। ধর্মে তার মুসলমান
এবং তাদের ভাষার সাথে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভাষার কিছুটা মিল রয়েছে। মায়ানমার বরাবর বলে আসছে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক, তাই রোহিঙ্গাদের মায়ানমারের নাগরিকত্ব নেই। বিগত শতকের আশির দশকেই তখনকার বার্মা থেকে রোহিঙ্গারা বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়; সেই থেকে বাংলাদেশে বসবাস করছে রোহিঙ্গারা- আন্তর্জাতিক শরনার্থীর
মর্যাদায়। হিসেবের বাইরে কত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে
তা বলা মুষ্কিল। বৈধ বা অবৈধভাবে বসবাসরত এ সকল রোহিঙ্গা বাংলাদেশের
জন্য এক বড় বোঝা এবং তাদের উপস্থিতি এদেশের সংষ্কৃতিতে বেশ বিরূপ প্রভাব ফেলছে। মাদক পাচার থেকে শুরু করে নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে
আছে রোহিঙ্গারা,
এমন অভিযোগ রয়েছে। শরনার্থ হিসেবে যে সব রোহিঙ্গা এদেশে রয়েছে, তাদের জন্মহার কম নয়- তাই রোহিঙ্গা জনসংখ্যা বাড়ছে ক্রমাগত।
ধারণা করে যেতে পারে, এসব রোহিঙ্গাদের সাথে নিয়ে দেশী ও বিদেশী অপরাধী চক্র কিছুটা
উন্নত জীবনের আশা জাগিয়ে স্বল্প টাকায় নিরিহ মানুষদের বিদেশে যেতে উদ্বুদ্ধ
করছে। নিঃসন্দেহে এমন কর্মে যারা যুক্ত তাদের রয়েছে
শক্তিশালী রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোশক। সেই সাথে প্রশাসনের
কিছু অসাধু লোকজন জড়িত না থাকলে ক্রমাগত মানব পাচার চলতে পারে না। কেননা, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল
থেকে নদীপথে এসব পাচার হচ্ছে, যেখানে রয়েছে আধা-সামরিক
বাহিনী বর্ডারগার্ড ও কোষ্টগার্ডের মত নিয়মিত বাহিনীর নিয়মিত টহল। রয়েছে পুলিশ প্রশাসন। যে কোন সাধারণ জ্ঞানের অধিকারীই বুঝতে পারবেন, শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ছাড়া এত বড়মাপের অপরাধ সংগঠিত হওয়া সম্ভব
নয়।
সবশেষ খবরে প্রকাশ, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সাময়িকভাবে সাগরে ভাসমান অভিবাসীদের
আশ্রয় দেবে এটা অবশ্যই স্বস্তির সংবাদ। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের প্রতি নমনীয় হওয়ার ইঙ্গি
দিয়েছে মায়ানমার,
এমন সংবাদও শোন যাচ্ছে। রেহিঙ্গারা আরাকান অঞ্চলের বাসিন্দা, যুগ যুগ ধরে সেতায় তারা বসবাস করছে- প্রজন্মের পর প্রজন্ম
ধরে; তারা কি করে ভিনদেশী হয়? প্রশ্নটা আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে আসতে হবে, মায়ানমারকে বাধ্য করতে হবে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব
ফিরিয়ে দেবার জন্য। অপ্রাসঙ্গি হলেও বলতে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের আদিবাসীদের বলা হয় রেড ইন্ডিয়ান; ওরা ছাড়া সকলেই তাহলে কি ভিনদেশী হবে, যারা বৃটেন বা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল থেকে
সেথায় বসবাস করছে? অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
বিশ্বজুড়ে চলা অভিবাসী সমস্যার দিকে নজর দিলে দেখা যায়, ইওরোপও এ সমস্যা থেকে মুক্ত নয়। মুক্ত নয় যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডা। তবে চলমান এশিয়ার এই অভিবাসী সমস্যার পেছনে মূলত মায়ানমারের একগুঁয়েমির কারণে সৃষ্ট
রোহিঙ্গা সমস্যাই দায়ী তাতে কোন সন্দেহ নেই। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী বলে চালিয়ে দিতে যারা দায়ী তাদের সাথে মায়ানমারের সরকারেরও
দায় রয়েছে বলে আমরা মনে করি। অপরাধী যে দেশেরই হোক
না কেন,
তার অপরাধীই। মায়ানমারের এই বিশাল ক্ষমতাশালী সরকারী অপরাধীদের সাথে যুক্ত
হয়েছে বাংলাদেশের কিছু অপশক্তি- আমরা জানি না, তারা কারা। এদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের। আমরা আশা করবো, মানবসৃষ্ট ভয়াবহ এই
মানবিক বিপর্যয়ের সাথে যারা সম্পৃক্ত, তারা যত ক্ষমতাশালীই হোক না কেন, আমাদের দেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো তাদের খুঁজে
বের করতে সক্ষম হবে এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসবে। তবে শংকা থেকেই যাযÑ অপরাধী সনাক্তের পরে
রাজনৈতিক পরিচয় তাদের অব্যাহতির কারণ না হয়। আমরা বিশ্বাস করতে চাই বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সরকারী বিভাগের সদস্যরা বেশ দক্ষ এবং অপরাধীরা যতই শক্তিশালী
হোক না কেন,
তারা পার পাবে না।
বুধবার, ১৩ মে, ২০১৫
নতুন করে ভাবতে হবে : পর্ব - একুশ
একুশতম পর্ব
দেশটাকে
অকার্যকর প্রমানের জন্য সম্ভবত একটি গোষ্ঠী সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে আছে। আমার ধারণা স্বাধীনতার পর সব ক’টি
সরকারেরই এমন ঘাপটিওয়ালারা ছিল। বঙ্গবন্ধু সরকারে যেমন ছিল মোশতাক গং তেমনি জিয়া,
এরশাদ,
খালেদা জিয়া ও হাসিনা
সরকারেও এরা ছিল এবং আছে বেশ সক্রিয়। বঙ্গবন্ধু ও জিয়া হত্যাকান্ডের দায় কতিপয় বিপথগামী সামরিক অসিফারের
ঘাড়ে চাপানো হলেও সকলেই মানবেন এর পেছনে রাজনৈতিক অপদেবতারা কাজ করেছিল সক্রিয় ও
অতি গোপনীয়তার সাথে। অতীতের
কথা বলে লেখার পরিধি না বাড়িয়ে সা¤প্রতিক ঘটনাবলীর দিকে নজর দেই। হাসিনা সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে
ঝালকাঠীর কলেজ ছাত্র লিমনের ঘটনায় দায়ী র্যাব সদস্যদের শাস্তি দিলে বাহিনী হিসেবে
র্যাবে সুনাম বাড়তো বই কমতো না, এ কথা তখনই বলেছি। অতি সা¤প্রতিক বাংলা নববর্ষে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় নারী নির্যাতনের যে ঘটনা ঘটে গেল,
আমার বিশ্বাস সরকার (বিশেষত
সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনী) চাইলে দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে পারতো। তা না করে কেউ কেউ দোষীদের রক্ষার
কাজটিই করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। কেউবা বলেছেন- সে
দিন এমন কোন ঘটনা ঘটে নি। বিষয়টা
শেষ পর্যন্ত হাস্যকর হয়ে গেছে। এতে করে দায়ী ব্যক্তিদের সাহস আরো বেড়েছে এবং হয়তো এদরে এক সময়ে
সামলানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। ঘটনার
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবী অনুসারে নির্দিষ্ট সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আজো প্রকাশ করা হয়
নি, বরং
অন্যান্য ক্যামেরার ফুটেজ থেকে পুরো দায় কথিত জঙ্গীবাদী বা মৌলবাদীদের কাজ বলে
প্রচালনা চালানো হয়েছে। আমি
মনে করি এতে ক্ষতি হয়েছে সরকারেরই। সেদিনে সেই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে একটি ছাত্র সংগঠন- বাংলাদেশ ছাত্র
ইউনিয়ন ডিএমপি কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিতে গেলে পুলিশ যেভাবে অ্যাকশনে নেমেছে,
তাতে মনে হয়েছে তারা
কোন জঙ্গী সংগঠনের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। অথচ দেশের সকলেই জানে ছাত্র ইউনিয়ন দেশের সবগুলো ছাত্র সংগঠনের মধ্যে
সবচেয়ে সুশৃংখল এবং ভদ্র। এক
সময়ে এ সংগঠনকে বলা হতো ‘লিপস্টিক পার্টি’। ছাত্র
ইউনিয়নকে ডিএমপি কমিশনার বরাবরে স্মারকলিপি দিতে দেয়া হলে কী ক্ষতি হতো পুলিশের?
নিরস্ত্র ছাত্ররা
পুলিশের সামনে এমন কি করতো যা পুলিশ বা দেশের জন্য ক্ষতিকর হতো?
বরং যে ঘটনা ঘটানো
হলো, তাতে
গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা হলো এবং নারী নির্যাতনের প্রতিকার চাইতে গিয়ে
প্রকাশ্যে পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হতে হলো নারীকেই; পুরুষরাও হয়েছে- সেটা অহরহ ঘটে বলে
কেউ তেমন আমলে নেয় না। প্রিন্ট
ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে প্রকাশ্যে পুলিশের
হাতে ভার্সিটির ছাত্রী নির্যাতন বা লাঞ্ছনার ছবি কী বার্তা দিচ্ছে আমাদের?
মডারেট গণতান্ত্রিক
বাংলাদশে সম্পর্কে কী বার্তা গেল বহির্বিশ্বে? তবে কি পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের
সাথে বাংলাদেশের কোন তফাত নেই? যদিও এ ঘটনায় দায়ী এক পুলিশ বরখাস্ত হয়েছে;
প্রশ্ন বরখাস্তকৃত ওই
কনস্টবল বা ল্যান্স নায়েক কি একাই এ ঘটনার জন্য দায়ী?
তার কমান্ডে থাকা
উর্ধতন কর্মকর্তার কি কোন দায় নেই? খুশী হতে পারতাম যদি ওই স্কোয়াডে থাকা কমান্ডারের (পদ/পদবী জানা নেই বলে এমনটি বলছি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতো। বাংলাদেশের পুলিশ কি কখনো
গণতান্ত্রিক দেশের পুলিশ হবে না? বাংলা নববর্ষের নারী লাঞ্ছনার ঘটনা মানুষ ক্রমে ভুলে যাবে,
ভুলে যাবে পুলিশের
নারী নির্যাতনের ঘটনা।
আমি
মনে করি, সরকারের
ভেতরে হয়তো বা কোন মহল সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য আগ-বাড়িয়ে এমন সব ঘটনার
প্রেক্ষাপট তৈরী করছে, যা
হবে সরকারের জন্য বুমেরাং। তাই বলতে চাই সময় থাকতে সাধু সাবধান- ‘সময় গেলে
সাধন হবে না’।
১৩-০৫-২০১৫
নতুন করে ভাবতে হবে- পর্ব কুড়ি
কুড়িতম পর্ব
বর্ষবরণে
ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় এলাকায় ঘটে যাওয়া ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ফলাফল আসবে
না, তবে
সচেতনতা বাড়েব। দেশের
প্রধানমন্ত্রী নারী হওয়া সত্তে¡ও এর আগে আমরা দেখেছি জাহাঙ্গীরনগরে সেঞ্চুরিয়ানদের। ১৯৭৩ সালের ঘটনা এ প্রজন্মের জানার
কথা নয়। নব্বই
দশকের ডাকসু নির্বাচন শেষে বিজয় মিছিলের ঘটনা অনেকেরই মনে আছে বা থাকার কথা। সকলের কাছে ‘বাধন’ ঘটনা
এখনো উজ্জ্বল। ক·বাজার সৈকতে বিদেশী পর্যটকের
স্ত্রীর ওপর হামলার ঘটনা কারো কারো হয়ত মনে আছে। লক্ষ্য করুন,
সব জায়গায় ক্ষমতাসীন দলের লোকজন এহেন অপকর্ম
ঘটায়...। এবারেও
কি ব্যতিক্রম? না,
তা বলার সুযাগ নেই। ১৯৭৩ সালের ঘটনাটা বাদ দিলে দেখবো
সবগুলো ঘটনার সময় দেশের প্রধান ব্যক্তি নারী। এসকল অঘটনপটয়সীদের পরিচয় ও শক্তি
একটাই... ক্ষমতা....। এদের রাজনৈতিক অভিভাবকরা কখনও কি
এদের নিবৃত করেছে বা করতে চেয়েছে? সেঞ্চুরিয়ানদের কি বিচার হয়েছিল?
যদি হত,
তাহলে পরের ঘটনাগুলা
ঘটত না। একুশে
বই মেলার ঘটনারও কোন বিচার হয় নি বা হতে দেয়া হয় নি। কারণ হিসেবে ভাবা যায়,
লাঠিয়ালদের ‘লালন-পালনে’ তাদের
রেহাই দেয়া হয় বা দিতে হয়। আগের দিনের জমিদার বা সামন্ত প্রভুরা যেমন করে লাঠিয়াল পালন করত। সমস্যা হলো,
কেউ যদি “এদের” কথা
সহস করে বলতে যায়, নন্দীর
মত তার হাত ভাঙ্গবে, না
ভাঙ্গলেও ভেঙ্গে দেয়া হবে। কোটি টাকা খরচ করে সিসি ক্যামেরা বসাবেন, কাজের সময় সকলে “ছি ছি” করবে,
কাজের কোন কাজ হবে না,
এটাইতো বাস্তবতা। প্রক্টর পিসিতে গেম খেলবেন এমন
একটা বড় আয়োজনের সময়, ভাগ্যিস
তিনি নিরোর মত বাঁশি বাজাচ্ছিলেন না। অবশ্য বাঁশি বাজালেও শোনা যেত না ভুভুজোলার কারণে।
কথা
বাড়িয়ে লাভ নেই, দাবী
করছি:
- প্রক্টরের
দায়িত্বে অবহেলার কারণে পদত্যাগ, না করলে বরখাস্ত।
- কর্তব্যরত
পুলিশদের কর্তব্যে অবহেরার কারণে শাস্তি প্রদান।
- সিসি
ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অপরধী সনাক্ত করে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা।
সবশেষে:
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি
কি কেবল সোনার ছেলেদের ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে আবারো ছাত্রলীগের অভিভাবক হিসেবে
পদত্যাগ করবেন, না
ওদের নিবৃত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন? ওদের লাগাম টেনে ধরুন না একটিবার,
যাতে আরকেবার ওরা
সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটাতে না পারে! আজ ক্ষমতায় বিএনপি থাকলেও আমি একথাই
বলতাম তাদের নেতাকে।
দেশটা
সকলের, কারো
একার নয়, কোন
দলেরও নয়। একথাটা
মনে রাখলে “গণতন্ত্র” থাকবে,
থাকবে সুন্দর
বাংলাদেশ।
১৭-০৪-২০১৫
বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৫
বসন্ত বাতাসে আগুন
বসন্ত বাতাসে আগুন
নুরুল্লাহ মাসুম
মাতাল সমীরণে ধেয়ে আসা উড়ন্ত পল্লব
সারিবদ্ধ- ধরণীর দিকে ধাবমান
দারুণ শৃংখলায় যুথবদ্ধ হয়
দৃশ্যমান পল্লব-মাল্য যেন-
বসন্তের উদাসী হাওয়ায় উতলা ক্ষণ
চারিধারে মন্থন ধ্বণি-
বিরহী মন
হতাশার আবরণে সুখের সন্ধান...
আহা কি সুন্দর!
সম্মিলনে পল্লব-মাল্য দৃষ্টি মেলে
মেদিনী তরে-
সহসা উত্তপ্ত প্রকৃতি
দারুণ খরায় জ্বলছে অবিরাম
বিষ্ময়ে হতবাক-
স্থবির ক্ষণিকের তরে!
ফিরে চলে পল্লব-মাল্য উর্ধপানে
প্রকৃতির দাহ্য বায়ুতে উচাটন মন
ট্রপোস্ফিয়ার ভেদ করে উর্ধমুখী...
রকেট গতিতে-
আনন্দ হারায় হেথা।
থার্মোস্ফিয়ারের ওপারে পাবে কি নাগাল
শান্তির ছোঁয়া-
ভালোবাসার ঘ্রাণ
জানে না পল্লব-মাল্য কি হবে-
শান্তির বার্তা কোথায় রবে?
ইস্টার্ন প্লাজা, ঢাকা
২২ ১৪৪০ মার্চ ২০১৫ খৃষ্টাব্দ
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)